ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ডরু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। এ জয়ের মধ্য দিয়ে মামদানি শহরটির প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন। রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ান।

মামদানি হচ্ছেন প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মেয়র। শুধু তাই নয় গত এক শতাব্দীর মধ্যে মামদানি হচ্ছেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ মেয়র।

নিউইয়র্ক সিটির বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়াই করছিলেন। তবে গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনি দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।

উল্লেখ্য যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় গতকাল বুধবার ভোর ৫টা) আনুমানিক ১৭ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছে শহরের নির্বাচন বোর্ড। গত ৩০ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি।

১৯৯৩ সালের নির্বাচনে প্রায় ১৯ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী রুডি জুলিয়ানি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ডেভিড ডিনকিনসকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এবারের নির্বাচনে প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ জন আগাম ভোট দিয়েছেন, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্ক শহরে এটিই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। গতকাল নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ৬টায়। শেষ হয় রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৮টা)। এর পরপরই শুরু হয় ভোট গণনা।

শহরের অ্যাস্টোরিয়া এলাকায় একটি কেন্দ্রে ভোট দেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি। এবারের নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর অঙ্গীকার করেছেন তিনি। তরুণসহ সব বয়সী ভোটারের মধ্যে বেশ সাড়াও পেয়েছেন। তার প্রতিফলন দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রে।

শেষ মুহূর্তে ট্রাম্প কুয়োমোকে সমর্থন দিলেও তা উল্টো ফল দেয়। এমনকি কুয়োমোর আগের সমর্থকরাও এবার মামদানীর পক্ষে ভোট দেন।

মামদানীর নির্বাচনি প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে আছে বিনামূল্যে বাস সেবা, সার্বজনীন শিশু যতœ এবং ভাড়ার সীমা নির্ধারণ। তিনি বলেছেন, বড় কর্পোরেশন ও ধনীদের ওপর কর বাড়িয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন। তবে সামনে তার জন্য চ্যালেঞ্জও কম নয়। মধ্যপন্থিদের সমর্থন ধরে রাখা এবং প্রগতিশীলদের প্রত্যাশা পূরণ - দুই দিকই সামলাতে হবে তাকে।

মামদানির জয় নিয়ে চিন্তিত ইসরাইল

নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে নতুন অধ্যায়। ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়ে শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন। ইসরায়েলের একজন মন্ত্রী তাকে হামাস সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন।

মামদানির জয়ের পর ইসরাইলের ডায়াসপোরা বিষয়ক মন্ত্রী আমিচাই চিকলি ইহুদি আমেরিকানদের ইসরাইলে চলে যাওয়ার আহ্বান জানান। চিকলি মামদানিকে হামাস সমর্থক আখ্যা দেন এবং তার বিজয়কে নিউইয়র্ক সিটির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ হিসেবে বর্ণনা করেন।

উগান্ডায় জন্মগ্রহণকারী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত পিতা-মাতার সন্তান মামদানি শিশুকালে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। নির্বাচনের শুরু থেকেই তিনি ফিলিস্তিনের প্রতি স্পষ্ট সমর্থন বজায় রেখেছিলেন এবং গাজায় ইসরাইলের গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেছেন। তার নির্বাচনি প্রচারে বর্ণবিদ্বেষ এবং ইসলামোফোবিক আক্রমণ সত্ত্বেও ভোটের তথ্য বলছে যে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে তার অবস্থান তাকে প্রাইমারিতে জয়ী হতে সাহায্য করেছে।

জয়ের পর মামদানি তার ভাষণে ইহুদি নিউ ইয়র্কবাসীদের পাশে থাকার এবং সেমিটিজম-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কোনো দ্বিধা না করার প্রতিশ্রুতি দেন।

নিউইয়র্কে ইসলামোফোবিয়ার

কোনো স্থান নেই

ÑÑমামদানি

সংগ্রাম ডেস্ক : নিউইয়র্ক শহরের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায় রচনা করেছেন জোহরান কোয়ামে মামদানি। শহরের প্রথম মুসলিম, প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া ব্যক্তি হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। গত মঙ্গলবার তরুণ বামপন্থি জোহরান মামদানিকে নিউ ইয়র্কবাসী তাদের পরবর্তী মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করেছে। নিজের বিজয়ের পর প্রথম প্রকাশ্য ভাষণে মামদানি বলেন, নিউ ইয়র্কের ভোটাররা পরিবর্তন আনতে একটি ‘নতুন ধরণের রাজনীতির’ ইঙ্গিত দিয়েছেন।

মামদানি তার ভাষণে বলেন, ‘বন্ধুরা, আমরা একটি রাজনৈতিক বংশকে পরাজিত করেছি। আমি অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে ব্যক্তিগত জীবনের জন্য শুভকামনা জানাই। তবে আমরা এমন এক রাজনীতির পাতা উল্টাতে যাচ্ছি যা অল্প কিছু মানুষের জন্য ছিল, সবার জন্য নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘নিউ ইয়র্কের নতুন প্রজন্মকে ধন্যবাদ। আমরা তোমাদের জন্য লড়ব, কারণ আমরা তোমাদেরই অংশ। এই শহর এখন ঠিকমতো শ্বাস নিচ্ছে, আমরা অনেক দিন ধরে নিঃশ্বাস আটকে রেখেছিলাম।’

নবনির্বাচিত মেয়র বলেছেন, ‘নিউইয়র্ক থাকবে অভিবাসীদের শহর- এমন একটি শহর যা অভিবাসীদের দ্বারা নির্মিত, অভিবাসীদের শ্রমে চালিত এবং আজ থেকে অভিবাসীর হাতেই পরিচালিত। আমরা যাদের ভালোবাসি, তাদের জন্য রুখে দাঁড়ানোকেই বিশ্বাস করি। তুমি যদি একজন অভিবাসী হও, ট্রান্স কমিউনিটির সদস্য হও, কৃষ্ণাঙ্গ নারী হও যাদের ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেডারেল চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছেন, কিংবা এমন একক মা হও যিনি এখনও খাবারের খরচের অপেক্ষায় সংগ্রাম করছেন; তোমার সেসব সংগ্রাম আমাদেরও সংগ্রাম।’

‘আমি তরুণ এবং আমি একজন মুসলিম। মুসলমান হওয়ার জন্য আমি কখনও ক্ষমা চাইব না। আমি তোমাদের সন্তান হতে পেরে গর্বিত’- যোগ করেন মামদানি। ইসলামবিদ্বেষ ছড়িয়ে দিয়ে নিউ ইয়র্কে নির্বাচন জেতা সম্ভব না, এমনটাও বলেছেন তিনি। সবশেষে মামদানি বলেন, ‘নিউ ইয়র্ক হবে এই রাজনৈতিক অন্ধকারের মধ্যে এক আলো। আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করব যেন সেই আলো আবার জ্বলে ওঠে। এখানে নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।’

ইতিহাস গড়া মেয়র মামদানির আবেগঘন বার্তা নিউ ইয়র্কের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন জোহরান মামদানি। নির্বাচনে জয়ের পর তিনি ধন্যবাদ জানিয়েছেন তার মা–বাবা ও স্ত্রীকে। জয়ী ঘোষণার পর আবেগঘন ভাষণে মামদানি বলেন, ‘আজ আমি যে মানুষ হয়েছি, তা তোমাদের জন্যই। তোমাদের সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত।’ স্ত্রী রামাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে এবং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে তোমাকে পাশে চাই। এটাই আমার সবচেয়ে প্রিয় সময়।’ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী মামদানি গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিউইয়র্ক নগরের ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন। এই জয়ের মাধ্যমে মামদানি শুধু নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়রই নন, তিনিই প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত ও আফ্রিকায় জন্ম নেওয়া অভিবাসী, যিনি নগরটির নেতৃত্বে এলেন। এ ছাড়া, এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সী মেয়রও তিনি।

প্রায় আধা ঘণ্টার ভাষণে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে মামদানি আরও বলেন, ‘আজ আমরা স্পষ্ট কণ্ঠে বলেছি, আশা বেঁচে আছে। এটি এমন এক যুগ হবে, যেখানে নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা তাদের নেতাদের কাছে আরও সাহসী ভূমিকা প্রত্যাশা করবেন।’

নির্বাচনি প্রচারের সময় সরাসরি মামদানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন ট্রাম্প। ভোটের আগে এমনকি তিনি নিজ দলের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে সমর্থন জানিয়েছেন। জোহরান নয়, কুওমোকে ভোট দিতে নিউ ইয়র্কবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া মামদানি নির্বাচিত হলে নিউ ইয়র্ক সিটির জন্য বরাদ্দ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল আটকে দেবেন বলে হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।

নয় মাস আগে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর, প্রথম বড় কোনও নির্বাচনে ট্রাম্প ধাক্কা খেলেন ট্রাম্প। কারণ মঙ্গলবারের তিনটি নির্বাচনেই জয় পেয়েছে ডেমোক্র্যাটরা,যা নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে সামনে এনেছে এবং আগামী বছরের কংগ্রেস নির্বাচনের আগে দুর্বল অবস্থায় থাকা দলটিতে নতুন গতি এনে দিয়েছে। নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গভর্নর নির্বাচনের জয়ী হয়েছে ডেমোক্র্যাটরা। সিএনএনের আভাস, নিউ জার্সির গভর্নর পদে মাইকি শেরিল এবং ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে নির্বাচনে এবিগেইল স্প্যানবার্গার জয়ী হচ্ছেন। তবে মামদানি স্বীকার করেছেন, তার জয় বাস্তবে একটি চ্যালেঞ্জ। প্রচারণায় তিনি বলেছেন, ‘এই শহরের জীবনযাত্রার ব্যয় সংকট মোকাবিলার ইতিহাসের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা’ বাস্তবায়নে তিনি মাঠে নামছেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রস্তাবিত ভাড়া স্থগিত, সর্বজনীন শিশু যতœ এবং বেসরকারি খাতের ওপর লক্ষ করে সরকারের অন্যান্য পদক্ষেপ। মামদানিকে অভিনন্দন জানালেন ওবামা।