এএফপি,রয়টার্স: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তিনি ২০২৮ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন না। তবে তিনি যে তৃতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন না, সে বিষয়ে চূড়ান্তভাবে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। এর মাধ্যমে তিনি ক্ষমতায় থাকার সময়সীমা বৃদ্ধির জল্পনাকে জিইয়ে রাখলেন। এর আগেও ট্রাম্প সংবিধানে নির্ধারিত দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। একবার এক সমাবেশে এ নিয়ে রসিকতা করেছিলেন। তিনি সমর্থকদের ‘ট্রাম্প ২০২৮’ লেখা টুপি দেখিয়ে কৌতূহল বাড়িয়েছিলেন। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ কিছু সহযোগী তাঁর এসব ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তাকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরা নিশ্চিত করতে আইনি বা রাজনৈতিক পথ খোঁজার কথা বলছেন। অবশ্য বেশির ভাগ সংবিধানবিশেষজ্ঞ এমন সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। মার্কিন সংবিধানের ২২তম সংশোধনী অনুযায়ী, কেউ তৃতীয়বারের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারবেন না।

ট্রাম্পের কিছু সমর্থক পরামর্শ দিয়েছেন, এই নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যাওয়ার একটি উপায় হতে পারে ট্রাম্প ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়বেন। সে ক্ষেত্রে অন্য কোনো প্রার্থী প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করবেন। বিজয়ী হলে পরে ইস্তফা দেবেন, যার ফলে ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্টের পদে বসতে পারবেন। গত সোমবার মালয়েশিয়া থেকে টোকিও যাওয়ার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী আমার সেটা করার সুযোগ থাকবে।’ তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সঙ্গে সঙ্গে এও যোগ করেন, ‘আমি এটা করব না। আমি মনে করি এটা “খুব বেশি চালাকি”। হ্যাঁ, আমি এটাকে বাতিল করব। কারণ, এটা খুব বেশি চালাকি। আমার মনে হয় মানুষ এটা পছন্দ করবে না। এটা খুব চালাকি। এটা ঠিক হবে না।’ তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন বলেই তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদেও লড়তে পারবেন না। মার্কিন সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্টের পদের জন্য অযোগ্য, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের পদের জন্যও যোগ্য হবেন না।’

আমার জনসমর্থন এখন সবচেয়ে বেশি

তৃতীয় মেয়াদের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এটা করতে চাই। আমার জনসমর্থন এখন সবচেয়ে বেশি।’ একজন সাংবাদিক যখন ট্রাম্পকে চাপ দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তবে কি তিনি তবে তৃতীয় মেয়াদের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি কি এটা উড়িয়ে দিচ্ছি না? অর্থাৎ, আপনাদেরকেই সেটা বলতে হবে।’

আরেকবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বৈধতা নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামতে তিনি প্রস্তুত কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি সত্যি বলতে, এ নিয়ে ভাবিনি।’ ৭৯ বছর বয়সী ট্রাম্প ২০২৮ সালে আরেক মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে যদি লড়াইয়ে নামেন, তখন তাঁর বয়স হবে ৮২ বছর। সে ক্ষেত্রে তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রেসিডেন্ট। এই বয়স সত্ত্বেও ট্রাম্প কঠোরভাবে সরকারি সময়সূচি বজায় রেখেছেন, এমনকি দীর্ঘ সফরের সময়েও সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেনÍযা প্রেসিডেন্টের দৈনন্দিন দায়িত্ব পালনে তাঁর অদম্য শক্তি ও সক্রিয় অংশগ্রহণকে তুলে ধরে।

২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প বারবার সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বেশি বয়স নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি প্রায়শই তাঁর ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বীকে দেশের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য খুব বয়স্ক বলে প্রমাণ করতে বাইডেনের বাচনভঙ্গি বা শারীরিক খুঁটিনাটি ত্রুটিকে তুলে ধরেছেন। ট্রাম্প গত সোমবার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওকে ‘মহান মানুষ’ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই দুজন ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দলীয় প্রাইমারিতে লড়তে পারেন। ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয়, তাঁরা যদি কখনো একটি দল গঠন করেন, তবে তাঁদের থামানো যাবে না। আমি সত্যিই এটা বিশ্বাস করি।’ বিমানের কেবিনে ট্রাম্পের পেছনে দাঁড়ানো রুবিও প্রেসিডেন্টের মুখে তাঁর ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সাফল্যের এমন কথা শুনে মাথা নিচু করে লাজুক হাসি দেন। ট্রাম্প যখন ভ্যান্সের কথা বললেন, তখন তিনি সম্মতিসূচক মাথা নাড়েন।

ট্রাম্পের তৃতীয় মেয়াদ নিয়ে এ ধরনের মন্তব্য রিপাবলিকান দলের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। যদিও ট্রাম্পের কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগী তাঁকে প্রেসিডেন্ট পদে আবার লড়াইয়ে সমর্থন করছেন। তবে রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের মধ্যে এরই মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। গত সপ্তাহে দ্য ইকোনমিস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প-সমর্থক পডকাস্টার স্টিভ ব্যানন বলেন, ২২তম সংশোধনী এড়িয়ে যাওয়ার একটি পরিকল্পনা রয়েছে এবং তিনি এর বিকাশের সঙ্গে জড়িত।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হোয়াইট হাউসের প্রধান কৌশলবিদ ছিলেন এই ব্যানন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্পই ২০২৮ সালে প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন এবং মানুষের উচিত হবে সেটা মেনে নেওয়া। সঠিক সময়ে, আমরা পরিকল্পনাটি প্রকাশ করব। একটি পরিকল্পনা আছে।’ ব্যানন আরও বলেন, ট্রাম্প হলেন ‘ঈশ্বরের ইচ্ছার একটি হাতিয়ার’। নিজেকে নিয়ে এমন কথা ট্রাম্প নিজেও মাঝেমধ্যে বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রকে জাপানের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী’ মিত্র বললেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে জাপানের সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র বলে উল্লেখ করেছেন। গতকাল মঙ্গলবার জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। এদিন দুর্লভ খনিজ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। চলতি এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়া থেকে গতকাল সোমবার ট্রাম্প জাপানের টোকিওতে পৌঁছান। গতকাল টোকিওতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান তাকাইচি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বৈঠক করেন তিনি।

বৈঠকে তাকাইচিকে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র। আপনার সঙ্গে দেখা হওয়াটা অত্যন্ত সম্মানের। বিশেষ করে এমন সময়, যখন কিনা আমি মনে করি, আপনি অন্যতম সেরা প্রধানমন্ত্রী হবেন।’ তাকাইচিও দুই দেশের সম্পর্কের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতার ক্ষেত্রে একটি নতুন সোনালি যুগ দেখতে চাই, যেখানে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ হবে।’ জাপানের পর দক্ষিণ কোরিয়ায় যাবেন ট্রাম্প। সেখানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হবে। বৈঠক বিশ্বের দুই প্রধান অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধকে কিছুটা প্রশমিত করতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক আরোপকে কেন্দ্র করে ওই বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়। এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়া থেকে গতকাল সোমবার ট্রাম্প জাপানের টোকিওতে পৌঁছান। আজ টোকিওতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান তাকাইচি। জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক দিনের মাথায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রথম মুখোমুখি বৈঠক করেন তিনি।