আমেরিকা
বাকবিতন্ডার জেরে জেলেনস্কিকে বেরিয়ে যেতে বলেন ট্রাম্প
জেলেনস্কির পাশে দাঁড়াতে একজোট হচ্ছে ইউরোপ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বাকবিতণ্ডার পর জেলেনস্কির পাশে দাঁড়াচ্ছেন ইউরাপীয় নেতারা। নজিরবিহীন এমন ঘটনার পর তারা তার সহায়তায় একজোট হচ্ছেন। সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানোর ইঙ্গিতও দিচ্ছেন তারা। সিএনএন।
Printed Edition

সংগ্রাম ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে বাকবিতণ্ডার পর জেলেনস্কির পাশে দাঁড়াচ্ছেন ইউরাপীয় নেতারা। নজিরবিহীন এমন ঘটনার পর তারা তার সহায়তায় একজোট হচ্ছেন। সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানোর ইঙ্গিতও দিচ্ছেন তারা। সিএনএন।
জেলেনস্কি ও ট্রাম্পের ঝগড়ার পর তাদের দুজনের সঙ্গেই আলাদাভাবে কথা বলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার। এরপর তার মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানান, প্রধানমন্ত্রী স্টারমার ইউক্রেনের ভৌগলিক অখণ্ডতা ও নিরাপত্তার ওপর ভিত্তি করে স্থায়ী শান্তি চুক্তি চান। এছাড়া তিনি ইউক্রেনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রাম্পের সঙ্গে বাকবিতণ্ডার পরই ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেন জেলেনস্কি। এপর ম্যাক্রোঁ বিবৃতিতে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, “এখানে আগ্রাসনকারী হলো রাশিয়া। আর হামলার শিকার হলো ইউক্রেন।” জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, “ইউক্রেনীয়দের চেয়ে বেশি শান্তি অন্য কেউ চায় না। আমরা শুধুমাত্র স্থায়ী শান্তির ওপর কাজ করছি। ইউক্রেনকে আশ্বস্ত করে বলছি, তারা জার্মানি এবং ইউরোপের ওপর নির্ভর করতে পারে।” ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে কড়া ভাষায় বিবৃতি দিয়েছেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা কালাস। তিনি ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “এটি পরিষ্কার মুক্ত বিশ্বের নতুন একজন নেতা প্রয়োজন।” এছাড়া জেলেনস্কিকে ‘শক্ত’ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
ট্রাম্পের সঙ্গে এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট্টের সঙ্গেও কথা বলেন জেলেনস্কি। তিনিও ইউক্রেনের পাশে থাকার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন।
লিথুয়ানিয়ার প্রেসিডেন্ট জিতানাস নওসেদা এক বিবৃতিতে বলেন, “ইউক্রেন, আপনারা কখনো একা হাঁটবেন না।” তিনি সতর্কতা দিয়ে বলেন, “যদি ইউক্রেন লড়াই বন্ধ করে দেয়, তাহলে ইউক্রেন বলতে কিছু আর থাকবে না।” এছাড়া কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের নেতারাও জেলেনস্কির পাশে দাঁড়িয়েছেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছেন, তার দেশ ইউক্রেনের পাশেই থাকবে। তিনি বলেন, “রাশিয়া অবৈধভাবে এবং অকারণে ইউক্রেনে হামলা চালায়। গত তিন বছর ধরে ইউক্রেনীয়রা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও ভৌগলিক অখণ্ডতার জন্য সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করছে। যা আমাদের সবার জন্য মূল্যবান।”
দুপুরের খাবার না খাইয়েই জেলেনস্কিকে বেরিয়ে যেতে বলেন ট্রাম্প: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে গত শুক্রবার রাতে বাকবিতণ্ডা হয়েছে। অভূতপূর্ব এই ঘটনাটি ঘটেছে সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে। ওই বাকবিতণ্ডার বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এরমধ্যে জানা গেছে, দুপুরের খাবার না খাইয়েই জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউজ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন ট্রাম্প।
সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেছেন, হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসের ভেতর ‘ঝগড়ার’ পর ট্রাম্প তার মন্ত্রী ও উপদেষ্টাদের নিয়ে আলাদা একটি রুমে চলে যান। অপরদিকে জেলেনস্কি তার প্রতিনিধিসহ আরেকটি রুমে যান। যেটি সাধারণত রাষ্ট্রীয় কোনো অতিথি এলে হয়ে থাকে। এরপর আলাদা রুমে গিয়ে ট্রাম্প তার মন্ত্রীদের সঙ্গে উল্লেখ করেন, জেলেনস্কি যে ভাষায় কথা বলেছেন, তাতে তিনি অসম্মানিত বোধ করেছেন। এছাড়া জেলেনস্কি শান্তি চান না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এরপর তিনি তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও নিরাপত্তা পরামর্শক মাইক ওয়াল্টজকে দিয়ে ইউক্রেনীয় দলের কাছে বার্তা পাঠান, জেলেনস্কি যেন হোয়াইট হাউজ থেকে বেরিয়ে যান।
তবে তারপরও ইউক্রেনীয়রা কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু তাদের এই অনুরোধ গ্রহণ করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত জেলেনস্কিকে বের হয়ে যেতে হয়।