রয়টার্স, বিবিসি: যুক্তরাষ্ট্রে বাজেট অনুমোদন নিয়ে অচলাবস্থার জেরে শুরু হয়েছে ‘শাটডাউন’। সিনেটে ব্যয়বাজেট বিল পাসে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় ছয় বছর পর কোনও প্রশাসন অনির্দিষ্টকালের জন্য অচল হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে পড়েছে। ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় মাঝরাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন শুরু হয়েছে। সিনেটে শেষ মুহূর্তে অর্থায়ন বিল পাস না হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলো। এতে বহু সরকারি কর্মচারীকে বেতন ছাড়া ছুটিতে পাঠানো হতে পারে এবং বহু সরকারি কর্মসূচি ও সেবা কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত থাকবে। উল্লেখ্য, কোনও কারণে কংগ্রেস যদি ব্যয় বিল পাস করতে ব্যর্থ হয় বা প্রেসিডেন্ট সেই বিলে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন, তখনই ঘটে ‘শাটডাউন’। এ অবস্থায় বেশিরভাগ ফেডারেল সংস্থা খরচ চালাতে পারে না এবং অপ্রয়োজনীয় কার্যক্রম থেমে যায়। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত সিনেটে ব্যয়বাজেট প্রস্তাব গৃহীত না হওয়ায় দেশজুড়ে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এর আগে, ২০১৮-১৯ সালে মার্কিন সরকার শাটডাউনে গিয়েছিল। সাধারণত দলীয় দ্বন্দ্বই এমন অচলাবস্থার পেছনের মূল কারণ হয়ে থাকে। ২০১৮–১৯ সালে ৩৫ দিনের শাটডাউনে পড়েছিল মার্কিন সরকার, যা দেশটির ইতিহাসে দীর্ঘতম। তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সীমান্ত প্রাচীর নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দে জোর দিচ্ছিলেন। সেসময় এর প্রভাব পড়েছিল লাখো সরকারি কর্মীর ওপর। এসব কর্মীর অনেকে বেতন ছাড়াই সেসময় কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন, আবার অনেকে সাময়িক ছুটিতেও চলে গিয়েছিলেন। সরকারি সেবার সঙ্গে জড়িত ঠিকাদার ও ব্যবসাগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এছাড়া পাসপোর্ট, ঋণ, অনুদান কিংবা জাতীয় উদ্যান বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনায় সাধারণ মানুষও ভোগান্তিতে পড়েন।

কেমন প্রভাব পড়বে? যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিচালনার তহবিল ছাড়ের জন্য কংগ্রেস তথা পার্লামেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। তবে তহবিল ছাড়ের নতুন একটি বিল পাস না হওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য শাটডাউন তথা সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে বেশ কিছু সরকারি দফতরের সেবাদান বন্ধ হয়ে গেছে। এসব দফতরের কর্মীদের অবৈতনিক ছুটিতে থাকতে হবে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ভোটাভুটিতে প্রশাসনের তহবিল সংক্রান্ত বিল অনুমোদন করতে পারেনি মার্কিন সিনেট। ফলে এদিন মধ্যরাত তথা বুধবার (১ অক্টোবর) প্রথম প্রহর থেকেই সরকারি কার্যক্রম বন্ধ হতে শুরু করে। তবে এটা কতদিন চলবে তা এখনও জানা যায়নি। সাত বছর আগেও একবার এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সেই শাটডাউন ছিল ৩৫ দিন যা এ যাবৎকালেল সবচেয়ে দীর্ঘতম।

শাটডাউন’ কী : প্রতি অর্থবছরে সরকারের বিভিন্ন দফতরের কাজ চালানোর জন্য মার্কিন কংগ্রেসকে অর্থ বরাদ্দ করতে হয়। অর্থবছর শুরু হয় ১ অক্টোবর থেকে। যদি এই সময়ের মধ্যে সিনেট সদস্যেরা একমত হয়ে ব্যয় বরাদ্দ চূড়ান্ত করতে না পারেন, তবে বিভিন্ন দফতরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। যতদিন পর্যন্ত কংগ্রেস থেকে অর্থ বরাদ্দ না করা হচ্ছে, ততদিন দফতরগুলো বন্ধ থাকবে। ১০০ সদস্যের মার্কিন সিনেটে রিপাবলিকানদের আসন সংখ্যা ৫৩। যেকোনো বিল পাশ করাতে অন্তত ৬০ জন সদস্যের সমর্থন তাদের প্রয়োজন হয়। তবে মঙ্গলবার সরকারি তহবিল সংক্রান্ত বিলে তা হয়নি। সেই কারণে সিনেটের অনুমোদনও মেলেনি। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ব্যয় বাজেট গঠনকারী ১২টি বিলের কোনোটাই এখনও আইনসভার দুই কক্ষে পাশ হয়নি।

কোন কোন দফর বন্ধ, কী কী খোলা: ‘শাটডাউন’-এ মার্কিন সরকারের অধিকাংশ দফতরের কাজই বন্ধ হয়ে যাবে। চালু থাকবে কেবল আপৎকালীন পরিষেবাগুলো। কোন কোন দফতর চালু থাকবে, কতজন কর্মীকে নিয়ে চলবে, তা আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা হয়। যারা ‘শাটডাউন’ চলাকালীনও কাজ করবেন, তাদের অধিকাংশই বেতন পাবেন না। ‘শাটডাউন’ শেষ হলে আবার তাদের বেতন দেয়া হবে।

‘শাটডাউন’-এর প্রভাব পড়বে খাদ্য দফতরে। জরুরি পরিষেবা চালু থাকলেও অনেক কাজই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কোনো কোনো কাজ পিছিয়ে যেতে পারে বা সাময়িকভাবে বন্ধ হতে পারে। মার্কিন শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, অধিকাংশ কর্মীকেই আপাতত বসিয়ে রাখা হবে। হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ চালু থাকবে। এই দফতরের কর্মীদের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। শুল্ক ও সীমান্তরক্ষা দফতরের কর্মীদেরও কাজ করতে হবে। অভিবাসন, পরিবহণ নিরাপত্তা, সিক্রেট সার্ভিস, নাগরিকত্ব ও অভিবাসন পরিষেবার কাজ চালু থাকবে। প্রতিরক্ষা দফতরে কিছু বিভাগ খোলা রাখা হবে। তার মধ্যে দক্ষিণ সীমান্ত, পশ্চিম এশিয়া এবং গোল্ডেন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অগ্রাধিকার পাবে বলে দফতর থেকে জানানো হয়েছে। বয়স্ক নাগরিক, প্রতিবন্ধী এবং অন্যান্যদের মার্কিন সরকারের তরফ থেকে যে সামাজিক সুরক্ষা ভাতা দেয়া হয়, তা বন্ধ হচ্ছে না। শ্রম বিভাগ জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রক্রিয়াকরণের জন্য তহবিল রয়েছে, ততক্ষণ বেকারদের সুযোগ-সুবিধাগুলো বন্ধ হবে না। বিনা বেতনে কাজ করতে হবে এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারীদের।

ট্রাম্প কী বলছেন: কতদিন এই ‘শাটডাউন’ চলতে পারে, তা স্পষ্ট নয়। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের প্রথম দফায় মার্কিন প্রশাসন ৩৫ দিনের জন্য অচল হয়ে পড়েছিল। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সেটাই সবচেয়ে বড় ‘শাটডাউন’। এবার তহবিল সংক্রান্ত আলোচনায় অগ্রগতি না-হওয়ায় ডেমোক্র্যাটদের দোষারোপ করছেন ট্রাম্প। তিনি এরই মধ্যে গণছাঁটাইয়ের হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, ‘শাটডাউনের অনেক ভালো দিকও রয়েছে। আমরা যেগুলো চাই না, তেমন অনেক জিনিস ফেলে দিতে পারি। অনেককে ছাঁটাই করা হবে। তারা প্রত্যেকেই হবেন ডেমোক্র্যাট।