গার্ডিয়ান, আল জাজিরা , রয়টার্স: প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নীতির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বহু শহরে গত শনিবার ‘নো কিংস’ শীর্ষক বিক্ষোভ–সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আয়োজকেরা বলেন, সারা দেশে ২ হাজার ৬০০-এর বেশি জায়গায় এমন বিক্ষোভ হয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ–সমাবেশ হয়। বিক্ষোভকারীদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃত্ববাদের দিকে এগোচ্ছে এবং এখানে কোনো রাজা থাকা উচিত নয়। এদিন কয়েক লাখ মানুষ ‘নো কিং’ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। অনেক জায়গায় বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘নাথিং ইজ মোর প্যাট্রিওটিক দ্যান প্রোটেস্টিং’ (বিক্ষোভের চেয়ে বড় দেশপ্রেম আর হয় না) কিংবা ‘রেজিস্ট ফ্যাসিজম’ (ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন) এমন স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। বিক্ষোভগুলোকে অনেকটা সড়কে হওয়া উৎসবের মতো দেখাচ্ছিল। শতাধিক আয়োজক যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গত শনিবার এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেছে। ছোট-বড় অনেক শহরে ২ হাজার ৬০০টির বেশি স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এ বছর জানুয়ারিতে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার পর এটি তাঁর বিরুদ্ধে তৃতীয় বৃহৎ গণবিক্ষোভ। এবার এমন এক সময় বিক্ষোভ হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকার শাটডাউনে (অচলাবস্থায়) পড়েছে। গতকাল ছিল শাটডাউনের ১৮তম দিন। তহবিলের জোগান না থাকায় শাটডাউনের কারণে বহু ফেডারেল কর্মসূচি ও সেবা বন্ধ হয়ে আছে। বিক্ষোভকারীরা নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ার, বোস্টন কমন, শিকাগোর গ্রান্ট পার্কসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থানে সমবেত হয়ে ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। ট্রাম্পবিরোধী এ বিক্ষোভের সূচনা মূলত যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। যেমন, এর আগে লন্ডনে মার্কিন দূতাবাসের বাইরে কয়েক শ বিক্ষোভকারী জমায়েত হন, আর মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় আরও কয়েক শ মানুষ বিক্ষোভ করেন। একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের জন্য দেশপ্রেমী মানুষের গণশক্তির চেয়ে বড় হুমকি আর কিছু হয় না।

এজরা লেভিন, বিক্ষোভের আয়োজক: ট্রাম্প গতকাল ওয়াশিংটনে ছিলেন না। তিনি ফ্লোরিডায় তাঁর মার-এ-লাগোর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এর আগের দিন শুক্রবার ফক্স নিউজে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘তাঁরা আমাকে একজন রাজা বলছেন। আমি রাজা নই।’ শতাধিক আয়োজক যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শনিবার ওই বিক্ষোভের আয়োজন করেন।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে: এ বছর বসন্তে ট্রাম্পের সাবেক ঘনিষ্ঠ মিত্র ও ধনকুবের ইলন মাস্কের ব্যাপক কর্মী ছাঁটাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে গণবিক্ষোভ হয়। এরপর গত জুনে ট্রাম্পের সামরিক প্যারেড আয়োজনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। সেবারও অনেক মানুষ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন। তবে আয়োজকদের দাবি, শনিবারের সমাবেশ আরও বড় হয়েছে। ১৪ জুন ট্রাম্প ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশাল সামরিক প্যারেডের আয়োজন করেন। মার্কিন সেনাবাহিনীর ২৫০তম বার্ষিকী উদ্যাপন ও ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিন উপলক্ষে এটি আয়োজন করা হয়। এতে হাজার হাজার সেনা, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান ও আতশবাজির প্রদর্শনী ছিল। ১৯৯১ সালের পর প্রথমবারের মতো ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত সামরিক প্যারেড ছিল এটি।

তবে এই প্যারেডের আয়োজন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এটি আয়োজনের পেছনে খরচ হয় বিপুল অঙ্কের অর্থ; যা অনেকের মতে অত্যন্ত ব্যয়বহুল। বিশেষ করে যখন সরকারি ব্যয়ের ক্ষেত্রে কাটছাঁট চলছে, তখন এ খরচকে অপচয় হিসেবে দেখা হয়। গত গণবিক্ষোভের আয়োজকদের অন্যতম ছিল ‘ইনডিভিসিবল’। এ সংগঠনটির সহপ্রতিষ্ঠাতা এজরা লেভিন বলেন, ‘একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের জন্য দেশপ্রেমী মানুষের গণশক্তির চেয়ে বড় হুমকি আর কিছু হয় না।’ স্থানীয় সময় শনিবার দুপুরের আগেই নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হন। তাঁরা ‘ট্রাম্পকে এখনই ক্ষমতা ছাড়তে হবে’ বলে স্লোগান দেন।