ভারতের অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাজ্য মহারাষ্ট্রে হিন্দি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করাকে ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক, যা ইতোমধ্যেই সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। রাজনৈতিক উত্তেজনার পাশাপাশি সামাজিক বিভাজনেরও আশঙ্কা বাড়ছে।
শুক্রবার (১১ জুলাই) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
গত এপ্রিল মাসে মহারাষ্ট্র সরকার রাজ্যের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মারাঠি ও ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি ভাষাও বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রণীত জাতীয় শিক্ষানীতি (NEP)-এর নির্দেশনার আলোকে, যেখানে তিনটি ভাষা শেখানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে এই সিদ্ধান্তকে ‘হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় নাগরিক সমাজ, ভাষা আন্দোলন কর্মী এবং বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল। সমালোচকদের মতে, এটি মারাঠি সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক পরিচয়ের প্রতি একটি হুমকি।
ভারতে ভাষা বরাবরই স্পর্শকাতর ইস্যু। স্বাধীনতার পর রাজ্যগুলো ভাষাভিত্তিকভাবে গঠিত হওয়ায় আঞ্চলিক ভাষা হয়ে উঠেছে গর্ব ও সাংস্কৃতিক পরিচয়ের প্রতীক। মহারাষ্ট্রে মারাঠি ভাষা এমনই এক পরিচয়, যাকে কেন্দ্র করে বহুবার রাজনৈতিক আন্দোলন হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার যখন হিন্দিকে বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়, তখন তা অনেকের কাছে সাংস্কৃতিক আধিপত্যের প্রয়াস বলে মনে হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৪ সালের পর থেকে হিন্দিকে জাতীয় ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রবণতা অনেক অ-হিন্দিভাষী রাজ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিতর্কের মুখে পড়ে মহারাষ্ট্র সরকার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় এবং বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করে। তবে ইতোমধ্যে রাজ্যে একাধিক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে।
এপ্রিলেই থানে জেলায় “এক্সকিউজ মি” বলার কারণে দুই নারীকে মারধর করা হয়। একই মাসে মুম্বাইয়ে মারাঠি না জানায় এক নিরাপত্তারক্ষীকে লাঞ্ছিত করা হয়। এক দোকানদারকে মারাঠি ভাষায় কথা না বলার কারণে আক্রমণের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক মাধ্যমে।
এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী – শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা উদ্ভব ঠাকরে ও মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা (এমএনএস) প্রধান রাজ ঠাকরে – হিন্দি ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে এক মঞ্চে এসে ভাষণ দিয়েছেন। আসন্ন পৌর নির্বাচনের আগে এই ঐক্যকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর এক সম্পাদকীয়তে হিন্দি বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্তকে “মুম্বাইয়ের মুখে চপেটাঘাত” হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এ ধরনের সংকীর্ণ ভাষা-নীতি সমাজে বিভাজন ও সহিংসতা বাড়াতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রশান্ত দীক্ষিত মনে করেন, ভাষাভিত্তিক রাজনীতি হয়তো স্বল্পমেয়াদে ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে জনগণের চাহিদা থাকে কর্মসংস্থান, উন্নয়ন এবং কার্যকর নীতির দিকে। তাই রাজনৈতিক নেতাদের উচিত জনগণের বাস্তব সমস্যার দিকে মনোযোগ দেওয়া।
তথ্যসূত্র : বিবিসি