রয়টার্স : যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধ অভিবাসীদের ওপর আরও কঠোর হচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মাত্র ছ ঘণ্টার নোটিশে অভিবাসীদের মার্কিন মুলুক থেকে বের করে দেওয়া যাবে। এরচেয়েও ভয়ানক বিষয়টি হলো, বিতাড়িত অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা এ খবর জানিয়েছে।

মার্কিন অভিবাসন এবং কাস্টমস অধিদফতরের (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বা আইস) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লিয়নসের স্বাক্ষরিত ৯ জুলাইয়ের এক স্মারকে বলা হয়েছে, সাধারণত তৃতীয় কোনও দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে অবগত করতে হয়। তবে জরুরি ক্ষেত্রে এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হলে, মাত্র ছ ঘণ্টার নোটিশেও কাউকে বিতাড়ন করতে পারবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

যেসব দেশ বিতাড়িত মার্কিন অভিবাসীদের নিপীড়ন করবে না মর্মে কথা দিয়েছে, সেসব দেশ বিবেচনায় রাখবে ওয়াশিংটন। তবে ওই দেশগুলোর বিষয়ে নতুন করে বাড়তি কোনও যাচাই বাছাই করা হবে না বলেও স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই নতুন নীতির ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রুত অভিবাসী বহিষ্কারের পথ প্রশস্ত করতে পারবে ট্রাম্প প্রশাসন। তাদের দাবি, এসব পদক্ষেপ এমন অভিবাসীদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে সহায়তা করবে যারা যুক্তরাষ্ট্রে থাকার উপযুক্ত নন, বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ রয়েছে।

গত জুনে নিম্ন আদালতের এক আদেশ বাতিল করে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। নিম্ন আদালতের রায়ে বলা হয়েছিল, নিপীড়নের আশঙ্কা যাচাই না করে তৃতীয় দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া বন্ধ রাখতে হবে। তবে সর্বোচ্চ আদালত এই রায় বাতিলের পর কিউবা, লাওস, মেক্সিকো, মিয়ানমার, সুদান ও ভিয়েতনামের অভিবাসীদের দক্ষিণ সুদানে পাঠায় ট্রাম্প প্রশাসন।

এছাড়া, গত সপ্তাহে আফ্রিকার পাঁচটি দেশের (লাইবেরিয়া, সেনেগাল, গিনি-বিসাউ, মৌরিতানিয়া এবং গ্যাবন) কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছে যেন তারা অন্য দেশ থেকে ফেরত পাঠানো অভিবাসীদের গ্রহণ করে।

অভিবাসী বিতাড়নের এই নীতিকে বিপজ্জনক ও নিষ্ঠুর আখ্যা দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। কারণ এতে তাদের এমন দেশে পাঠানো হতে পারে, যেখানে তারা সহিংসতার শিকার হতে পারেন, তাদের কোনও আত্মীয় নেই কিংবা সেই দেশের ভাষাও তারা জানেন না।

এর আগেও সীমিত পরিসরে বিতাড়িতদের তৃতীয় দেশে পাঠানোর ঘটনা ঘটেছে। তবে ট্রাম্প যদি তার বহিষ্কার নীতিকে আরও বিস্তৃত করেন, তাহলে এ ধরনের পদক্ষেপ ব্যাপকভাবে চালু হতে পারে। এই নতুন স্মারকটি মেরিল্যান্ডের বাসিন্দা কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে ভুলভাবে এল সালভাদরে পাঠানোর বিষয়ে চলমান এক মামলার প্রমাণ হিসেবে দাখিল হয়েছে।

ট্রাম্পের আগের মেয়াদে, এল সালভাদর ও হন্ডুরাসের অভিবাসীদের কিছুসংখ্যককে গুয়াতেমালায় পাঠানো হয়েছিল। অন্যদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন মেক্সিকোর সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল, যার আওতায় কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া এবং ভেনেজুয়েলার অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হচ্ছিল, কারণ এসব দেশে প্রত্যাবাসন তখন কঠিন হয়ে পড়েছিল।