নিউ ইয়র্ক পোস্ট: যুক্তরাষ্ট্রে প্রজন্মভিত্তিক জনমত জরিপে চমকপ্রদ বিভাজন দেখা গেছে। হার্ভার্ড/হ্যারিস পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যায়, ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সি ভোটারদের ৬০ শতাংশ হামাসকে সমর্থন করছে ইসরাইলের বিপরীতে। অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জনমতের ৭৪ শতাংশ এখনও ইসরাইলের পক্ষেই রয়েছে।
প্রজন্মগত বিভাজন: অন্য সব বয়সি ভোটারদের মধ্যেও ইসরাইলের প্রতি ‘উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি সমর্থন’ পাওয়া গেছে। তবে তরুণ ভোটারদের মধ্যে ইসরাইলবিরোধী মনোভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও সামগ্রিকভাবে ৫১ শতাংশ ভোটার ইসরাইলের যুদ্ধ পরিচালনায় অসন্তুষ্ট, কিন্তু আরও বড় অংশ ৭৭ শতাংশ হামাসের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে।
গাজায় দুর্ভিক্ষ প্রসঙ্গ: জরিপে ৬৯ শতাংশ মার্কিনি স্বীকার করেছেন যে গাজায় দুর্ভিক্ষ চলছে। এর মধ্যে ডেমোক্র্যাট ভোটারদের ৭৮ শতাংশ, রিপাবলিকানদের ৬৫ শতাংশ এবং স্বতন্ত্র ভোটারদের ৬৫ শতাংশ দুর্ভিক্ষের বাস্তবতা মেনে নিয়েছেন। রিপাবলিকানদের অধিকাংশ (৭৪%) হামাসকে দায়ী করেছেন। স্বতন্ত্র ভোটারদের মধ্যে ৬০ শতাংশ হামাসকে দায়ী করেছেন। আর ডেমোক্র্যাটরা সমানভাবে বিভক্তÍ৫০ শতাংশ হামাসকে এবং বাকিরা ইসরাইলকে দায়ী করেছেন। এছাড়া তরুণ ভোটারদের বেশিরভাগই ইসরাইলকেই দায়ী করেছেন।
গণহত্যা প্রসঙ্গ ও অন্যান্য ফলাফল: গাজায় ইসরাইল ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে কি না, এ বিষয়ে ভোটাররা সমানভাবে বিভক্ত (৫০-৫০)। ইসরাইলবিরোধী সমালোচনা মূলত মানবাধিকার রক্ষার কারণে কি না নাকি ইহুদিবিদ্বেষ থেকে প্রভাবিত-এ নিয়েও জনমত প্রায় সমানভাবে বিভক্ত (৫১% বনাম ৪৯%)। ৫৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, ইসরাইল কেবল তখনই হামাসের হাতে আটক ইসরাইলিদের মুক্তির জন্য সমঝোতায় যাবে, যদি হামাস পুরোপুরি গাজা ত্যাগ করে।
জরিপের পরিসংখ্যান: এই জরিপটি ২০২১ আগস্ট ২০২৫ তারিখে ২ হাজার ২৫ জন নিবন্ধিত ভোটারকে নিয়ে পরিচালিত হয়। ত্রুটির সীমা ছিল ২.২ শতাংশ।বিস্তৃত প্রবণতা হার্ভার্ড-হ্যারিস জরিপের ফলাফল মার্কিন জনমতের পরিবর্তনের ধারারই অংশ। জুলাই ২০২৫ সালের এক গ্যালাপ জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ বছরের নিচের মাত্র ৯ শতাংশ মার্কিনি ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন। কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক জরিপে উঠে এসেছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি মার্কিনিদের সহানুভূতি সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ তরুণ প্রজন্মের তথ্যপ্রাপ্তির ধরন। যেখানে প্রবীণরা প্রচলিত গণমাধ্যমের ওপর নির্ভর করেন, সেখানে জেনারেশন জেড মূলত টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সংকট সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছে। ফলে তারা ফিলিস্তিনের ইস্যুটিকে ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, বরং ন্যায়বিচার ও মানবিক সংকটের ইস্যু হিসেবে দেখছে।