বিবিসি , রয়টার্স : চলছে একের পর এক গান, বাদ্যের তালে নাচ দল বেঁধে। এভাবেই ব্রাজিলের বেলেম শহরে হয়েছে হাজারো আদিবাসী ও জলবায়ুকর্মীর বিক্ষোভ। এ শহরেই বসেছে জাতিসংঘের জলবায়ুবিষয়ক শীর্ষ সম্মেলন কপ৩০। সম্মেলনকেন্দ্রের ফটকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। পৌঁছে দেন নিজেদের বার্তা। নাচ-গানের পাশাপাশি মুহুর্মুহু স্লোগান চলেÍ‘আমাজনকে মুক্ত করুন।’ এ সময় বিক্ষোভকারীরা তিনটি বিশালাকার কফিন বহন করেন। একটির ওপর লেখা ছিল তেল। অন্য দুটির ওপর যথাক্রমে কয়লা ও গ্যাস। ভয়ংকর দেখতে দুজন কফিন বহন করেন। বিক্ষোভে আদিবাসীরা ‘উত্তর আমাদের’লেখা প্ল্যাকার্ড বহন করেন। প্রখর রোদের নিচে ব্যাপক ভিড়ের মধ্যে একটি বড়সড় হাতি ও অ্যানাকোন্ডার প্রতিকৃতি এগিয়ে নিয়ে যেতেও দেখা যায়। ২০২১ সালের পর এবারই প্রথম জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনস্থলের বাইরে জলবায়ুকর্মীদের বিক্ষোভের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ তিনটি সম্মেলন এমন তিনটি দেশে হয়েছে, যেখানে এভাবে বিক্ষোভের অনুমতি ছিল না।
বিক্ষোভে অংশ নিয়ে তুগা সিন্তিয়া বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা এখানে জীবাশ্ম জ্বালানির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজন করেছি।’ ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব প্যারার থিয়েটার গ্রুপ হাইড্রা ড্যান্স থেকে তিনি বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন। তুগা আরও বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি, কারণ, কপ সম্মেলন ও তাদের তত্ত্বের জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের আসলে কাজ করার সময় এসেছে।’ হাজারো বিক্ষোভকারীর ভিড়ে যেমন ব্রাজিলের আদিবাসীরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন দেশটির তরুণেরা। আরও ছিলেন বিভিন্ন দেশ থেকে কপ৩০ উপলক্ষে ব্রাজিলে জড়ো হওয়া জলবায়ু ও অধিকারকর্মীরা। সামোয়ার জলবায়ুকর্মী ব্রায়ানা ফ্রুয়েনও গতকাল শনিবারের বিক্ষোভে অংশ নেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এখনো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতির সম্মুখসারিতে অবস্থান করে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা কেমন, তা আমরা খুব ভালো করেই জানি।’
ব্রাজিলের বসবাসকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘৩৫০’ থেকে আসা ইলান বলেন, ‘আমরা এখানে ন্যায়বিচারের জন্য, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের দাবিতে মিছিল করছি।’ কপ৩০ সম্মেলনের আয়োজক ব্রাজিল ২০৩৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী টেকসই জ্বালানির ব্যবহার চার গুণ বাড়ানোর জন্য দেশগুলোর প্রতি চাপ দিচ্ছে। এই টেকসই জ্বালানির মধ্যে রয়েছে বায়োফুয়েল, হাইড্রোজেন ও বায়োগ্যাস।
তবে পরিবেশবিদেরা সতর্ক করছেন, ফসল থেকে জ্বালানি তৈরি করলে খাদ্যনিরাপত্তা ও প্রকৃতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। গত সোমবার শুরু হয়েছে ১২ দিনের এই সম্মেলন। ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও অংশগ্রহণকারী দেশগুলো চূড়ান্ত চুক্তির বিষয়ে একমত হতে পারেনি। এমনকি কোন কোন বিষয়ে একমত হওয়া যেতে পারে, সেটা নিয়েও তীব্র মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছে। সম্মেলন শেষে সবার মতৈক্যে কোনো চুক্তি আদৌ সম্ভব কি না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়ে গেছে।