আল-জাজিরা রয়টার্স,এনডিটিভি : ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যিক সম্পর্কের কড়া সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠককে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন তিনি। নাভারো বলেন, মোদিকে শি জিনপিং ও পুতিনের সঙ্গে হাত মেলাতে দেখা সত্যিই লজ্জার। আমি বুঝতে পারছি না তিনি কী ভাবছেন। আমরা আশা করি তিনি বুঝবেন যে তাকে আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে, রাশিয়ার সঙ্গে নয়।

প্রধানমন্ত্রী মোদির চীন সফর, এসসিও সম্মেলনে যোগদান এবং পুতিন ও শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের একদিন পর-এমন মন্তব্য করলেন নাভারো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভারতের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পর থেকে হোয়াইট হাউজের এই বাণিজ্য উপদেষ্টা নিয়মিত নয়াদিল্লির রাশিয়ার সঙ্গে অপরিশোধিত তেল বাণিজ্যের সমালোচনা করে আসছেন। তার অভিযোগ, এই রাজস্বই ইউক্রেনে পুতিনের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সহায়তা করছে। ট্রাম্প গত বছর দাবি করেছিলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ঘন্টাখানেকেই শেষ করতে পারবেন, কিন্তু এখনও তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। এর আগে এক মন্তব্যে নাভারো ভারতকে ‘শুল্কের মহারাজা’ আখ্যা দেন। তিনি দাবি করেন, প্রধান অর্থনীতিগুলোর মধ্যে ভারতের শুল্ক সবচেয়ে বেশি এবং নয়াদিল্লি এটি স্বীকার করতেও অস্বীকার করে। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে দুই দিক থেকে সমস্যা আছেৃ২৫ শতাংশ প্রতিশোধমূলক অন্যায্য বাণিজ্যের কারণে এবং আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে- সেই কারণে।

নাভারো ভারতকে ‘ক্রেমলিনের লন্ড্রোম্যাট’ বলেও অভিহিত করেন। তার অভিযোগ, ভারতীয় রিফাইনারিগুলো রুশ তেল সস্তায় কিনে, তা প্রক্রিয়াজাত করে এবং প্রিমিয়াম দামে রপ্তানি করছে। নাভারো আরও দাবি করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ভারতের রপ্তানির ওপর শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ ন্যায্য এবং নয়াদিল্লির রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বৈশ্বিক স্থিতিশীলতাকে দুর্বল করছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে তাঁর দেশের সম্পর্ককে ‘খুব একপক্ষীয়’ বলে সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘নয়াদিল্লি মার্কিন পণ্যের শুল্ক শূন্যে নামানোর প্রস্তাব দিয়েছে।’ ডোনাল্ড ট্রাম্প গত সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে পক্ষপাতদুষ্ট অর্থনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে ভারতের ওই সমালোচনা করেন। এ সময় ভারতের ক্রমবর্ধমান রুশ অস্ত্র ও তেল কেনার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর এমন বক্তব্যে দুই দেশের (যুক্তরাষ্ট্র ভারত) সম্পর্ক আরও খারাপ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘কত অল্প মানুষই না বোঝে যে আমরা ভারতের সঙ্গে খুব কম বাণিজ্য করি, কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে প্রচুর বাণিজ্য করে। অন্য কথায়, তারা আমাদের কাছে বিশাল পরিমাণে পণ্য বিক্রি করে, আর আমরা তাদের কাছে খুব কম। আমরা তাদের সবচেয়ে বড় গ্রাহক, কিন্তু আমরা তাদের কাছে খুব কম বিক্রি করি।’ মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিল্লি এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ট্রাম্প প্রায়ই অন্য দেশের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে তার উচ্চ শুল্কের হুমকির মধ্যে বড় রকমের অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে চায়। ট্রাম্প আরও লিখেছেন, ‘তারা এখন শুল্ক (মার্কিন পণ্যে) শূন্যে নামানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু অনেকটা সময় চলে গেছে। এটা তারা অনেক বছর আগেই করতে পারত।’ তারা এখন শুল্ক (মার্কিন পণ্যে) শূন্যে নামানোর প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু অনেকটা সময় চলে গেছে। এটা তারা অনেক বছর আগেই করতে পারত। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নয়াদিল্লি এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ট্রাম্প প্রায়ই অন্য দেশের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন দাবি করেছেন যে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে তার উচ্চ শুল্কের হুমকির মধ্যে বড় রকমের অর্থনৈতিক সুবিধা দিতে চায়। ট্রুথ সোশ্যালে এ পোস্ট হলো ভারতের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সর্বশেষ সমালোচনা। এর আগে ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে গিয়ে ভারতের প্রতি ওই বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন তিনি। ট্রুথ সোশ্যালে এ পোস্ট হলো ভারতের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের সর্বশেষ সমালোচনা। এর আগে ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের বিরুদ্ধে এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে গিয়ে ভারতের প্রতি ওই বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ (পাল্টা শুল্ক ২৫ শতাংশ ও শাস্তিমূলক ২৫ শতাংশ) পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এটি বিভিন্ন দেশের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপ করা শুল্কের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। এ ছাড়া ট্রাম্প ভারতকে রাশিয়ার তেল কেনার জন্যও সমালোচনা করেছেন।

ট্রাম্প প্রায়ই বিদেশি নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের আরও বেশি পণ্য কেনার আহ্বান জানাচ্ছেন, বিশেষ করে জ্বালানি ও অস্ত্র উৎপাদনের মতো খাত থেকে। ট্রাম্প বলেছেন, ‘ভারত তার তেল ও সামরিক পণ্যের বেশির ভাগই রাশিয়ার কাছ থেকে কেনে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে খুব কম।’ নয়াদিল্লি অন্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনো নত হবে না ও দুর্বলতা দেখাবে না। কিন্তু ভারত ট্রাম্পের এ উচ্চ শুল্কের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। সম্প্রতি ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, ‘নয়াদিল্লি অন্য দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কখনো নত হবে না ও দুর্বলতা দেখাবে না।’

উচ্চ শুল্ক আরোপের মতো ট্রাম্পের আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ অন্যান্য দেশকে নিজেদের মধ্যে আরও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে। কেননা, ক্রমেই অননুমেয় হতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প শক্তি খুঁজছে তারা। ট্রাম্পের মতে, অন্য দেশের সঙ্গে তাঁর দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক একপক্ষীয় ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যায্য। ইতিমধ্যে অ-পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করার লক্ষ্যে গত রোববার ও গতকাল চীনে অনুষ্ঠিত হলো সাংহাই শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে বলেছেন, তিনি বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।