ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ: জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভয়াবহ সংকটে পড়তে যাচ্ছে আগামীর বিশ্ব। বিশ্বজুড়ে উষ্ণতা বাড়ছে, বরফ গলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে, প্রকৃতি হয়ে উঠছে আরও ভয়ংকর। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ‘ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিভিউ’ ২০২৩ সালের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেশভিত্তিক কার্বন নিঃসরণের একটি তালিকা তৈরি করেছে। তালিকা অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী ১০টি দেশ সম্পর্কে নিচে তুলে ধরা হলো:

চীন : বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে চীন। দেশটি ২০২৩ সালে প্রায় ১ হাজার ৩২৬ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করেছে। এটি বৈশ্বিক নিঃসরণের প্রায় ৩৫ শতাংশ। ভারী শিল্প, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও দ্রুত নগরায়ণের কারণে চীনে দূষণের মাত্রা ভয়ানকভাবে বেড়েছে। যদিও দেশটি নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকেও অগ্রসর হচ্ছে, তবু কয়লার ওপর নির্ভরতা এখনো অনেক বেশি।

যুক্তরাষ্ট্র : বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ২০২৩ সালে প্রায় ৪৮৫ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করেছে। বৈশ্বিক নিঃসরণের প্রায় ১৩ শতাংশ এটি। দেশটিতে যানবাহন, উড়োজাহাজ, শিল্প ও প্রাকৃতিক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্বন নিঃসরণে বড় ভূমিকা রাখছে। তবে গত দশকে যুক্তরাষ্ট্রে নিঃসরণ কিছুটা কমেছে, বিশেষ করে কয়লা থেকে সরে এসে গ্যাস ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকে পড়ায়।

ভারত: ভারত ২০২৩ সালে প্রায় ২৯৫ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করেছ। মোট বৈশ্বিক নিঃসরণের ৭ শতাংশই হয়েছে দেশটি থেকে। সেখানকার বিশাল জনসংখ্যা ও দ্রুত শিল্পায়নের প্রভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এখনো বিপুল পরিমাণে কয়লার ব্যবহার করা হয়। ভারত নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করলেও তা দেশটির জন্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং।

রাশিয়া: রাশিয়া ২০২৩ সালে প্রায় ২০৭ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করেছে। মোট বৈশ্বিক নিঃসরণের প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হয়েছে দেশটি থেকে। দেশটির জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা উত্তোলন এবং রপ্তানি খাত থেকে বিপুল পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়। এ ছাড়া শীতপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় উষ্ণতার জন্য রাশিয়ায় জ্বালানির ব্যবহারও বেশি। এটি কার্বন দূষণের অন্যতম কারণ।

জাপান : জাপান ২০২৩ সালে প্রায় ১০৮ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করেছিল। বৈশ্বিক নিঃসরণের প্রায় ২ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে দেশটি থেকে। পরমাণু শক্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঝুঁকে পড়ায় জাপানে কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে। যদিও প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশটি নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে ধীরে ধীরে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে।

ইরান : ইরান ২০২৩ সালে প্রায় ৭৮ কোটি টন কার্বন নিঃসরণ করেছে, যা বিশ্বের মোট নিঃসরণের প্রায় ২ শতাংশ। দেশটির অর্থনীতি অনেকটাই জ্বালানি খাতনির্ভর। বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দামে ভর্তুকি থাকায় ইরানের এর ব্যবহারও বেশি। এ কারণে প্রতিবছর দেশটিতে বিপুল পরিমাণ কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরিত হয়।

ইন্দোনেশিয়া : ইন্দোনেশিয়া ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে ৬৭ কোটি টন কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ করেছে, যা বৈশ্বিক নিঃসরণের প্রায় ১ দশমিক ৮ শতাংশ। বন উজাড় ও কৃষিকাজের জন্য আগুন জ্বালানো, কয়লার ব্যবহার এবং শিল্পায়নের কারণে এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্র দ্রুতই পরিবেশের জন্য বড় ঝুঁকিতে পরিণত হচ্ছে।

সৌদি আরব : সৌদি আরব ২০২৩ সালে প্রায় ৬২ কোটি ৩০ লাখ টন কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ করেছে। বৈশ্বিক নিঃসরণের প্রায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ এসেছে দেশটি থেকে। সৌদি আরব প্রধানত জ্বালানি তেল উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণের কারণে উচ্চমাত্রায় কার্বন নিঃসরণ করে। অত্যধিক এয়ার কন্ডিশনার (এসি) ব্যবহার এবং পানি পরিশোধনাগারগুলোও এর পেছনে দায়ী।

জার্মানি : ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে জার্মানি সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে। ২০২৩ সালে দেশটি নিঃসরণ করেছে প্রায় ৫৮ কোটি ৩০ লাখ টন কার্বন, যা মোট বৈশ্বিক নিঃসরণের ১ দশমিক ৬ শতাংশ। জার্মানির কার্বন নিঃসরণের মূল উৎস শিল্প খাত, যানবাহন ও বিদ্যুৎ উৎপাদন। তবে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে সবচেয়ে দ্রুত অগ্রসর হওয়া উন্নত দেশগুলোর একটি জার্মানি।

কানাডা : কানাডা ২০২৩ সালে প্রায় সাড়ে ৫৭ কোটি টন কার্বন ডাই–অক্সাইড নিঃসরণ করেছে, যা মোট বৈশ্বিক নিঃসরণের ১ দশমিক ৫ শতাংশ। কানাডার খনিজ ও জ্বালানি তেলশিল্প এবং অধিক জ্বালানি ব্যবহার এই নিঃসরণের প্রধান কারণ। তবে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণে দেশটি এগিয়ে যাচ্ছে।