রয়টার্স : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে আকস্মিক পরিবর্তনের পর বাজারে অস্থিরতা এখনও কাটেনি। যদিও ২৪ ঘণ্টার কম সময় কার্যকর থাকার পর শুল্ক বাতিল করেছেন ট্রাম্প, তথাপি বিশ্ব বাণিজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে কীভাবে সব সামলে নেওয়া হবে, তা বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছেন বৈশ্বিক নেতারা। ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য শুল্ক স্থগিত করায় দেশগুলো ক্ষণিকের স্বস্তি পেলেও তা উবে যেতে দেরি হয় না। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের পরস্পরের ওপর লাগামছাড়া শুল্ক আরোপ নিয়ে বিশ্ব এখন বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কায় রয়েছে। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বৃহস্পতিবার বলেছেন, ৭৫টিরও বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় আগ্রহী। শুল্ক দিয়ে নাস্তানাবুদ করে রাখলেও, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের সঙ্গে সমঝোতার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ট্রাম্প। অথচ মার্কিন শুল্ক নীতির নাটকে বর্তমান অনিশ্চিত বাজারে এখনও চলছে ব্যাপক উত্থান-পতন। এর আগে, কোভিড মহামারির সময় এতটা অস্থিতিশীল বাজার দেখেছিল বিশ্ব।
গত বৃহস্পতিবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক সাড়ে তিন শতাংশ হ্রাস পায়। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে এই সূচক সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। সেখান থেকে প্রায় ১৫ শতাংশ অধঃপতন হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিটে পতনের ধাক্কা এশিয়ার বাজারেও টের পাওয়া যায়। জাপানের নিক্কেই সূচক চার শতাংশ কমে যায়, যদিও তাইওয়ান ও হংকংয়ের বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। ইউরোপের বাজারও কিছুটা ইতিবাচকভাবে দিন শুরুর ইঙ্গিত দেয়। এদিকে, স্থগিতকরণ সিদ্ধান্তের আগে সরকারি বন্ড বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছিল, যার মাত্রা শুক্রবার আরও বৃদ্ধি পায়। ১৯৮২ সালের পর এবারই দীর্ঘমেয়াদি মার্কিন ঋণের সুদের হার সপ্তাহের হিসেবে সবচেয়ে বেশি বাড়তে পারে। অপরদিকে, বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ বিকল্প হিসাবে পরিচিত স্বর্ণের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান জ্যানাস হেনডারসন মাল্টি-অ্যাসেট বিভাগের প্রধান অ্যাডাম হেটস বলেছেন, মন্দার ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বরং, কয়েক সপ্তাহ আগের তুলনায় মন্দার আশঙ্কা এখন অনেক বেশি। অবশ্য, মন্দা ও বাজারের অস্থিরতাকে পাত্তা না দিতে বেসেন্ট বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চুক্তি হলেই স্থিতিশীলতা আসবে।
বাণিজ্য যুদ্ধে কেউই বিজয়ী হবে না : যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান ‘বাণিজ্য যুদ্ধে’ কেউই বিজয়ী হবে না বলে মন্তব্য করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি’ জিনপিং। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই প্রথম এ ইস্যুতে কথা বলেছেন শি’। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এক সরকারি সফরে বর্তমানে বেইজিং আছেন। গতকাল শুক্রবার তার সঙ্গে বৈঠক করেন শি জিনপিং। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা (যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের ঘটনায়) ভীত নই। গত ৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চীনের উন্নয়নের প্রধান দুই সহায় আত্মবিশ্বাস এবং পরিশ্রম। কখনও অন্য কারো ওপর আমাদের নির্ভর করতে হয়নি। কোনো প্রকার অযৌক্তিক দমন-পীড়নে আমরা ভয় পাই না।” “তবে এই যে একটি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়েছে, তাতে কেউই বিজয়ী হবে না। উপরন্তু বিশ্বব্যবস্থার বিরুদ্ধে যদি কেউ যায়, তাহলে সে নিজেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।”
চলতি বছর মার্চে প্রথমবার চীনের সব ধরনের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। পরে ২ এপ্রিল এক ঘোষণায় জানান, চীনের ওপর ধার্যকৃত শুল্ক ৩৪ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তার পরের দিনই মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে বেইজিং। এতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হন ট্রাম্প এবং ৭ এপ্রিল সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় বলেন, বেইজিং যদি মঙ্গলবার ৮ এপ্রিলের মধ্যে এই শুল্ক প্রত্যাহার না করেÍ তাহলে সব ধরনের চীনা পণ্যের ওপর রপ্তানি শুল্ক আরও ৫০ শতাংশ বাড়ানো হবে এবং আজ ৯ এপ্রিল বুধবার থেকে তা কার্যকর হবে।
বেইজিং ট্রাম্পের হুমকিতে সাড়া না দেওয়ায় আজ ৯ এপ্রিল থেকে চীনা পণ্যের ওপর কার্যকর হয়েছে বর্ধিত শুল্ক। এতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের ওপর মোট আরোপিত শুল্ক পৌঁছায় ১০৪ শতাংশে। এই পরিস্থিতিতে গত ৮ এপ্রিল চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, ট্রাম্প যদি তার এই ‘অপমানজনক’ শুল্ক নীতি জারি রাখেন, তাহলে চীনও ‘শেষ পর্যন্ত’ লড়াই করবে। তারপর গতকাল ৯ এপ্রিল মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৮৪ শতাংশে উন্নীত করে চীন। বেইজিংয়ের এ পদক্ষেপের পর বুধ ও বৃহস্পতি দুই দফায় চীনের ওপর ধার্যকৃত শুল্ক বৃদ্ধি করেন ট্রাম্প। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চীনা পণ্যের ওপর ধার্যকৃত শুল্পের পরিমাণ পৌঁছেছে ১৪৫ শতাংশ।