লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত চারটি শহরে বৃহস্পতিবার ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। স্থানীয় সূত্র ও সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, এসব হামলায় এক বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং অন্তত নয়জন আহত হয়েছেন। লেবাননের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে—এই হামলার মাধ্যমে ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি সরাসরি লঙ্ঘন করছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, টায়ার জেলার বিভিন্ন বেসামরিক এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। তবে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল হিজবুল্লাহর সামরিক স্থাপনা।
লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন এক বিবৃতিতে বলেন,
“আজকের এই হামলা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং জাতিসংঘের শান্তি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ইসরাইল আমাদের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, যুদ্ধবিরতির পরও ইসরাইল কোনো রাজনৈতিক সমাধানের পথে এগোয়নি, বরং ধারাবাহিক হামলার মাধ্যমে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, হিজবুল্লাহ জানায়, তারা এখনো যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে আত্মরক্ষার প্রয়োজনে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার তাদের আছে। সংগঠনটি এক বিবৃতিতে বলে,
“যে শক্তি আমাদের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে আত্মরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া আমাদের বৈধ অধিকার।”
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, তারা দক্ষিণ লেবাননের আয়তা আল-জাবাল, তায়বেহ, তায়ের দেব্বা এবং জাওতার আল-শারকিয়া এলাকায় “নির্দিষ্ট সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে” হামলা চালিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের ওই অঞ্চল থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার পরপরই হামলা শুরু হয়।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সীমান্ত উত্তেজনা বেড়ে যায়। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এই সংঘাত পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নেয়, যাতে চার হাজারেরও বেশি লেবানিজ নিহত এবং প্রায় ১৭ হাজার আহত হন।
যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়, তবুও ইসরাইলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে প্রায় প্রতিদিনই বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত হিজবুল্লাহর ৩৫০ জনেরও বেশি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ হামলায় তাদের এলিট রেদওয়ান ফোর্সের এক কমান্ডারকেও টার্গেট করা হয়েছে বলে জানা যায়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যেই ইসরাইলের দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করার কথা ছিল। কিন্তু তারা এখনো পাঁচটি সীমান্ত পোস্টে অবস্থান ধরে রেখেছে, যা নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
সূত্র: আলজাজিরা, টাইমস অব ইসরাইল।