রয়টার্স : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি অধিকৃত পশ্চিম তীরকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে দেবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। ইসরায়েলের কিছু উগ্র ডানপন্থি নেতা দেশটির সঙ্গে পশ্চিম তীর যুক্ত করে সেখানে নিজেদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাকে ধূলিসাৎ করতে চান। তাদের এ আহ্বান নাকচ করে দিয়েছেন ট্রাম্প। রয়র্টাস, মেহের নিউজ।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরকে তার দেশের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে মিত্রদের চাপের মুখে আছেন। বিষয়টি আরব নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন গত মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি পশ্চিম তীর ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করতে দেব না, কোনোভাবেই না। এটা হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। এবার থামতে হবে।’ ট্রাম্প এমন সময় এ মন্তব্য করলেন, যখন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যাচ্ছিলেন। আজ শুক্রবার সেখানে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন তিনি।

দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রাখতে গত কয়েক দিনে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহুর কার্যালয় বলেছে, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ থেকে ইসরায়েলে ফিরে ট্রাম্পের এ মন্তব্যের জবাব দেবেন।

১৯৬৭ সালের যুদ্ধে পশ্চিম তীর দখল করে ইসরায়েল। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এ দখলদারির স্বীকৃতি দেয়নি। এর পর থেকেই সেখানে ইসরাইলী বসতি স্থাপন অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরব ও মুসলিম দেশগুলো ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছে, পশ্চিম তীর ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার পরিণতি বিপজ্জনক হতে পারে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল-সৌদ বলেছেন, ট্রাম্প বিষয়টি ভালোভাবেই বুঝতে পারছেন। পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ২৭ লাখ ফিলিস্তিনীর মধ্যে ৭ লাখ ইসরাইলী বসবাস করছেন। ইসরায়েল অঞ্চলটির ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে রাজি নয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা শুরুর পর থেকে এ অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই পশ্চিম তীরে ইসরাইলী বসতিগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনে অবৈধ বলে মনে করে। ইসরায়েল অবশ্য এ মনোভাবের বিরোধিতা করে আসছে।

ইসরাইলী বিমান হামলার মোক্ষম জবাব দিল ইয়েমেন

ইয়েমেনের রাজধানী সানার আবাসিক এলাকা ও বেসামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে গত বৃহস্পতিবার অন্তত ১২টি বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে অন্তত ৮ জন নিহত এবং ১৪২ জন আহত হয়েছেন। ইসরাইলের সর্বশেষ এই আগ্রাসনের মোক্ষম জবাব দিতে দেরি করেনি হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনের সামরিক বাহিনী। ইয়েমেনি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা নতুন করে ইসরাইলবিরোধী সামরিক অভিযান পরিচালনা করেছে। এই অভিযানে একাধিক ওয়ারহেডযুক্ত হাইপারসনিক ‘প্যালেস্টাইনÑ২’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরাইল অধিকৃত ইয়াফা অঞ্চলের (তেলআবিব) কয়েকটি সংবেদনশীল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়েছে।

ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, ইয়েমেনে ইসরাইলী আগ্রাসন এবং গাজায় চলমান গণহত্যার জবাবে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পাশাপাশি, তারা লোহিত সাগর ও আরব সাগরের ব্যস্ততম এলাকায় উপস্থিত বা এর মধ্য দিয়ে যাতায়াতকারী সব বেসামরিক ও সামরিক কোম্পানি ও জাহাজকে নিজেদের পরিচয় প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে। ইয়েমেনি বাহিনী জোর দিয়ে বলেছে, দেশের প্রতিরক্ষা ও গাজার প্রতি সমর্থনের অংশ হিসেবে তারা ক্রমবর্ধমান হারে আরও অভিযান চালাবে, যতদিন না ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন ও অবরোধ বন্ধ করছে। অন্যথায় লোহিত সাগর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন ও জাহাজগুলো হামলার লক্ষ্যবস্তু হবে এবং এর সম্পূর্ণ দায়ভার ইসরাইল ও আমেরিকাকেই বহন করতে হবে।

এর আগে, বৃহস্পতিবার ইসরাইলী সেনারা ২০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে সানার দক্ষিণে বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে বিমান হামলা চালায়। তবে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, শহরে মাত্র ১২টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সূত্রটি জোর দিয়ে জানায়, ইয়েমেনি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একাধিক স্তরের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির মাধ্যমে শত্রু যুদ্ধবিমানের কয়েকটি দলকে প্রতিহত করে এবং তাদেরকে বোমাবর্ষণের আগেই সানার আকাশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় শুরু হওয়া গণহত্যামূলক আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ইয়েমেনি বাহিনী কৌশলগত সমুদ্র অবরোধ আরোপ করে, যাতে ইসরাইলে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ ঠেকানো যায়। একই সঙ্গে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজার ভয়াবহ মানবিক সংকট সমাধানে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানায়। পাশাপাশি ইসরাইল অধিকৃত অঞ্চলে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ওপর একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইয়েমেন, যা গাজাবাসীর প্রতি তাদের সমর্থনের প্রকাশ।

ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, তারা তাদের সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখবে যতদিন না ইসরাইল গাজায় স্থল ও বিমান হামলা বন্ধ করছে। এদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় গাজায় অন্তত ৬৫,৫০২ জন ফিলিস্তিনী নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহতের সংখ্যা ১,৬৭,৩৭৬ জন।