গাজায় সাংবাদিকতার কাজ এখন যেন এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মধ্যে সংবাদকর্মীরা প্রতিদিন জীবন বাজি রেখে মাঠে নামছেন। প্রায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ যেমন সাধারণ মানুষের দুর্দশা বাড়িয়েছে, তেমনি সাংবাদিকরাও একই দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

প্যালেস্টাইন জার্নালিস্টস সিন্ডিকেট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি সময় পর্যন্ত গাজায় অন্তত ২৩৮ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া ১২ জন সংবাদকর্মী এখনো ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি।

আহত সাংবাদিক সাফিনাজ আল-লুহ জানান, একাধিকবার হামলায় আহত হলেও তিনি মাঠে থেকে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিস্ফোরণে তার পা ভেঙে যায়, হাতে ফ্র্যাকচার হয় এবং শরীরে দগ্ধের চিহ্ন রয়ে গেছে। এ যুদ্ধে তিনি হারিয়েছেন নিজের সাংবাদিক ভাই আহমদকেও।

আল জাজিরার প্রতিবেদক রামি আবু তাইমা বলেন, জীবন বাঁচাতে পরিবারসহ অন্তত ২০ বার স্থান পরিবর্তন করতে হয়েছে। বর্তমানে তার সন্তানরা—এক ছেলে ও আট মেয়ে—শরণার্থী শিবিরে কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতিদিন সহকর্মীদের মৃত্যু সংবাদ শুনতে হচ্ছে তাকে।

আল আরাবিয়ার সাংবাদিক ওসামা আল-কাহলুত মনে করেন, এবারের সংঘাত আগের সব যুদ্ধকে ছাড়িয়ে গেছে। ক্ষুধা ও অনাহার পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। তিনি বলেন, “একদিন তাঁবুর ভেতর সহকর্মীর সঙ্গে রুটি ভাগাভাগি করছি, আর পরদিনই তার মৃত্যু সংবাদ পাচ্ছি।”

প্যালেস্টাইন জার্নালিস্টস সিন্ডিকেটের মহাসচিব আহেদ ফারওয়ানা জানিয়েছেন, সাংবাদিকদের শুধু হামলার শিকার হতে হচ্ছে তা-ই নয়—আটক, আহত, পরিবার হারানো, অফিস ধ্বংস, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া এবং খাদ্য-সরঞ্জামের চরম সংকটের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে তাদের। তার মতে, এক আক্রমণে একসঙ্গে ছয় সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ উদাহরণ।

তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৭৩৮ ও ২২২২ নম্বর প্রস্তাব কার্যকর করার দাবি জানান, যেখানে যুদ্ধক্ষেত্রে সংবাদকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে।

সূত্র : শাফাক নিউজ