২২ মার্চ, এএফপি, রয়টার্স : যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ লাখ ৩০ হাজার অভিবাসীর সাময়িক বৈধতার মর্যাদা বাতিল করতে যাচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত শুক্রবার প্রকাশিত ফেডেরাল রেজিস্টার নোটিশে জানা গেছে, এই তালিকায় রয়েছেন কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলার নাগরিকরা। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। অভিবাসীদের ওপর ট্রাম্পের কঠোর পদক্ষেপের আরেকটি ঘটনা হতে যাচ্ছে এটি। সাময়িক বসবাস বৈধতা পাওয়া অভিবাসীরা সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্যারোল প্রোগ্রামের আওতায় মার্কিন ভূখণ্ডে এসেছিলেন। ওই কর্মসূচির ফলে, মার্কিন পৃষ্ঠপোষক পেলে অভিবাসীরা আকাশপথে মার্কিন মুলুকে আসতে পারতেন এবং দু বছর থাকার অনুমতি পেতেন।
এদিকে, ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করে সবাইকে তটস্থ করে রেখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাইডেন আমলের প্যারোল প্রোগ্রামও বাতিল করার নির্বাহী আদেশ জারি করেন তিনি। তার দাবি, ওই কর্মসূচির মাধ্যমে অভিবাসীদের আগমনে ফেডারেল আইন ভঙ্গ হচ্ছিল। এর আগে ৬ মার্চ এক বক্তব্যে ট্রাম্প বলেছেন, প্রায় দু লাখ ৪০ হাজার ইউক্রেনীয় অভিবাসীর প্যারোল মর্যাদা বাতিলের বিষয়ে তিনি দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেবেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে লাখ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়েছেন। এই অভিবাসীদের যারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন, তাদেরকে প্যারোল মর্যাদা দিয়েছিল বাইডেন প্রশাসন। ২০২২ সালে প্রথম ভেনিজুয়েলানদের জন্য এই কর্মসূচি চালু করে বাইডেন প্রশাসন। এরপর ২০২৩ সালে এর আওতা বৃদ্ধি করে কিউবা, হাইতি ও নিকারাগুয়ার অভিবাসীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা লাখ পাঁচেক অভিবাসী আইনি সুরক্ষা হারিয়ে বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তবে এই প্যারোল সুবিধা পাওয়া অভিবাসীদের মধ্যে কতজন বর্তমানে অন্য কোনও আইনি মর্যাদা অর্জন করেছেন, সেটা স্পষ্ট নয়। প্যারোল সুবিধা বাতিল হলে অভিবাসীদের দ্রুত বহিষ্কার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা সহজ হবে বলে জানিয়েছে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি। জানুয়ারিতে এই আইনটি চালু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এর আওতায়, দুই বছরের কম সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী অভিবাসীদের এই প্রক্রিয়ায় দ্রুত বহিষ্কার করা যাবে।
এক বছরে প্রায় ৯ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু : ২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশে যাওয়ার পথে প্রায় ৯ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)। গত বছর বিশ্বব্যাপী অভিবাসন পথে ৮ হাজার ৯৩৮ জন মারা গেছেন। তবে, নিহত ও নিখোঁজের প্রকৃত সংখ্যা হয়তো আরও অনেক বেশি। কারণ, সরকারি সূত্রের অভাবের কারণে অনেক ঘটনাই অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। এক বছরে এত মৃত্যুকে ‘অগ্রহণযোগ্য ও প্রতিরোধযোগ্য’ ট্র্যাজেডি বলে অভিহিত করে আইওএম জানায়, ২০২৪ সালে এশিয়া, আফ্রিকা এবং ইউরোপে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের মধ্যে এশিয়ার ২ হাজার ৭৭৮ জন, আফ্রিকার ২ হাজার ২৪২ জন, ক্যারিবিয়ানে ৩৪১ জনের পাশাপাশি কলম্বিয়া এবং পানামার মধ্যবর্তী ড্যারিয়েন জঙ্গল অতিক্রম করতে গিয়ে ১৭৪ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত তথ্য পাওয়া না গেলেও সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেখানে অন্তত এক হাজার ২৩৩ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া ইউরোপে পৌঁছানোর চেষ্টাকারীদের প্রধান প্রবেশদ্বার ভূমধ্যসাগরে রেকর্ড ২ হাজার ৪৫২ জন মারা গেছেন।