দ্য নিউইয়র্ক টাইমস : নেতিবাচক জনমত জরিপের চাপের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (ডিএইচএস) অভিবাসন আইন প্রয়োগ কার্যক্রমে কৌশল পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে। দেশজুড়ে কয়েকটি শহরে ব্যাপকভাবে প্রচারিত বড় ধরনের অভিযান থেকে সরে এসে এখন আরও লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপে যেতে চায় সংস্থাটি। ডিএইচএসের সূত্র নিউজনেশনের আলি ব্র্যাডলিকে জানিয়েছে, কমান্ডার গ্রেগরি বোভিনোর অধীনে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বর্ডার প্যাট্রোল দলগুলো তাদের নজর সীমিত করবে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর দিকে যেমন গুরুতর অপরাধে দণ্ডিত অবৈধভাবে অবস্থানরত অভিবাসীরা। এই পরিবর্তনের ফলে হোম ডিপোর মতো স্থানে আগে যেসব বড় অভিযান চালানো হয়েছিল, সেগুলো আর বাধ্যতামূলকভাবে চালানো নাও হতে পারে বলে ব্র্যাডলির একান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এজেন্টরা ট্রাফিক স্টপের মাধ্যমেও আইন প্রয়োগে জোর দেবে। তবে রাস্তায় প্রকাশ্যে লোকজনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সাধারণ মানুষ সম্ভবত আর দেখবে না, গত শুক্রবার রাতে নিউজনেশনের 'দ্য হিল' অনুষ্ঠানে ব্লেক বারম্যানের সঙ্গে আলাপচারিতায় বলেন ব্র্যাডলি। এই কৌশল পরিবর্তন এসেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন দমন অভিযানের ওপর একের পর এক নেতিবাচক জরিপের প্রেক্ষাপটে। অভিবাসন নীতিই ছিল তার ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম প্রধান ভিত্তি এবং দ্বিতীয় মেয়াদের গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা। চলতি সপ্তাহের শুরুতে প্রকাশিত পাবলিক রিলিজিয়ন রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআরআই) এর এক জরিপে দেখা গেছে, অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্পের কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন মার্চের ৪২ শতাংশ থেকে কমে ৩৩ শতাংশে নেমে এসেছে। নভেম্বরে প্রকাশিত ইউগভ জরিপে দেখা যায়, প্রশাসনের গণ নির্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চালু হওয়া ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অভিযানের প্রতি অধিকাংশ মার্কিন নাগরিক অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি, স্বাস্থ্যনীতি গবেষণা সংস্থা কেএফএফ ও এর গত মাসের এক জরিপে অংশ নেওয়া অভিবাসীদের প্রায় অর্ধেক বলেছেন, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর তারা এবং তাদের পরিবার 'আরও কম নিরাপদ' বোধ করছেন।

চলতি বছর লস অ্যাঞ্জেলেস, শিকাগো ও নর্থ ক্যারোলিনার শার্লটসহ একাধিক অঙ্গরাজ্যে বর্ডার প্যাট্রোলের অভিবাসন আইন প্রয়োগ কার্যক্রম দৃশ্যমান ছিল। অনেক অভিযানের বিরুদ্ধেই বিক্ষোভ হয়েছে এবং কোথাও কোথাও এজেন্টদের সঙ্গে সংঘর্ষও ঘটেছে। এসব অভিযানকে অনেকেই মাত্রাতিরিক্ত বলে সমালোচনা করেছেন। তবে ব্র্যাডলি শুক্রবার জানান, কৌশল পরিবর্তনের পরও নিউ অরলিন্সে সম্প্রতি শুরু হওয়া “ক্যাটাহুলা ক্রাঞ্চ” নামের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ডিএইচএসের তথ্য অনুযায়ী, লুইজিয়ানার এই শহরে ইতোমধ্যে ২৫০ এর বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে, এবং শেষ পর্যন্ত সংখ্যা ৫ হাজারে পৌঁছানোই তাদের লক্ষ্য।

ট্রাম্পের ১ লাখ ডলারের এইচ ১বি ভিসা ফি নিয়ে মামলা করল ২০টি অঙ্গরাজ্য : এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল রব বন্টা শুক্রবার ঘোষণা করেছেন, তিনি এবং আরও ১৯টি অঙ্গরাজ্য নতুন এইচ-১বি ভিসা আবেদনের ফি ১ লাখ ডলারে উন্নীত করার নীতির বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করছেন। বন্টা বলেন, দক্ষ কর্মীদের জন্য এই ভিসার ফি বৃদ্ধিটি বেআইনি, কারণ এটি কংগ্রেস যে সীমা নির্ধারণ করেছে তা অতিক্রম করেছে এবং কর্মসূচি প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যকেই ক্ষুণ্ন করছে। মামলায় অংশ নেওয়া সব অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল ডেমোক্র্যাট। সান ফ্রান্সিসকোতে এক সংবাদ সম্মেলনে বন্টা বলেন, কোনো প্রেসিডেন্ট প্রশাসনই অভিবাসন আইন নতুন করে লিখতে পারে না। কোনো প্রেসিডেন্ট কংগ্রেস নামের সমমর্যাদার শাখাকে উপেক্ষা করতে পারে না, সংবিধানকে উপেক্ষা করতে পারে না, কিংবা আইনকে উপেক্ষা করতে পারে না। এইচ-১বি ভিসার সবচেয়ে বড় ব্যবহারকারী হলো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো, যারা উচ্চদক্ষ বিদেশি কর্মী নিয়োগ করে। ম্যাগা রিপাবলিকানরা অভিযোগ করে আসছেন, এসব কোম্পানি সস্তা শ্রম পাওয়ার জন্য মার্কিন কর্মীদের পাশ কাটাতে এই কর্মসূচির অপব্যবহার করছে। তবে বন্টার যুক্তি, এই অতিরিক্ত ফি রাজ্যের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য খাতেও শ্রমসংকট আরও তীব্র করবে—কারণ এতে চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষক, নার্স এবং সরকারি সেবাখাতের কর্মী নিয়োগ আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেপ্টেম্বর মাসে প্রেসিডেন্সিয়াল ঘোষণার মাধ্যমে যে ১ লাখ ডলারের ফি আরোপ করেছেন, তা হোমল্যান্ড সিকিউরিটির সচিব ক্রিস্টি নোয়েমের বিবেচনায় বেছে বেছে প্রয়োগ করা হতে পারে। উচ্চদক্ষ অভিবাসন বিশেষ করে এইচ–১বি ভিসা এর আগে ট্রাম্পের জনতাবাদী সমর্থক ও সিলিকন ভ্যালির মিত্রদের মধ্যে বিরোধের উৎস ছিল, কারণ বৈশ্বিক প্রতিভা আকর্ষণের ওপর এর প্রভাব নিয়ে প্রযুক্তি খাত উদ্বিগ্ন।

তবে নীতি ঘোষণার পর এবং এই কর্মসূচি ব্যবহারকারী প্রযুক্তি নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট তার অবস্থান কিছুটা নরম করেছেন বলে মনে হচ্ছে। গত মাসে ফক্স নিউজের সঞ্চালক লরা ইনগ্রাহামের সঙ্গে এইচ ১বি ভিসা নিয়ে আলোচনায় তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যথেষ্ট প্রতিভাবান মানুষ আছে—এই ধারণার সঙ্গে তিনি একমত নন, এবং কিছু ক্ষেত্রে এখনও বিদেশি কর্মী আনার প্রয়োজন রয়েছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র টেলর রজার্স গত শুক্রবার প্রশাসনের পদক্ষেপকে শুধু আইনসম্মতই নয়, বরং “এইচ ১বি কর্মসূচির প্রয়োজনীয় সংস্কারের পথে একটি জরুরি, প্রাথমিক ও ধাপে ধাপে নেওয়া পদক্ষেপ” বলে বর্ণনা করেন। এক বিবৃতিতে মামলার জবাবে রজার্স বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকান শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এইচ-১বি ভিসা নিয়ে তার বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ সেটিই নিশ্চিত করছে এতে কোম্পানিগুলোকে নির্বিচারে আবেদন জমা দিয়ে মার্কিন মজুরি কমিয়ে দেওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে, আবার যেসব নিয়োগকর্তার বিদেশ থেকে সেরা প্রতিভা আনার প্রয়োজন রয়েছে, তাদের জন্য নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে। গত শুক্রবার বন্টা এইচ-১বি প্রক্রিয়ায় নির্দিষ্ট কোনো সংস্কারের প্রস্তাব দেননি। তবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো কর্মসূচি বা নীতির মতো এটিও সম্ভবত কিছু উন্নতির মাধ্যমে উপকৃত হতে পারে।

এর আগে এই শরতে যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি জোটকে সঙ্গে নিয়ে নতুন এই ফি-এর বিরুদ্ধে আলাদা মামলা করেছিল। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন এইচ ১বি কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণকারী আইনের বিধান অগ্রাহ্য করেছে। এছাড়া বিভিন্ন খাতের শ্রমিক ইউনিয়নসহ আরও বিস্তৃত একটি জোটও পৃথক মামলা দায়ের করেছে। নতুন মামলাটি ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল আদালতে দায়ের করা হবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন রব বন্টা ও ম্যাসাচুসেটসের অ্যাটর্নি জেনারেল আন্দ্রেয়া জয় ক্যাম্পবেল। চলতি বছরে এই মামলাটি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে বন্টার করা ৪৯তম মামলা।