২০ মার্চ, রয়টার্স, দ্য টাইম, বিবিসি : ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র নিতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। ওভাল অফিসের সেই ঐতিহাসিক বিতর্কের পর বুধবার প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি ফোনে কথা বলেন। যদিও এর আগে দুই দেশের প্রতিনিধিরা সৌদি আরবে বৈঠক করেছে এবং ৩০ দিনের একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করেছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, বুধবারের ফোনালাপে ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য মালিকানা নিয়েও কথা হয়েছে। তবে জেলেনস্কি পরে পরিষ্কার করে বলেন, আলোচনাটি মূলত রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্টকে ঘিরেই ছিল। পরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, ট্রাম্প ইউক্রেনকে আরও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে ইউরোপ থেকে, সংগ্রহে সহায়তা করতে রাজি হয়েছেন। দুই নেতা যুদ্ধের পরিস্থিতি অনুযায়ী তাদের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন।

তার বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহ ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এসব প্ল্যান্ট পরিচালনা ও ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। রুবিও যোগ করেন, এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানা থাকলে সেগুলো আরও সুরক্ষিত হবে এবং ইউক্রেনের জ্বালানি খাতেও সহায়ক হবে। জেলেনস্কি পরে বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল ঠিকই, তবে তা মূলত জাপোরিঝিয়া প্ল্যান্টকে কেন্দ্র করেই। এই আলোচনা জেলেনস্কির জন্য কিছুটা স্বস্তির, কারণ তিনি পরে সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্পের সঙ্গে তার কথা ‘ইতিবাচক’, ‘খোলামেলা’ এবং ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে।

সৌদি আরবে হতে যাচ্ছে মার্কিন ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদলের বৈঠক: ইউক্রেনে আংশিক যুদ্ধবিরতির কারিগরি বিষয় নিয়ে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ওয়াশিংটন ও কিয়েভের প্রতিনিধিদল সৌদি আরবে বৈঠক করতে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলাপের পর এই বৈঠকের কথা জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ তিনি বলেছেন, আংশিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ও আওতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরি দিক সমাধানে আমাদের প্রতিনিধিদলকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কিন ও ইউক্রেনীয় দল দ্রুতই সৌদি আরবে এক বৈঠকের আয়োজন করতে যাচ্ছেন। এই পোস্ট দেয়ার আগে ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ হয়েছে জেলেনস্কির। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার যথেষ্ট ইতিবাচক, গঠনমূলক ও স্পষ্ট আলোচনা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। রুশ জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের নিশ্চয়তা দিতে কিয়েভ প্রস্তুত আছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। মার্কিন প্রশাসনের প্রস্তাব অনুযায়ী নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি মেনে নিতেও অঙ্গীকারবদ্ধ তিনি।

তিনি বলেছেন, যুদ্ধ পুরোপুরি থামিয়ে দিতে চাইলে জ্বালানি এবং অন্যান্য বেসামরিক অবকাঠামোতে আগে হামলা বন্ধ করা প্রয়োজন। এতে আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে এবং এই পদক্ষেপ কার্যকর করতে ইউক্রেন পুরোপুরি প্রস্তুত। গত মঙ্গলবার রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন ট্রাম্প। ওই বৈঠকে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের বিষয়ে সম্মত হন পুতিন। তবে বুধবার ইউক্রেনের রেল অবকাঠামোতে হামলার তথ্য জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেনের আকাশ নিরাপত্তা শক্তিশালী করার বিষয়েও আলাপ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর সক্ষমতা প্রায় সম্পূর্ণই মিত্রদের সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেছেন, আমাদের মধ্যে কুরস্ক অঞ্চলের বর্তমান অবস্থা, যুদ্ধবন্দিদের মুক্তি এবং অপহরণকৃত বাচ্চাদের ফিরিয়ে আনার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।