যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান্তা ক্লারা শহরে নিজ অ্যাপার্টমেন্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ভারতীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য তেলেঙ্গানার মাহবুবনগর জেলার বাসিন্দা নিজামউদ্দিন কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসে স্থায়ী হয়েছিলেন।

বৃহস্পতিবার সান্তা ক্লারা পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে এ ঘটনা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই অ্যাপার্টমেন্টে এক রুমমেটের সঙ্গে থাকতেন নিজামউদ্দিন। গত ৩ সেপ্টেম্বর ৯১১ নম্বরে জরুরি ফোনকল পেয়ে ওই অ্যাপার্টমেন্টে যায় পুলিশ। সেখানে নিজামউদ্দিনকে রক্তাক্ত ছুরি হাতে দেখা যায়। নিজের রুমমেটকে হত্যার উদ্দেশে আঘাত করেছিলেন তিনি। নিজামউদ্দিনকে থামাতে এক পুলিশ কর্মকর্তা গুলি করেন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ তাকে মৃত ঘোষণা করে।” যে ব্যক্তিকে নিজাম ছুরিকাঘাত করেছিলেন, তাকেও গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি বেঁচে আছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

পুলিশের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সান্তা ক্লারা জেলা অ্যাটর্নির দপ্তর এবং পুলিশ যৌথভাবে ঘটনাটি তদন্ত করছে। তদন্তের পর এ বিষয়ে আরও তথ্য জানানো হবে। তবে নিজামের পরিবারের দাবি, তিনি ছুরিকাঘাত করেননি, বরং রুমমেটের হাতে ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছিলেন। আত্মরক্ষার্থে আহত অবস্থায় পুলিশকেও তিনিই ফোন করেছিলেন; আর পুলিশ গিয়ে তাকেই গুলি করেছে।

পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, স্বভাবে শান্ত ও ধার্মিক নিজাম ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স করার পর ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা ক্লারায় একটি টেক প্রতিষ্ঠানে চাকরি পেয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি বর্ণবাদী হয়রানি, বেতন প্রতারণা এবং অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্তের অভিযোগ করেছিলেন নিজাম।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম লিঙ্কড ইনের এক পোস্ট সামনে এনেছেন তার পরিবারের সদস্যরা। সেখানে তিনি লিখেছেন, “‘আমি বর্ণবাদী ঘৃণা, বৈষম্য, হয়রানি, নির্যাতন, মজুরি প্রতারণা, অন্যায় বরখাস্ত এবং ন্যায়বিচারে বাধার শিকার হয়েছি। যথেষ্ট হয়েছে, এই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদ/বর্ণবাদী মানসিকতার অবসান ঘটাতে হবে।’

নিহতের মরদেহ এখনো সান্তা ক্লারার একটি হাসপাতালে রাখা আছে। পরিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছে মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে।

মজলিস বচাও তেহরিক (এমবিটি)–এর মুখপাত্র আমজেদ উল্লাহ খান নিহতের বাবার সঙ্গে সাক্ষাতের পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় দূতাবাস ও সান ফ্রান্সিসকো কনস্যুলেটকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত ও মরদেহ ফিরিয়ে আনার আনুষ্ঠানিকতায় সহায়তার অনুরোধ জানিয়েছেন।