ইন্টারনেট : চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি পর্যটকের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। মার্কিন বাণিজ্য বিভাগের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় এ বছর বিদেশি আগমন গড়ে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। সংখ্যায় যা প্রায় ১৩ লাখ কম। বিশেষ করে মে থেকে জুলাইÑ এই পর্যটন মৌসুমে পতন ছিল সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।
কেন কমলো পর্যটক?
প্রথমদিকে পরিস্থিতি স্পষ্ট ছিল না। মার্চ মাসে হঠাৎ পতনের পর এপ্রিল মাসে উল্টো পর্যটক বেড়ে যায়। বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর মূল কারণ ছিল ইস্টারের সময়কাল, যা গত বছর মার্চে হলেও এ বছর পড়েছিল এপ্রিলে।
তবে গ্রীষ্মকালীন মৌসুমের পূর্ণাঙ্গ চিত্র স্পষ্ট হওয়ার পর বোঝা গেছে, পতনটা প্রকৃত। বিশ্বজুড়ে পর্যটন আবার মহামারি-পূর্ব স্তরে ফিরলেও যুক্তরাষ্ট্রে উল্টো কমে গেছে।
সবচেয়ে বড় ধাক্কা কানাডা থেকে
সবচেয়ে বেশি পতন দেখা গেছে কানাডা থেকে আসা পর্যটকদের ক্ষেত্রে। আকাশপথে কানাডীয় পর্যটকের সংখ্যা কমেছে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, আর গ্রীষ্মকালে এই পতন দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশে। সড়কপথে প্রবণতা আরও ভয়াবহ—জুন মাসে গত বছরের তুলনায় কমেছে পুরো এক-তৃতীয়াংশ।
কানাডীয় রপ্তানির ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপ এবং দেশ দখলের হুমকির জেরে অনেক কানাডীয় নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র সফর বর্জন করছেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
কোন রাজ্যগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত?
নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক আগমন কমেছে সাত শতাংশ। বোস্টন লোগান ও শিকাগোর ও’হেয়ার বিমানবন্দরে এ পতন প্রায় আট শতাংশ।
তবে ফ্লোরিডার পর্যটনকেন্দ্রগুলোÑ অরল্যান্ডো ও টাম্পাÑ উল্টো আগের চেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করেছে। ফলে জাতীয় পর্যায়ে পতন কিছুটা সামাল দিতে পেরেছে।
অর্থনৈতিক প্রভাব
ভ্রমণ ও পর্যটন খাত যুক্তরাষ্ট্রের মোট জিডিপির প্রায় তিন শতাংশ। আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের হিসাবে, পর্যটক কমায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি হতে পারে প্রায় ১২ দশমিক ৫ বিলিয়ন (১ হাজার ২৫০ কোটি) ডলার।
তবে দেশীয় পর্যটকদের খরচ বেড়ে যাওয়ায় আপাতত হোটেল ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন।
মার্কিনিদের বিদেশ গমন বেড়েছে
বিদেশি পর্যটক কমলেও মার্কিন নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণ বেড়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে মার্কিন যাত্রী বেড়েছে প্রায় ২ দশমিক ৯ শতাংশ।
২০২৪ সালে বিদেশে যাওয়া মার্কিন নাগরিকের সংখ্যা বিদেশ থেকে আসা পর্যটকের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি ছিল। এ বছর সেই ব্যবধান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ শতাংশে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বিদেশে মার্কিন নাগরিকদের বাড়তি খরচ এবং দেশের ভেতরে বিদেশিদের কম খরচ- ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।