রয়টার্স: ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতি বাতিল চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অরাজনৈতিক আইনি সংস্থা লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার। গত সোমবার এ মামলা দায়ের করা হয়। ৫টি মার্কিন আমদানিকারক সংস্থার প্রতিনিধি হিসেবে মামলার বাদী হয়েছে লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার।
গত ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় সব দেশের ওপর বর্ধিত রপ্তানি শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। অতিরিক্ত এই শুল্ক আরোপকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা’ বলে উল্লেখ করেন তিনি। গত ১০ এপ্রিল অবশ্য চীন ব্যাতীত অন্য সব দেশের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত করেছেন ট্রাম্প, তবে তার আগেই তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দামের হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে পুঁজিবাজার থেকে ‘গায়েব’ হয়ে গেছে শত শত কোটি ডলার।
লিবার্টি জাস্টিস সেন্টারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও আইনজীবী জেফ্রি শোয়াব এক বিবৃতিতে বলেন, “কোনো ব্যক্তিরই শুল্ক বা কর আরোপের এমন ক্ষমতা থাকা উচিত নয়, যা বিশাল বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী, যাবতীয় কর বা শুল্ক আরোপের এখতিয়ার কংগ্রেসের (মার্কিন আইনসভা), প্রেসিডেন্টের নয়।”
এ মামলার ঘটনায় ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া জানতে হোয়াইট হাউসে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এক মুখপাত্র ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, “প্রেসিডেন্টের বিরোধীরা সবসময়ই তার (ট্রাম্পের) সব সিদ্ধান্তের বিপক্ষে বলবে। কিন্তু সত্য হলো, বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে চীন তার নিজের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার শোষণ করছিল এবং আমাদের প্রেসিডেন্ট আন্তর্জাতিক বাণিজ্যক্ষেত্রে একটি লেভেল-প্লেইং ফিল্ড দেখতে চেয়েছেন। এর বেশি কিছু নয়।”
এদিকে সম্প্রতি অন্য সব দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক স্থগিত করলেও চীনের ওপর ধার্যকৃত শুল্ক ১৪৫ শতাংশে উন্নীতি করেছেন ট্রাম্প। তার এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েও মামলা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে। গত সোমবার যেদিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতে মামলা করল লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার, সেই একই দিন ফ্লোরিডার ফেডারেল আদালতেও মামলা করেছেন আমদানিকারক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীরা। মামলায় চীনের ওপর আরোপিত বর্ধিত শুল্ক স্থগিতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিশ্বে মন্দার চেয়ে খারাপ পরিস্থিতির শঙ্কা: ট্রাম্পের শুল্কনীতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক শুল্ক আরোপের ঘোষণায় টালমাটাল হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই শুল্কনীতি বিশ্বকে মন্দার দিকে নিয়ে যেতে পারে। যদি এই পরিস্থিতি সঠিক ভাবে সামলানো না যায় তবে মন্দার চেয়েও খারাপ কিছু হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। গত রোববার এক ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আগামী সপ্তাহের মধ্যে আমদানি করা সেমিকন্ডাক্টরের ওপর শুল্ক হার ঘোষণা করবেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই প্রতিশ্রুতির অর্থ হচ্ছে, চীন থেকে আমদানি করা স্মার্টফোন ও কম্পিউটারের ওপর দেওয়া শুল্ক ছাড় আর বেশি দিন থাকছে না। ট্রাম্প মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেমিকন্ডাক্টর খাতকে আরও শক্তিশালী করতে চাচ্ছেন।
গত সোমবার ফেডারেল রেজিস্টারের ফাইলিংয়ে দেখা গেছে, ওষুধ এবং চিপসের বিদেশী উৎপাদনের উপর ব্যাপক নির্ভরতা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি- এমন যুক্তিতে ট্রাম্প প্রশাসন উভয় ক্ষেত্রেই শুল্ক আরোপের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ওষুধ এবং সেমিকন্ডাক্টর আমদানির বিষয়ে তদন্ত শুরু করছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৯৬২ সালের বাণিজ্য সম্প্রসারণ আইনের ২৩২ ধারার সর্বশেষ ব্যবহারকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করে দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তথাকথিত খাতভিত্তিক শুল্কের ন্যায্যতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগে সেমিকন্ডাক্টর আমদানির ওপর শিগগির শুল্ক আরোপ করা হবে বলে জানান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রম্প। আগামী সপ্তাহে এই ব্যাপারে স্পষ্ট ঘোষণা আসতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, আমরা চিপ, সেমিকন্ডাক্টর ও অন্যান্য জিনিস আমাদের দেশেই তৈরি করতে চাই।
স্মার্টফোনের মতো কিছু পণ্য এখনো অব্যাহতিপ্রাপ্ত হতে পারে কি না তা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, আপনাকে একটি নির্দিষ্ট নমনীয়তা দেখাতে হবে। কারও এত কঠোর হওয়া উচিত নয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা এক পোস্টে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমরা আসন্ন জাতীয় নিরাপত্তা শুল্ক তদন্তে সেমিকন্ডাক্টর ও পুরো ইলেকট্রনিক্স সরবরাহ শৃঙ্খলের দিকে নজর দিচ্ছি। ট্রাম্প গত শুক্রবারের ঘোষণা ঘিরে তৈরি হওয়া গুজব উড়িয়ে দিয়ে জানিয়েছেন, শুল্কের ক্ষেত্রে কোনো দেশই রেহাই পায়নি। এমনকি, চীনা ইলেকট্রনিক পণ্যের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ শুল্ক এখনো বহাল রয়েছে, তবে সেগুলো এখন ‘ভিন্ন শুল্ক শ্রেণিতে’ রাখা হয়েছে। এর আগে তিনি চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করছেন। তবে তার প্রশাসন পরে জানায়, এই ১২৫ শতাংশের সঙ্গে আগে থেকে আরোপিত ২০ শতাংশ শুল্কও যুক্ত থাকছে। ফলে মোট শুল্ক দাঁড়াচ্ছে ১৪৫ শতাংশে।