আল- জাজিরা এএফপি: নিউইয়র্ক নগরের ডেমোক্রেটিক দলের মেয়রপ্রার্থী জোহরান মামদানি তাঁর প্রতিপক্ষের ‘বর্ণবাদী ও ভিত্তিহীন আক্রমণ’-এর জবাব দিতে গিয়ে এক আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন। নির্বাচনে আগাম ভোট শুরুর মাত্র এক দিন আগে তিনি এই বক্তব্য দিলেন। এই নির্বাচনে তাঁর জয় প্রায় নিশ্চিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত শুক্রবার নগরের ব্রঙ্কস এলাকার একটি মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে জোহরান বিরোধীদের সমালোচনা করেন। তাঁর ভাষায়, তাঁরা ‘ঘৃণাকে সামনে নিয়ে আসছেন’। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাঁদের এই ইসলামভীতি শুধু মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিসেবে তাঁকেই আঘাত করছে না। বরং নিউইয়র্কে বসবাসরত প্রায় ১০ লাখ মুসলিমের আবেগেও আঘাত করছে।

৪ নভেম্বর মেয়র নির্বাচনের দুই সপ্তাহের কম সময় আগে দেওয়া বক্তৃতায় জোহরান বলেন, নিউইয়র্কে একজন মুসলিমের জীবন মানেই অসম্মান বা অমর্যাদা মেনে নেওয়া। তবে এই অসম্মান কেবল আমাদের একার নয়। নিউইয়র্কের বহু মানুষই এর শিকার। আমরা এই অসম্মানকে কতটা সহ্য করে নিই, সেটিই আসল পার্থক্য তৈরি করে দেয়। বর্তমানে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনসভার সদস্য জোহরান জানান, তিনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারের মূল বার্তা অর্থাৎ জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর দিকে মনোযোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর প্রতিপক্ষরা দেখিয়ে দিয়েছেন, ‘ইসলামভীতি এখন তাঁদের মধ্যে একমত হওয়ার অন্যতম জায়গা হয়ে উঠেছে।’ নির্বাচনে তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী নিউইয়র্ক রাজ্যের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোকে জড়িয়ে একটি প্রশ্ন করার একদিন পর জোহরান এই বক্তব্য দিলেন। রেডিও সঞ্চালক সিড রোজেনবার্গ অনুষ্ঠানে কুমোকে নিয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন, আরেকটি ৯/১১ হামলা হলে জোহরান ‘উল্লাস’ করবেন। তাঁর কথা শুনে কুমো হেসে ওঠেন

ডেমোক্রেটিক দলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও জুনে দলীয় প্রাইমারিতে জোহরানের কাছে হেরে যাওয়া কুমো রেডিওর সঞ্চালক রোজেনবার্গের কথায় সায় দিয়ে বলেন, ‘সেটিও আরেকটি সমস্যা।’ মুসলিমদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘সিএআইআর অ্যাকশন এর নির্বাহী পরিচালক বাসিম এলকারা রেডিও অনুষ্ঠানে কুমোর এই আচরণকে ‘ঘৃণ্য, বিপজ্জনক ও অযোগ্য’ বলে আখ্যা দেন।

এলকারা বলেন, ‘একজন বর্ণবাদী রেডিও সঞ্চালকের কথায় সম্মতি দিয়ে কুমো নৈতিকতার সীমা পেরিয়ে গেছেন। ওই সঞ্চালক ইঙ্গিত করেছেন, একজন মুসলিম নির্বাচিত কর্মকর্তা আরেকটি ৯/১১-এ “উল্লাস” করবেন।’ এলকারা আরও যোগ করেন, ‘এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে এমন বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে কুমো তাঁর নেতৃত্বের আসল রূপ দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি এমন একজন নেতা যিনি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেয়ে বরং ভয় ছড়াতেই বেশি আগ্রহী।’ গত শুক্রবার জোহরান আরও বলেন, ‘রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়া তাঁকে বিতর্কের মঞ্চে “কলঙ্কিত” করেছেন। স্লিওয়া দাবি করেছিলেন, আমি বিশ্বব্যাপী জিহাদকে সমর্থন করি। এ ছাড়া কিছু সুপার পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ইঙ্গিত করেছেÍআমি একজন সন্ত্রাসী, অথবা তারা আমার খাওয়ার ভঙ্গি নিয়ে উপহাস করেছে।’

জোহরান নিজের পুরোনো কষ্টের স্মৃতিও তুলে ধরেন তাঁর এক খালা যিনি ৯/১১-এর পর হিজাব পরে আর নিরাপদ বোধ করতেন না বলে সাবওয়েতে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন এবং তাঁর এক কর্মীর গ্যারেজে ‘সন্ত্রাসী’ শব্দটি স্প্রে করে লেখা হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, তাঁকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল, নির্বাচনে জিততে চাইলে যেন তিনি মানুষকে ‘বলতে না যান’ যে তিনি মুসলিম।

নিউইয়র্ক নগরের পরবর্তী মেয়র নির্বাচনের আগাম ভোট স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার। এবারের নির্বাচনে এগিয়ে আছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি। তিনি শহরের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। জোহরান ডেমোক্রেটিক দল থেকে মনোনয়ন পেলেও তাকে অনেকে বহিরাগত বলেন। গত জুনে নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনের জন্য ডেমোক্রেটিক দলের প্রাইমারিতে অ্যান্ড্রু কুমোর বিরুদ্ধে অভাবনীয় জয় পান রাজ্যের আইনসভার সদস্য জোহরান মামদানি। জোহরান নিজেকে সমাজতান্ত্রিক বলে পরিচয় দেন, উঠে এসেছেন রাজনীতির অচেনা জগৎ থেকে। ৩৪ বছর বয়সী মামদানি যখন নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছিলেন, তখন তার শীর্ষপ্রার্থী হয়ে ওঠা অসম্ভব মনে হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিশেষ করে নিউইয়র্কের তরুণ ভোটারদের উচ্ছ্বসিত অংশগ্রহণে তার নির্বাচনী প্রচার দারুণ গতিশীল হয়ে ওঠে। নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের ওপর জোর দিয়ে ভোটারদের মধ্যে সাড়া ফেলেন জোহরান। রাজ্যের আইনসভায় কুইন্সের এই আইনপ্রণেতা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে নিউইয়র্কের ২০ লাখ বাসিন্দার জন্য বাড়িভাড়া স্থির করে দেবেন।

এবারের নির্বাচনে আগাম ভোট শুরুর আগে সর্বশেষ চমক ছিল বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানো। গত ২৮ সেপ্টেম্বর তিনি সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সে সময় কারও প্রতি সমর্থন না জানালেও পরে জোহরানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমোর পক্ষে নিজের সমর্থন জানান তিনি। গতকাল শনিবার থেকে আগামী ২ নভেম্বর পর্যন্ত নিউইয়র্কবাসী আগাম ভোট দিতে পারবেন। মূল ভোট হবে ৪ নভেম্বর। নতুন মেয়র আগামী বছরের শুরুতে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ভোট শুরুর আগে ২২ ও ২৩ অক্টোবর সর্বশেষ জরিপ হয়। সেখানে দেখা যায়, মামদানির পক্ষে সমর্থন ৪৭ শতাংশ। তিনি কুমোর চেয়ে ১৮ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী ৭১ বছর বয়সী কার্টিস স্লিওয়ার পক্ষে রয়েছে ১৬ শতাংশ সমর্থন।