রয়টার্স, বিবিসি : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে ২৮ দফা নতুন প্রস্তাব নিয়ে কিয়েভ ও তার মিত্রদের সঙ্গে আলোচনায় ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ অর্জনের দাবি করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তবে (চূড়ান্ত সমাধানের জন্য) আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। জেনেভায় গত রোববার ইউক্রেন ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

রুবিও বলেন, প্রতিনিধিরা বেশ ভালো একটি দিন পার করেছেন। মার্কিন প্রস্তাবের মতবিরোধের বিষয়গুলো কমিয়ে আনা ছিল বৈঠকের প্রধান উদ্দেশ্য এবং সবাই সে কাজে অনেকটাই সফল হয়েছেন। তবে এখনও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু সমাধান বাকি রয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, যে কোনও চূড়ান্ত চুক্তিতে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাগবে, তারপর তা রাশিয়ার কাছে পাঠানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করেই জেনেভা বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। ফাঁস হওয়া মার্কিন প্রস্তাবের একটি শর্ত হচ্ছে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ডোনেস্কের যে অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে সেখান থেকে সরে যাবে, আর রাশিয়া কার্যত ডোনেস্ক, লুহানস্ক এবং ২০১৪ সালে দখল করা ক্রিমিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ বহাল রাখবে।

এছাড়া, প্রস্তাবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার আট লাখ ৮০ হাজার থেকে ছয় লাখে নামিয়ে আনা, ‘নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিনিময়ে’ ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার অঙ্গীকার করা এবং রাশিয়াকে শিল্পোন্নত দেশের জোট জি-সেভেনে ফিরিয়ে আনার শর্তও জুড়ে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের সম্ভাবনা এবং কিয়েভের প্রতি সাবেক বাইডেন প্রশাসনের এ সংক্রান্ত আশ্বাস নিয়েই মোটাদাগে ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু হয়। নতুন মার্কিন প্রস্তাব ফাঁস হওয়ার পরই ইউক্রেন ও তার মিত্ররা আপত্তি জানিয়ে বলেছিল, এটি রাশিয়ার পক্ষে যাচ্ছে। অবশ্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রস্তাবটিকে সমঝোতার “ভিত্তি” হিসেবে স্বাগত জানান। আর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনকে হয়তো অত্যন্ত কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে: সম্মান হারানো, অথবা প্রধান মিত্রকে হারানোর ঝুঁকি নেওয়া। অবশ্য, গত রবিবার বৈঠক পরবর্তী এক যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের তরফে বলা হয়, হালনাগাদ ও পরিশীলিত শান্তি কাঠামোতে দুদেশ একমত হয়েছে এবং আগামী দিনে যৌথ প্রস্তাবের ওপর ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। জেলেনস্কি বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিরা আমাদের উদ্বেগে গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছি।

জেনেভায় আলোচনার আগে রুবিও এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করে, ২৮ দফা পরিকল্পনা ওয়াশিংটনই তৈরি করেছে। ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন মার্কিন সিনেটরদের একটি অংশ দাবি করে যে, রুবিও তাদের বলেছেন এই খসড়া রাশিয়ার প্রস্তাব এবং এটি ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান নয়। রুবিও এই বয়ান অস্বীকার করে বলেন, প্রস্তাবটি যুক্তরাষ্ট্রই তৈরি করেছে, যেখানে মস্কো ও কিয়েভের মতামত ছিল। আর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র সিনেটরদের দাবি “স্পষ্টতই মিথ্যা” বলে অভিযোগ করেন। এদিকে, কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানায়, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতৃত্বে ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্ররা একটি বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে। অবশ্য ওই নথিটি বিবিসি দেখেনি, এবং রুবিও নিজে এ সম্পর্কে অবহিত নন বলে দাবি করেন। ড়শরবিবার এর আগে ট্রাম্প অভিযোগ করেন, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার প্রতি ইউক্রেনের নেতারা সামান্যতম কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছে না।তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের সবচেয়ে একান্ত ইউরোপীয় মিত্ররাই এখনও রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। অথচ ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে তেল ও গ্যাস রফতানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ক্রেমলিন। রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে রেখেছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘ ফ্রন্টলাইনে তাদের ধীরগতির অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। ট্রাম্প ইউক্রেনকে সামনের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রস্তাব গ্রহণের সময়সীমা দিয়েছেন। তবে ইউরোপ, কানাডা ও জাপানের উদ্বেগের পর তিনি বলেন, এটি কিয়েভের জন্য তার “চূড়ান্ত প্রস্তাব” নয়। জেনেভায় রুবিও বলেন, খুব যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে সমঝোতা হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদী। সেটা হতে পারে গত বৃহস্পতিবার, অথবা পরের সপ্তাহের সোমবারের মধ্যে অন্য কোনও দিন।