সিএনএন : জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাস্তবতাকে ভিন্নভাবে তুলে ধরতে বেপরোয়া ও বিভ্রান্তিকর চেষ্টা শুরু করেছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি কিছুতেই নামছে না; বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়ছে। জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। তখন ট্রাম্প জোর করে মানুষকে বিশ্বাস করাতে চাইছেন, আসলে এমন কিছুই ঘটছে না। গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে এবং নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ায় গভর্নর নির্বাচনে ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থীদের পরাজয় ঘটেছে। নিউইয়র্ক শহরের মেয়র নির্বাচনে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি। এই ব্যয় কমানোসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি। এ প্রসঙ্গে গত শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, জিনিসপত্রের ক্রয়ক্ষমতা নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা যে প্রচার চালিয়েছেন, তা মিথ্যা। আসলে জিনিসপত্রের দাম কমেছে। তাঁর যুক্তি, যেসব বাড়তি খরচের কথা প্রচার করা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সেগুলোর খরচ কম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষ্য, দেশে মূল্যস্ফীতি নেই। তাঁর প্রশাসন এ বিষয়ে দারুণ কাজ করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ট্রাম্প এখন জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টিকেই নিজের প্রধান ইস্যু হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তবে বিভিন্ন জনমত জরিপ এটা স্পষ্ট, সাধারণ মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়টি ভালোভাবেই টের পাচ্ছেন। ট্রাম্পের নীতির কারণে এই পরিস্থিতি—এমনটাই মনে করেন তাঁরা। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভাষ্য, দেশে মূল্যস্ফীতি নেই। তাঁর প্রশাসন এ বিষয়ে দারুণ কাজ করেছে।
ট্রাম্পের মনোযোগ ‘জীবনযাত্রার ব্যয়’: নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানির গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক নীতিগুলোকে গুরুত্ব নাই দিতে পারেন। কিন্তু গত কয়েক দিনে দেখা যাচ্ছে, তিনি যেন মামদানির রাজনৈতিক কৌশল থেকে একটি অধ্যায় তুলে নিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের শীর্ষ রাজনৈতিক উপদেষ্টা জেমস ব্লেয়ার গত বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোকে বলেন, ‘জোহরান মামদানি কেন এত ভালো করলেন? কারণ, তিনি নিরলসভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টিতেই মনোযোগ রেখেছেন।’
ট্রাম্পের মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (মাগা) প্রচারণার ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং ওহাইও অঙ্গরাজ্যের গভর্নর প্রার্থী বিবেক রামাস্বামী গত মঙ্গলবার রাতের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। তাতে তিনি রিপাবলিকানদের সংস্কৃতিযুদ্ধ ছেড়ে ‘জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর’ বিষয়টিতেই মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত কয়েক দিনে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং বক্তৃতায় বারবার জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে কথা বলেছেন। গত শুক্রবার ট্রাম্প দাবি করেন, জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়ে প্রতারণামূলক প্রচার করেছেন ডেমোক্র্যাটরা। রিপাবলিকানদের উচিত হবে, তাঁর অর্থনৈতিক সাফল্যগুলো নিয়ে আরও জোরালোভাবে কথা বলা। হোয়াইট হাউসের শীর্ষ রাজনৈতিক উপদেষ্টা জেমস ব্লেয়ার গত বুধবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোকে বলেন, ‘জোহরান মামদানি কেন এত ভালো করলেন? কারণ, তিনি নিরলসভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টিতেই মনোযোগ রেখেছেন।’ গত বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, ‘একটাই সমস্যা—রিপাবলিকানরা এসব নিয়ে কথা বলেন না। তাঁদের এসব নিয়ে কথা বলা শুরু করা উচিত এবং মাথাও খাটাতে হবে। কারণ, আমাদের অর্থনৈতিক সূচকের সংখ্যাগুলো দারুণ।’ তিনি দাবি করেন, দেশে মূল্যস্ফীতি প্রায় নেই।
এ ছাড়া ট্রাম্প বারবার উল্লেখ করেছেন, এ বছর ওয়ালমার্টের বার্ষিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন (থ্যাঙ্কস গিভিং) প্রচারণায় মুদিপণ্যের তালিকার খরচ ৪০ ডলারের নিচে, যেখানে গত বছর তা ছিল প্রায় ৫৫ ডলার। সাম্প্রতিক ভোক্তা মূল্যসূচক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে গড় দাম জানুয়ারির তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ এবং গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩ শতাংশ বেশি ছিল। গত সপ্তাহে সিবিএস নিউজ–ইউগভ পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৭ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, সম্প্রতি পণ্যের দাম কমছে। বিপরীতে ৬২ শতাংশ জানিয়েছেন, দাম বাড়ছে।
সরাসরি ট্রাম্পকেই দায়ী করা হচ্ছে : মানুষ এখন এই মূল্যবৃদ্ধি ও আর্থিক কষ্টের সঙ্গে সরাসরি ট্রাম্পের নীতির যোগসূত্র টানছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট–এবিসি নিউজ জরিপে দেখা গেছে, ৫৯ শতাংশ উত্তরদাতা ট্রাম্পকেই মূল্যবৃদ্ধির জন্য দায়ী করছেন। নতুন এক সিএনএন জরিপে ৬১ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, ট্রাম্পের নীতির ফলে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এই সংখ্যা মার্চের পর থেকে ১০ পয়েন্ট বেড়েছে। আরও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো এটা জো বাইডেনের আমলের যেকোনো সময়ের তুলনায়ও বেশি।
ট্রাম্পের নতুন কৌশলের ঝুঁকি: ট্রাম্প এখন জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর নীতির দিকে ঝুঁকে পড়ার কৌশল নিলে সেটি তাঁর জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ, এতে মানুষ আরও স্পষ্টভাবে তাঁকে চলমান মূল্যস্ফীতির সঙ্গে যুক্ত করতে পারছেন। কারণ, তাঁর নিজস্ব শুল্কনীতি। এসব নীতি তিনি একতরফাভাবে প্রয়োগ করেছেন। ফলে দায়ও এককভাবে তাঁর ওপর পড়েছে। এখন চেষ্টা করছেন বাস্তবতা লুকিয়ে সবকিছু আসলে ভালো চলছে, সেটি দেখাতে। এতে ট্রাম্প হয়তো কিছু মানুষকে বোঝাতে পারবেন যে মুদিদোকান বা বিদ্যুৎ বিলের বাড়তি খরচ তাঁরা যা দেখছেন, তা বাস্তব নয়। কিন্তু বৃহত্তর জনগণকে এমনটা বোঝানো কার্যত অসম্ভব। ভোট জালিয়াতির মতো ইস্যুতে হয়তো একই কথা পুনরাবৃত্তি করে মিথ্যা তথ্য প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব। কিন্তু পণ্যের দাম এমন এক বিষয়, যা মানুষ নিজের চোখে প্রতিদিন যাচাই করতে পারেন। তাই শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো, মানুষ তাঁকে এমন এক নেতা হিসেবে দেখতে শুরু করবেন, যিনি তাঁদের অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।