রয়টার্স, এএফপি : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে দ্রুত বৈঠকের পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রথমবারের মতো ‘একান্ত’ শান্তি সম্মেলনে বসার পথে এগোচ্ছেন। গত সোমবার ওয়াশিংটনে ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প জানান, তিনি ইউক্রেনের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। এরপর ফোনে পুতিনের সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। এর আগে গত সপ্তাহে আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প তার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লেখেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেনের জন্য শান্তির সম্ভাবনায় সবাই খুশি।’ তিনি আরও জানান, আলোচনার পরপরই পুতিনকে ফোন করে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছেন।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই এ দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে পুতিন সম্মতি দিয়েছেন। তবে তারিখ ও স্থান এখনো নির্ধারণ হয়নি। জেলেনস্কির প্রস্তুতি : হোয়াইট হাউসের বাইরে সাংবাদিকদের জেলেনস্কি জানান, তিনি পুতিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসতে প্রস্তুত। ক্রেমলিনের এক উপদেষ্টা বলেন, পুতিনও ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার ধারণার প্রতি ইতিবাচক। যুদ্ধক্ষেত্রে কিছু সাম্প্রতিক অগ্রগতি সত্ত্বেও ইউক্রেন যুদ্ধ কার্যত অচলাবস্থায় পড়েছে। গত শুক্রবার ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক কোনো যুদ্ধবিরতি আনতে ব্যর্থ হলেও, জেলেনস্কি দ্রুত হোয়াইট হাউসে গিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে নতুন আলোচনায় বসেন।
ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ফিনল্যান্ড, ইউরোপীয় কমিশন ও ন্যাটোর নেতারাও ওয়াশিংটন বৈঠকে যোগ দেনÍযা ইউক্রেনের প্রতি দৃঢ় সমর্থনের প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে অগ্রগতি : ট্রম্প বলেন, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং পুতিনও এ বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। তবে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার ইউক্রেনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। তার ভাষায়, ‘ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ইউরোপীয় দেশগুলো দেবে, যুক্তরাষ্ট্রের সমন্বয়ে।’
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, বৈঠকটি ‘অচলাবস্থা ভাঙতে সহায়ক’ এবং খুব সফল হয়েছে। ফিনান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কিনতে ইউক্রেন রাজি হয়েছে, যার অর্থায়ন করবে ইউরোপÍবদলে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দেবে যুক্তরাষ্ট্র। জেলেনস্কি অবশ্য পরে ৯০ বিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজের কথা জানান।
উদ্বেগ ও সতর্কতা: তবে ইউরোপীয় নেতাদের উপস্থিতি এ আশঙ্কাও প্রকাশ করে যে, ট্রাম্প আবারও পুতিনের দিকে ঝুঁকতে পারেন। বৈঠকের আগে তিনি ইউক্রেনকে ক্রিমিয়া ছেড়ে দিতে ও ন্যাটো সদস্যপদ অর্জনের প্রচেষ্টা ত্যাগ করতে চাপ দেনÍযা পুতিনের মূল দাবি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সতর্ক করেছেন, শান্তি প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি না হলে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকস স্টুব বলেন, ‘পুতিনকে বিশ্বাস করা যায় না।’ এদিকে জার্মান চ্যান্সেলর মের্ৎস বলেন, আলোচনার বিনিময়ে ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল ছাড়তে হবেÍরাশিয়ার এমন দাবি যুক্তরাষ্ট্রকে ফ্লোরিডা ছাড়তে বাধ্য করার প্রস্তাবের মতোই অগ্রহণযোগ্য।
১০ দিনের মধ্যে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নির্ধারিত হবে: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ১০ দিনের মধ্যে কিয়েভের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা বিষয়ে অগ্রগতি হবে। গতকাল মঙ্গলবার জেলেনস্কি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমাদের অংশীদারেরা নিরাপত্তা নিশ্চয়তার বিষয়টি প্রকাশ করবেন এবং ধীরে ধীরে বিস্তারিত জানানো হবে। সবকিছু আগামী এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে নথিবদ্ধ করা হবে।’
আগের দিন গত সোমবার ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেছেন, যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনো চুক্তিতে ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ঠিক কীভাবে সহায়তা করা হবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট করেননি তিনি। জেলেনস্কি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে, তারা শুধু সমন্বয়ই করবে না, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশীদারও হবে। আমি মনে করি এটি বড় একটি অগ্রগতি।’ এদিকে ওয়াশিংটনে বৈঠকের পর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে খুব দ্রুত শান্তিচুক্তি হওয়ার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তবে জেলেনস্কি বলেছেন, ট্রাম্পের সঙ্গে গতকালের বৈঠক ছিল এখন পর্যন্ত তাঁর ‘সেরা বৈঠক’।
জেলেনস্কি আরও বলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে ‘যেকোনো ধাঁচে’ বৈঠকে বসতে প্রস্তুত। আর ভূখ- বিনিময়সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা হবে সরাসরি। তবে পুতিনের সঙ্গে তাঁর সম্ভাব্য বৈঠকের তারিখ এখনো নির্ধারণ হয়নি। জেলেনস্কি বলেন, ‘ভূখ-সংক্রান্ত বিষয়টি আমার আর পুতিনের মধ্যে থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করবে। এর মধ্যে থাকবে যুদ্ধবিমান, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অস্ত্র। তিনি বলেন, ‘কার্যত আমাদের এ–সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবিত প্যাকেজ আছে, যার অর্থমূল্য ৯০ বিলিয়ন ডলার।’ ‘আমাদের রপ্তানি চালু হলে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনীয় ড্রোন কিনবে। এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমাদের চুক্তি হয়েছে। এটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’, বলেন জেলেনস্কি।