এএফপি, আল-জাজিরা, : সুদানে দুই বছরের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ। ২০২৩ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে সংঘাত শুরুর পর থেকে দেশজুড়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ চলছে। সম্প্রতি সুদানের দারফুর অঞ্চলের এল-ফাশার শহরে ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র উঠে এসেছে। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।
সুদানে রক্তপাত বন্ধের জন্য মুসলিমবিশ্বকে তাদের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। সোমবার ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) অর্থনৈতিক সম্মেলনে প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, ‘কারো হৃদয়ে সহমর্মিতা থাকলে... এল-ফাশেরে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে সাম্প্রতিক গণহত্যা মেনে নিতে পারে না। আমরা নীরব থাকতে পারি না।’
এরদোগান আরও বলেন, সুদানে দ্রুত রক্তপাত বন্ধ করার সবচেয়ে বড় দায়িত্ব নিঃসন্দেহে মুসলিম বিশ্বের ওপর বর্তায়। মুসলিম হিসেবে আমাদের অন্যদের কাছে সাহায্য না চেয়ে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে হবে। তুর্কি প্রেসিডেন্ট বলেন, এই কঠিন সময়ে সুদানের জনগণের পাশে থাকা এবং আমাদের মানবিক সহায়তা ও উন্নয়ন সমর্থন অব্যাহত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সুদানের আঞ্চলিক অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধা সামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত ও নির্যাতনের শিকার মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদান সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এর পর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ, গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন—এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা কোরো না।” এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, “থামো থামো”। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’