এইচ এম আকতার, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র থেকে : ইসলাম নারীদের সবচেয়ে বেশি অধিকার দিয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হয় আমরা ক্ষমতায় গেলে নারীদের ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখবো। এটি মোটেও ঠিক না। আমাদেরও মা বোন আছে। তিনি বলেন ইসলাম নারীদের সবচেয়ে বেশি অধিকার দিয়েছে। জামায়াত ক্ষমতায় গেলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের কর্মঘণ্টা কমানো হবে। রোববার স্থানীয় সময় সদ্ধ্যা ৬ টায় কোয়ালিশন অব বাংলাদেশী আমেরিকান এসোসিয়েশন (কোবা) আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনায় তিনি এসব কথা বলেন।
হিলসাইট সোসাইটির সভাপতি আব্দুল আজিজ ভূইয়ার সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট সমাজসেবক আবু আহমদ নুরুজ্জামান, ঢাকা-১৭ আসনের সাংসদ সদস্য প্রার্থী ডা. খালেদুজ্জামান, জামায়াতে ইসলামীর নেতা মাওলানা আব্দুর রহমান খান, ডা: জাকি আহমদ, মূফতি জামাল উদ্দিন, ডা,জুন্নুন চৌধুরী, প্রফেসর ড: শওকত আলী, আমেরিকান বাটার সমিতির সভাপতি রাজা মিয়া, বিশিষ্ট চিকিৎক ডা বদরুল ইসলাম, ডা. জাকিরুল ইসলাম, খেলাফত মজলিসের যুক্তরাষ্ট্রের সভাপতি লুৎফর রহমান কাশেমি, মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান প্রমুখ।
জুলাই আন্দোলনে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আন্দোলনে আহতরা এখনও বিছানায় কাতরাচ্ছে। চোখে গুলী করার কারণে অনেকে দুনিয়ার আলো দেখতে পায় না। আমরা সাধ্য মত আহত নিহতদের তাদের তালিকা করেছি। তাদের খোঁজ নিচ্ছি। এ তালিকা চারটি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে। তারা জান্নাতের মেহমান। আমরা যা করেছি তা যথেষ্ট নয়।
জামায়াতে ইসলামীর আমীর অভিযোগ করেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ অনেক শহিদের লাশ পেট্রোল দিয়ে জ¦ালিয়ে দিয়েছে। আহত-নিহতের সংখ্যা অনেক। একটি দলের জন্য এতোসব কিছু করা কঠিন। তারপরও আমরা চেষ্টা করেছি।
তিনি ফ্যাসিস্ট সময়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, আমরাও নির্যাতনে শিকার। আমাদের অফিসগুলো ওই সময়ে তালাবদ্ধ ছিল। বাসা থেকে নেতাদের গুম করা হয়েছে। এসময় তিনি ব্যারিস্টার আরমানের গুমের উদারণ টেনে বলেন, আমাদের নিষিদ্ধ করা হলো। আর আল্লাহ তাদের নিষিদ্ধ করে দিলেন। আল্লাহ সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী। আমরা কিন্তু ব্যক্তিগত কোন প্রতিশোধ নেইনি। কিন্তু কোন পরিবার যদি বিচার চায় তাহলে অবশ্য তাদের সহযোগিতা করবো। আমাদের বিজয় আমাদের প্রতিশোধ। ৫ আগস্টের বিজয়ই আমাদের প্রতিশোধ।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়ি ঘর দোকান ব্যবসা বাণিজ্য আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারিনি। এসময় তিনি মক্কা বিজয়ের উদাহরণ টেনে বলেন, সে রাসুল (সা.) তার পরম শক্রুকেও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু হত্যাকারীকে ক্ষমা করেননি। চারজনকে হত্যা করলেও ছয় পালিয়ে যায়। ইয়ামেন থেকে আবু জেহলের ছেলেকে মক্কা এনে ক্ষমা করে দেন। তিনি পরে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। এটি ইসলামের বিউটি (সৌন্দর্য)।
নির্বাচনের আগে জুলাই হত্যার বিচার দৃশ্যমান করার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা ন্যায় বিচার চাই। কেউ যাতে জুলুমের শিকার না হয়। তিনি বলেন, আমরা প্রবাসিদের ভোটের জন্য কাজ করেছি। আপনারা রেমিট্যান্সযোদ্ধা। আমার আহ্বান যাদেরকে আপনারা যোগ্য মনে হয়, তাদের ভোট দিবেন। তিনি বলেন, ক্ষমতায় গেলে ভুল ধরিয়ে দিবেন। সমালোচনা করবেন। এখন আপনারা দেশে যেতে পারবেন। বাবা মায়ের কবরের পাশে দাঁড়াতে পারবেন। আমরা চাই নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসেই হউক। ভোটাধিকার পেলেই সকল আধিকার পাবেন। ভোট যদি ৬০ শতাংশের উপরে হয় তাহলে আপনাদের আধিকার নিয়ে কথা বলতে পারবো। যারা প্রবাসের ভোটাধিকার নিয়ে বিরোধিতা করেছে তাদের জবাব দিবেন ভোট দিয়ে।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের দেশে ফেরাতে পরিবেশ তৈরি করবো। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভালো নেই। অনেকে বাধ্য হয়ে ছেলে সন্তান বিদেশে পড়ান। আমাদের মেধাবিরা দেশে যাচ্ছে না। প্রবাসিরা চাইলে অনেক কিছু দিতে পারেন। আমাদের অর্থনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে উইপোকা ঢুকেছে। তিনি আরও বলেন আমাদের ব্যাপারে আপপ্রচার করা হয় আমরা নাকি মেয়ের তালা দিয়ে রাখবো। এটি ভুল আমাদের মা বোন আছে। রাসুল সা: বিবিদের যুদ্ধেও নিয়েছেন। ইসলামই নারীকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। আমরা ক্ষমতায় গেলে নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, অনেকে বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে অন্য ধর্মের লোকদের কি হবে। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, তাদের কি আল্লাহ রিজিক দেন না। তাহলে আমরা কেন তাদের প্রতি অন্যায় করবো। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবো যদি আমরা ক্ষমতায় যাই। আমরা যদি ন্যায়ের পথে থাকি তাহলে আমাদের সমর্থন দিবেন কিনা এ ব্যাপারে তিনি সমর্থন নেন।