২২ মার্চ, টাইমস অব ইসরাইল , রয়টার্স: ফিলিস্তিনের গাজায় ‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ফিরিয়ে আনার’ আহ্বান জানিয়েছেন জার্মানি, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। ইসরাইলী সেনাবাহিনী ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে তাদের নতুন আক্রমণ জোরদার করার প্রেক্ষাপটে এ আহ্বান জানান তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইসরাইল মঙ্গলবার যুদ্ধবিধ্বস্ত ছিটমহলে নতুন করে আক্রমণ শুরু করেছে। যা ১৯ জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির পর থেকে বিদ্যমান শান্তিকে ভেঙে দিয়েছে।

এক যৌথ বিবৃতিতে মন্ত্রীরা বলেছেন, ‘গাজায় ইসরাইলী হামলা পুনরায় শুরু হওয়া গাজার জনগণের জন্য এক নাটকীয় পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় আমরা মর্মাহত এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। ইসরাইলী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ গত শুক্রবার হামাস যদি অবশিষ্ট ইসরাইলী জিম্মিদের মুক্তি না দেয়, তবে গাজা উপত্যকার বর্ধিতাংশ তাদের দখলে নেয়ার হুমকি দেওয়ার পর এই যৌথ আবেদনে জানানো হয়। তিন মন্ত্রী জার্মানির আনালেনা বেয়ারবক, ফ্রান্সের জিন-নোয়েল ব্যারোট এবং ব্রিটেনের ডেভিড ল্যামি-‘যুদ্ধবিরতি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত এবং যাতে স্থায়ী হয় তা নিশ্চিত করার জন্য সকল পক্ষকে পুনরায় আলোচনায় যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন’। তারা বলেছেন, হামাসকে অবশ্যই ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডে থাকা কয়েক ডজন জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে এবং এই গোষ্ঠীটি ‘গাজা শাসন করবে না বা ইসরাইলের জন্য আর হুমকি হবে না’। মিত্ররা আরও বলেন, ইসরাইলকে ‘আন্তর্জাতিক আইনকে সম্পূর্ণরূপে সম্মান করতে হবে’ এবং ভূখণ্ডে সাহায্য সরবরাহের অনুমতি দিতে হবে।

গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নেতানিয়াহুকে চিঠি মুক্তিপ্রাপ্ত পণবন্দীদের: গাজায় যুদ্ধ বন্ধে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে চিঠি লিখেছেন হামাসের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাওয়া ৪০ জনসহ মোট ২৫০ জিম্মির পরিবারের সদস্যরা। চিঠিতে গাজায় নতুন সামরিক অভিযান বন্ধ করে হামাসের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা, যাতে বাকি ৫৯ জিম্মির মুক্তি নিশ্চিত করা যায়। তারা আরও সতর্ক করে বলেছেন, তা না করলে জীবিত জিম্মিদের হত্যা করা হতে পারে। চিঠিতে বলা হয়েছে, “এই চিঠিটি রক্ত ও অশ্রু দিয়ে লেখা। এটি আমাদের সেসব বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সদস্যরা লিখেছেন যাদের প্রিয়জনদের বন্দীদশায় হত্যা করা হয়েছে এবং যারা চিৎকার করছে, ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন’। আলোচনার টেবিলে ফিরে আসুন এবং একটি চুক্তি সম্পূর্ণ করুন যা যুদ্ধ শেষ করার মূল্যে সমস্ত জিম্মিদের ফিরিয়ে দেবে। সামরিক চাপ তাদের বিপদে ফেলছে। সমস্ত জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার চেয়ে জরুরি আর কিছুই নেই।”

এতে আরও বলা হয়েছে, “আমরা সকলেই (যুদ্ধ বন্ধ) সমর্থন করি। যারা বন্দীদশা থেকে ফিরে এসেছে তারা ভয়াবহতা সহ্য করেছে, যারা এখনও গাজায় জিম্মি, তাদের পরিবার আতঙ্কে অস্থির হয়ে আছে, যারা তাদের প্রিয়জনদের আলিঙ্গন করতে পেরেছেন এবং যারা তাদের প্রিয়জনকে দাফন করতে বাধ্য হয়েছেন, তারা ভাবতেন যে তারাও বেঁচে ফিরতে পারতেন।” এতে বলা হয়েছে, “যুদ্ধে জীবিত জিম্মিদের হত্যা করা হয় এবং মৃতদের নিখোঁজ করা হয়। এটি কোনও স্লোগান নয়, এটি বাস্তবতা। ৪১ জন জিম্মি তাদের জীবন দিয়ে মূল্য দিয়েছেন, আমরা, তাদের পরিবারের সদস্যরা, মূল্য দিয়েছি। তারা ফিরে আসতে পারত, কিন্তু তারা ফিরে আসবে না।”

জিম্মিদের বাঁচানো বা ফিরিয়ে না এনে অন্তহীন যুদ্ধ বেছে নেওয়ার জন্য এবং তাদের বলীদান দেওয়ার জন্য সরকারের সমালোচনাও করা হয়েছে চিঠিতে। বলা হয়েছে, “এটি একটি অপরাধমূলক নীতি- আপনার ৫৯ জন জিম্মিকে বলী দেওয়ার কোনও এখতিয়ার নেই।” চিঠিটি যুদ্ধ বন্ধ করে অবিলম্বে আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে শেষ করা হয়েছে। এতে লেখা হয়েছে, “যুদ্ধ সমাপ্তি ও আগামী দিনের সমাধান খুঁজে বের করার বিনিময়েই সব জিম্মিদের মুক্তি। যদি আপনি তা না করেন, তাহলে পরবর্তী জিম্মির রক্ত (মৃত্যু) এবং সমস্ত জিম্মির ভাগ্য আপনার হাতে থাকবে।”

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ইসরাইল ও হামাস গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দীবিনিময় চুক্তিতে সম্মত হয়, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ৪২ দিন স্থায়ী ছিল। এর অধীনে হামাস ৩০ জন জীবিত জিম্মি এবং আটজন নিহত বন্দীর মৃতদেহ ফেরত দেয়। এর বিনিময়ে মুক্তি পায় ইসরাইলী কারাগারে থাকা প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনী।