দুই সপ্তাহ আগে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মানবিক পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং খাদ্য ও পুষ্টির ঘাটতি এখন মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির মতে, ইসরায়েলের বাধা ও সীমিত প্রবেশাধিকার থাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ গাজায় পৌঁছাচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, অবরুদ্ধ গাজায় এখনো পর্যাপ্ত খাদ্যসামগ্রী প্রবেশ করতে পারছে না। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার টন খাদ্য পাঠানোর লক্ষ্য থাকলেও বাস্তবে পৌঁছাচ্ছে সর্বোচ্চ সাতশ’ থেকে আটশ’ টন। বর্তমানে ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত সীমান্তে মাত্র দুটি প্রবেশপথ খোলা রয়েছে।

ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন,

“যা ত্রাণ হিসেবে প্রবেশ করছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অল্প। যথেষ্ট খাদ্য না থাকায় ক্ষুধার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।”

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার প্রায় এক–চতুর্থাংশ মানুষ এখন অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। এর মধ্যে অন্তত এগারো হাজার পাঁচশ গর্ভবতী নারী রয়েছেন। সংস্থাটি আশঙ্কা করছে, দীর্ঘস্থায়ী এই খাদ্যসংকট একটি পুরো প্রজন্মের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গভীর প্রভাব ফেলবে।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) উপ–নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ড্রু স্যাবারটন জানিয়েছেন, বর্তমানে গাজায় জন্ম নেওয়া প্রায় ৭০ শতাংশ শিশু সময়ের আগেই বা স্বল্প ওজন নিয়ে জন্মাচ্ছে, যেখানে এক বছর আগেও এই হার ছিল মাত্র ২০ শতাংশ। তার ভাষায়, “মাতৃ অপুষ্টি এখন নবজাতকের জন্যও গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করছে।”

খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি এ বছরের আগস্টে গাজার কিছু অংশে আনুষ্ঠানিকভাবে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি ঘোষণা করে। তখন উপত্যকার পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষকে ‘বিপর্যয়কর ঝুঁকিতে’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।

যুদ্ধবিরতির পরও মানবিক সহায়তা কার্যকর না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। ফিলিস্তিনি এনজিও পিএআরসি-এর কর্মকর্তা বাহা জাকউত বলেন,

“যুদ্ধবিরতি শুরুর পরও গাজার মানুষ ভোগান্তির শেষ দেখছে না। ত্রাণের নামে অল্প কিছু পণ্য ঢুকলেও তা মৌলিক চাহিদা পূরণে অপ্রতুল।”

তিনি জানান, “বাণিজ্যিক পণ্যের মধ্যে বিস্কুট ও কোমল পানীয় ঢুকতে দেওয়া হলেও পুষ্টিকর খাবার, বীজ ও জলপাই নিষিদ্ধ। ফল ও সবজির দাম এখন আকাশছোঁয়া—এক কেজি টমেটোর দাম পনেরো শেকেল পর্যন্ত উঠেছে।”

অক্সফাম, নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলসহ ৪১টি আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইসরায়েল নির্বিচারে গাজার দিকে ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো আটকে দিচ্ছে, যার ফলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হচ্ছে।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ছিয়াশি হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং এক লাখ সত্তর হাজারের বেশি আহত হয়েছেন।