ফক্স নিউজ, রয়টার্স, আল-জাজিরা, রয়টার্স: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের বিষয়ে শিগগিরই নিজেদের অবস্থান জানাবেন তাঁরা। হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য মোহাম্মদ নাজ্জাল গত বৃহস্পতিবার অ্যারাবিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন। নাজ্জাল বলেন, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের প্রতিনিধি হিসেবে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বার্থে তাদের মতামত প্রকাশ করার অধিকার রাখে হামাস। হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ চলতি সপ্তাহের শুরুতে একটি ২০ দফাবিশিষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কাছে থাকা ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে সরে যাওয়া, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন। গত মঙ্গলবার এ পরিকল্পনার ব্যাপারে সম্মত হতে হামাসকে তিন-চার দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন ট্রাম্প। ফিলিস্তিনিরা দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তবে ফিলিস্তিনের অনেকে মনে করছেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা ইসরায়েলকেই বেশি সুবিধা দেবে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এর তিন গুণও হতে পারে। আগের আলোচনাগুলোর সময় হামাস দাবি করেছিল, ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরিভাবে গাজা থেকে সরে যেতে হবে। তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দাবি করেছিল, যেন গাজা উপত্যকা, বিশেষ করে গাজার উত্তরাংশ থেকে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলো তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারে। সেখানে জোরেশোরে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ চলতি সপ্তাহের শুরুতে একটি ২০ দফাবিশিষ্ট পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এতে গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর, হামাসের কাছে থাকা জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কাছে থাকা ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের ধাপে ধাপে সরে যাওয়া, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে একটি অস্থায়ী সরকার গঠন।
মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি বলেন, কাতার ও তুরস্কের সঙ্গে মিলে তাঁর দেশের সরকার হামাসকে ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছেন। গত প্যারিসের ফ্রেঞ্চ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনসে বক্তব্য দিতে গিয়ে বদর আবদেলাত্তি আরও বলেন, এটা পরিষ্কার যে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে এবং ইসরায়েলকে গাজায় হামলা চালানোর মতো কোনো অজুহাত তৈরির সুযোগ দেওয়া উচিত হবে না।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা এর তিন গুণও হতে পারে। আবদেলাত্তি বলেন, ‘এটা প্রতিশোধকে ছাপিয়ে গেছে। এটা স্পষ্টত জাতিগত নিধন। যথেষ্ট হয়েছে।’ দুই গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিসর মনে করে, ট্রাম্পের পরিকল্পনার কিছু দিক নিয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন।
কাতার ও তুরস্কের সঙ্গে সমন্বয় করে হামাসকে পরিকল্পনাটির বিষয়ে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছে কায়রো। এ ব্যাপারে আবদেলাত্তি বলেন, ‘হামাস যদি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে বোঝাই যায় পরিস্থিতি অনেক কঠিন হয়ে যাবে। আর অবশ্যই আরও উত্তেজনা বাড়বে। তাই আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি, যাতে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নযোগ্য হয় এবং হামাসের কাছ থেকে সম্মতি পাওয়া যায়।’ আবদেলাত্তি আরও বলেন, তিনি গাজার জন্য ট্রাম্পের প্রস্তাবকে মোটামুটি সমর্থন করেন, তবে এ বিষয়ে আরও আলোচনা প্রয়োজন।
রেডলাইন দেবেন : গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য ইসরায়েল সমর্থিত সর্বশেষ প্রস্তাবে অবস্থান জানাতে হামাসকে সময় বেধে দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশ্য, এ ‘রেডলাইন’- নতুন বা পূর্বঘোষিত সময় অনুযায়ী কার্যকর হবে, হোয়াইট হাউজের তরফ থেকে তা স্পষ্ট করা হয়নি। আমেরিকা’স নিউজরুম অনুষ্ঠানে, প্রস্তাব হামাস গ্রহণ করেছি কি করেনি, তা কখন বিবেচনা করা হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিয়াভিট বলেন, এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকেই এই রেডলাইন টানা হবে। আমি নিশ্চিত তিনি তা করবেন। প্রেসিডেন্ট ও তার দল ২০ দফার একটি বিস্তৃত ও বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করেছেন, যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি হামাসকে ২০ দফা প্রস্তাব গ্রহণের জন্য তিন থেকে চার দিন সময় দেবেন। ওই প্রস্তাবে হামাসকে নিরস্ত্র হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে যা এর আগে সংগঠনটি প্রত্যাখ্যান করেছে। হামাস বর্তমানে প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে বলে বুধবার সংগঠনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে লিয়াভিট আরও বলেন, এটি একটি গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা। আমাদের আশা এবং প্রত্যাশা, হামাস এই পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। সর্বশেষ প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করা হবে। এছাড়া, হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্ত করে ইসরায়েলে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময় করা হবে। প্রস্তাবে আরও রয়েছে, ধাপে ধাপে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে ইসরায়েল, হামাসকে নিরস্ত্র করা হবে এবং একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার নেতৃত্বে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গঠিত হবে। গত দুই বছরে প্রস্তাবিত বহু যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে এই ২০ দফার বক্তব্যগুলো বিভিন্ন সময় অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে সেসব প্রস্তাব বিভিন্ন পর্যায়ে ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই কখনও গ্রহণ করেছে, আবার পরবর্তীতে প্রত্যাখ্যানও করেছে।