রয়টার্স : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে অবৈধ অভিবাসীদের রাখার জন্য গুয়ান্তানামো বে মার্কিন নৌঘাঁটি ব্যবহার করায় বন্দীপ্রতি দৈনিক এক লাখ ডলার খরচ হচ্ছে। গত মঙ্গলবার সিনেট হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যান্ড গভর্নমেন্টাল অ্যাফেয়ার্স কমিটির এক শুনানিতে সিনেট সদস্য গ্যারি পিটার্স এমন দাবি করেছেন। তাঁর মতে, এ খরচ সরকারের অর্থের অপচয়ের এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
এ কমিটির শীর্ষস্থানীয় ডেমোক্র্যাট সদস্য গ্যারি পিটার্স হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েমের কাছে এ উচ্চ খরচের ব্যাখ্যা চেয়েছেন। খরচের এই পরিমাণ যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আটককেন্দ্রে প্রতিদিনের ১৬৫ ডলার খরচের তুলনায় বহুগুণ। মার্কিন করদাতাদের টাকায় কেন বন্দী অভিবাসীদের কিউবায় মার্কিন নৌঘাঁটি গুয়ান্তানামোয় পাঠানো হচ্ছে এবং পরে আবার তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন পিটার্স।
পিটার্স বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন গুয়ান্তানামোয় ১ জনকে রাখার জন্য ১ লাখ ডলার খরচ করছি। ওখানে কিছুদিন রাখার পর আবার তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রে ফিরিয়ে আনতে হয়। অথচ এখানে রাখলে প্রতিদিন মাত্র ১৬৫ ডলার খরচ হতো। আমি মনে করি, এটা একেবারেই অযৌক্তিক।’ মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গুয়ান্তানামোতে অভিবাসীদের প্রতিদিন অন্তত ২৩ ঘণ্টা জানালাবিহীন কক্ষে আটকে রাখা হয়, তাঁদের নগ্ন দেহ তল্লাশির মতো পদ্ধতির মুখোমুখি করা হয় এবং পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয় না। বন্দীদের কেউ কেউ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেছে এসিএলইউ।
অভিবাসনসংক্রান্ত আইন কার্যকর করতে ব্যাপকভাবে তহবিল বাড়ানোর অনুরোধ করেছে হোয়াইট হাউস। কারণ, অভিবাসীদের গণহারে বিতাড়িত করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যে লক্ষ্য রয়েছে, তা অর্জন করার চেষ্টা চলছে। চলতি মাসে কংগ্রেসের কাছ থেকে ২০২৬ অর্থবছরের জন্য হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগে অতিরিক্ত ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বরাদ্দ চেয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। আগামী ১ অক্টোবর থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হচ্ছে।
৩০ হাজার অভিবাসীকে কুখ্যাত গুয়ান্তানামো বেতে আটকে রাখার পরিকল্পনা জানালেন ট্রাম্প : বরাদ্দের অনুরোধের পক্ষে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করতে গিয়ে কমিটির সামনে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম বলেন, গুয়ান্তানামো বেতে অভিবাসীদের রাখার দৈনিক খরচ কত, তা তিনি জানেন না। এক বিবৃতিতে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মুখপাত্র ট্রিশা ম্যাকলাফলিন বলেন, মার্কিন নাগরিকদের নিরাপদ রাখতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বদ্ধপরিকর। কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান ও সিনেট সদস্য র্যান্ড পলও যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অতিরিক্ত সীমান্তপ্রাচীর নির্মাণের খরচ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কারণ, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসার চেষ্টা করা অভিবাসীর সংখ্যা ব্যাপক হারে কমে গেলেও সীমান্তপ্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে গুয়ান্তানামোয় প্রায় ৭০ জন অভিবাসী আটক আছেন। নাগরিক অধিকার সংগঠন আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) গত মার্চ মাসে একটি মামলা করেছিল। এর মধ্য দিয়ে ১০ জন অভিবাসীকে গুয়ান্তানামো ঘাঁটিতে স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঠেকানোর চেষ্টা করা হয়।