রয়টার্স : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এশিয়া সফর ছিল কূটনৈতিক নাটকীয়তার। তিনি মূলত এশিয়া সফরে সাফল্য, গৌরব ও প্রদর্শনের রাজনীতি করেছেন। পাঁচ দিনের এশিয়া সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। ক্ষমতায় আসার ৯ মাসের মধ্যে এটাই ছিল তাঁর সবচেয়ে দীর্ঘ বিদেশ সফর। দেশে ফিরেই তাঁকে জটিল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও দীর্ঘায়িত সরকারি অচলাবস্থার (শাটডাউন) মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে এশিয়ার তিন দেশ ঘুরে আসার সময় নেতারা তাঁকে উপহার ও রাজকীয় অভ্যর্থনায় ভরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাতে পরিস্থিতিতে খানিকটা বদল দেখা যায়। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে দুই নেতা নাজুক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছেন বলে মনে হচ্ছে।
এশিয়া সফরজুড়ে ট্রাম্পকে প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়েছেন নেতারা। মালয়েশিয়া তাঁকে লালগালিচা পেতে স্বাগত জানিয়েছে। ট্রাম্পের জন্য রাজকীয় প্রাসাদে আয়োজন করা হয় গার্ড অব অনার, সামরিক ব্যান্ডের বাজনা ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। জাপানের পক্ষ থেকে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মনোনয়ন দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
এ ছাড়া উপহার দিয়েছে প্রয়াত নেতা ও ট্রাম্পের গলফ-সহচর শিনজো আবে ব্যবহৃত একটি গলফ ক্লাব এবং রাজধানীকে সাজাতে ২৫০টি চেরি ফুলের গাছ। দক্ষিণ কোরিয়া দিয়েছে প্রাচীন এক রাজবংশের স্বর্ণমুকুটের প্রতিরূপ, যা তাদের ভাষায়, ‘দূরদর্শী নেতৃত্ব ও শান্তি প্রতিষ্ঠার যোগ্য এক ব্যক্তির জন্য উপযুক্ত উপহার’। বিনিময়ে ট্রাম্পও ওই দেশগুলোর নেতাদের দিয়েছেন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের স্বীকৃতি। তিনি নতুন জাপানি প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচিকে ভরপুর প্রশংসায় ভাসিয়েছেন।
তবে ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও সির মুখোমুখি বৈঠকে পরিবেশ ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। সি কোনো প্রশংসা বা ট্রাম্পের চুক্তি করার দক্ষতা নিয়ে অতিরঞ্জিত মন্তব্য করেননি। ট্রাম্পই ছিলেন আতিথেয়তার ভূমিকায় এবং প্রশংসার স্রোত বইয়ে দিয়েছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার তাঁরা প্রায় ভেস্তে যাওয়া একটি চুক্তি চূড়ান্ত করেন। এ ছাড়া ট্রাম্প জাপানের সঙ্গে খনিজ চুক্তি করেন। ট্রাম্প তাঁর এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোটের (আসিয়ান) শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেন। থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে শান্তিচুক্তি সই অনুষ্ঠানেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। তবু যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত। তবে যদি সি ও ট্রাম্প দুই দেশের সম্পর্কের উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত করতে পারেন, তাহলে এশিয়া অঞ্চলের অন্যান্য দেশ এটাকেই এক বড় প্রাপ্তি বা চমৎকার উপহার হিসেবে দেখবে।