ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, মিডল ইস্ট আই : সুদানে বিদ্রোহী আরএসএফকে চীনা অস্ত্র সরবরাহ নিয়ে গোয়েন্দা তথ্যে উঠে এসেছে বিস্ফোরক তথ্য। এতে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত দেশটিতে এসব অস্ত্র সরবরাহ বাড়িয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এমন দাবি করেছে। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর ও পররাষ্ট্র দপ্তরের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস এর কাছে চীনা তৈরি ড্রোন ও অন্যান্য অস্ত্র সরবরাহ বৃদ্ধি করেছে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউএই সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আরএসএফকে উন্নতমানের চীনা তৈরি ড্রোন, স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র, ভারী মেশিনগান, যানবাহন, মর্টার, কামান ও গোলাবারুদ সরবরাহ করছে। এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীটিকে দারফুর অঞ্চলে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

ইউএই-এর বিরুদ্ধে আগেও এমন অভিযোগ উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম জানায়, ইউএই লিবিয়া, সাদ, উগান্ডা ও সোমালিয়ার বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলো হয়ে একটি জটিল সরবরাহ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আরএসএফকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। ২০২৪ সালের মে মাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, ইউএই দারফুরে চীনা তৈরি বোমা ও কামান পাঠিয়েছে। অঞ্চলটিতে আরএসএফ দীর্ঘদিন ধরে অবরোধ চালিয়ে আসছে। সম্প্রতি আরএসএফ উত্তর দারফুরের শহর এল-ফাশের দখল নেয় এবং সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের হত্যাযজ্ঞের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। মার্কিন মধ্যস্থতায় চলা শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পরপরই এ হামলা ঘটে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ইউএই-এর এই সহায়তা গত মার্চের পর থেকে বেড়েছে। এ সময়ে ইরান, তুরস্ক ও মিসরের সমর্থনপুষ্ট সুদানি সেনাবাহিনী রাজধানী খার্তুমের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়। মে মাসে ইউএই চীনা ড্রোন ব্যবহার করে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন পোর্ট সুদানে হামলা চালায়। এতে তুরস্কের প্রযুক্তি দলের কয়েকজন সদস্য আহত হন। প্রতিবেদনটি বলা হয়, ইউএই বর্তমানে আরএসএফকে চায়না অ্যারোস্পেস সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি করপোরেশনের তৈরি ‘রেইনবো’ সিরিজ ড্রোন সরবরাহ করছে। এর মধ্যে সিএইচ-৯৫ মডেলটি ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে পারে ও নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

সুদানের সংঘর্ষে কেন জড়াচ্ছে আরব আমিরাতের নাম: সুদানের খার্তুম থেকে দারফুর-শুধু ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর লাশের স্তূপ! কয়েক মাস আগেও যে খার্তুম ছিল সুদানের প্রাণ, সেখানে গৃহযুদ্ধের আগুন। উত্তর দারফুরের এল-ফাশের শহরের আকাশ ছেয়ে আছে কালো ধোঁয়ায়, আর রাস্তাগুলো পরিণত হয়েছে নিস্তব্ধ কবরস্থানে। রাস্তায় পড়ে আছে শত শত লাশ, দাফন করারও কেউ নেই। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে। সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু এই ভয়াবহতার পেছনে শুধু সুদান নয়, একটি মুসলিম-প্রধান দেশের নামও বারবার উঠে আসছে সেটি হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত। কিন্তু কেন? মূলত ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুদানের সরকার উৎখাত হয়েছিল। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন দুই ক্ষমতাধর জেনারেল, জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান, যিনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট এবং জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি তার ডেপুটি ও আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (জঝঋ)-এর নেতা।

এই দুই জেনারেলের মধ্যে মূল সংঘাত শুরু হয় প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করা এবং নতুন এই যৌথবাহিনীর নেতৃত্ব কে দেবেন, তা নিয়ে। ধারণা করা হয়, ক্ষমতার ভাগ, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখাই ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য। সেনাবাহিনী আরএসএফের ব্যাপক মোতায়েনকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছিল। ফলস্বরূপ, ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল শুরু হয় গোলাগুলি, যা দ্রুতই পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। আরএসএফ গঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালে। যে কুখ্যাত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে দারফুরে নৃশংস গণহত্যা ও জাতিগত নির্মূল অভিযানের অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্য থেকে আরএসএফ বাহিনী গড়ে ওঠে।

জেনারেল দাগালো এই আরএসএফ-কে একটি শক্তিশালী বাহিনীতে পরিণত করেন। অভিযোগ রয়েছে, এই বাহিনীর মাধ্যমে তিনি সুদানের কিছু সোনার খনি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং সেই সোনা সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাচার করেন। এবং সুদানের সেনাবাহিনী সরাসরি অভিযোগ করেছে যে আমিরাত আরএসএফ-কে সমর্থন ও ড্রোন হামলা চালাচ্ছে। যদিও উপসাগরীয় দেশটি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বর্তমানে আরএসএফ প্রায় পুরো দারফুর এবং পাশের কর্দোফান প্রদেশের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার গঠনের চেষ্টা করছে।