রয়টার্স, এনডিটিভি: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি বহাল রাখার পক্ষে রায় দিয়েছে দেশটির আপিল আদালত। ট্রাম্পের আরোপিত ব্যাপক শুল্ক বাণিজ্য আদালতে স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পরদিন গত বৃহস্পতিবার এই পালটা রায় দেওয়া হয়। মার্কিন আপিল আদালতের সিদ্ধান্তে বলা হয়, পুরো আপিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত নিম্ন আদালতের রায় স্থগিত রাখার আদেশ দেওয়া হলো। নিজ বক্তব্য পেশ করার জন্য বাদী পক্ষকে ৫ জুন এবং সরকার পক্ষকে ৯ জুন সময় দেওয়া হয়। মার্কিন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত বুধবার জানায়, এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জাতীয় হুমকি মোকাবেলার উদ্দেশ্যে সৃষ্ট আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে শুল্ক আরোপ করেছেন। অথচ মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী শুল্ক আরোপের অধিকার কংগ্রেসের হাতে বর্তায়। গত এপ্রিলে ব্যাপকহারে শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। ওই নীতিকে তিনি স্বাধীনতা দিবসের শুল্ক (লিবারেশন ডে ট্যারিফ) নামে অভিহিত করেছেন। এগুলোর আওতায় কানাডা, মেক্সিকো, চীনসহ অনেক দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করা হয়। ট্রাম্প দাবি করেন, এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিলসহ মাদকদ্রব্য প্রবাহে ভূমিকা রাখছে, তাই তিনি জরুরি ভিত্তিতে ট্যারিফ আরোপের সিদ্ধান্ত নেন। বাণিজ্য আদালতের গতকালের রায়ে ট্রাম্পের শুল্ক বাতিল বা অন্তত সাময়িকভাবে স্থগিতের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। ওই রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ট্রাম্প। দেশকে হুমকির মুখে ফেলা ভয়াবহ ওই সিদ্ধান্তকে সর্বোচ্চ আদালত পালটে দেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেন, ওই ভয়াবহ সিদ্ধান্তে বলা হলো, শুল্ক আরোপ করতে আমাকে নাকি কংগ্রেসের অনুমতি নিতে হবে। এই সিদ্ধান্ত বহাল থাকলে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা পুরোপুরি ধুলিস্যাত হয়ে যাবে।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রায় এক হাজার ৮০ জন ভারতীয় নাগরিক যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে গেছেন। গত বৃহস্পতিবার এ তথ্য দিয়েছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। জয়সওয়াল বলেছেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে স্বেচ্ছায় বা মার্কিন প্রশাসনের বিতাড়নে প্রায় এক হাজার ৮০ জন ভারতীয় ফিরে এসেছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৬২ শতাংশ ব্যক্তি ভারতে বাণিজ্যিক ফ্লাইটে আসেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অভিবাসী ইস্যুতে ভারতের সহযোগিতামূলক মনোভাব রয়েছে উল্লেখ করে জয়সওয়াল বলেন, অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া বা বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের বিতাড়নের বিষয়ে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ বোঝাপড়া রয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেলে আমরা তাদের ফিরিয়ে নেব।

হার্ভার্ডে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক দ্বন্দ্বের বিষয়েও কথা বলেছেন জয়সওয়াল। পরিস্থিতি নিয়ে ভারত সম্পূর্ণ অবগত আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিসা দেওয়া একটি সার্বভৌম দেশের নিজস্ব এখতিয়ার। তবে, ভারতীয় শিক্ষার্থীদের মেধার ভিত্তিতে আবেদন যাচাই করে মার্কিন অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে যোগদানের সুযোগ দেওয়া হবে বলে আমরা আশাবাদী। বিদেশে অবস্থানরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের দেখভালের বিষয়টি তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, চলমান ইস্যুতে যে কোনও পরিবর্তনের সঙ্গে তারা তাল মিলিয়ে চলতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিবেন।

শিক্ষার্থী ভিসার জন্য নতুন আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার না নিতে বিশ্বব্যাপী মার্কিন দূতাবাসগুলোর প্রতি বুধবার এক নির্দেশনা দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা পাওয়ার সুযোগ আরও সংকুচিত হয়ে পড়লো।