মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য ‘প্রয়োজনীয় শর্তে’ সম্মত হয়েছে ইসরাইল। তিনি বলেছেন, এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের চূড়ান্ত খসড়া কাতার ও মিসর উপস্থাপন করবে। তবে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইল তা নিশ্চিত করেনি। ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, আমরা এই যুদ্ধ শেষ করতে সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করবো। কাতার ও মিসর শান্তির জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমি আশা করি হামাস এই প্রস্তাব গ্রহণ করবে। কারণ এর চেয়ে ভালো কিছু আর আসবে না। পরিস্থিতি শুধু খারাপই হবে। এদিকে হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা তাহের আল-নুনু বিবিসিকে জানান, যুদ্ধ সমাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হলে তারা চুক্তিতে পৌঁছাতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, যুদ্ধ পুরোপুরি শেষ করার নিশ্চয়তা পেলে আমরা যেকোনও প্রস্তাব মেনে নিতে প্রস্তুত। টাইমস অব ইসরাইল, বিবিসি, এপি, রয়টার্স।
ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সাআর এক্সে বলেছেন, জিম্মিদের মুক্তির জন্য যে কাঠামো তৈরি হয়েছে, তা সরকারের মধ্যে ‘অধিকাংশ’ সদস্যের সমর্থন পেয়েছে এবং এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না। ট্রাম্প ও ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর মধ্যে একটি বৈঠক নির্ধারিত রয়েছে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, নেতানিয়াহু যুদ্ধ শেষ করতে চান। আমি মনে করি আগামী সপ্তাহেই একটি চুক্তি হবে।
গত মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে ইসরাইলের কৌশল বিষয়কমন্ত্রী রন ডারমারের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এর আগে ইসরাইলের জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ড্যানি দানন বিবিসিকে বলেছিলেন, ইসরাইল যুদ্ধবিরতির জন্য অবশ্যই প্রস্তুত। তিনি অভিযোগ করেন, হামাস কঠিন অবস্থানে রয়েছে। তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছি। যদি তারা আলোচনায় না আসে, তবে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে আমাদের একমাত্র উপায় হবে আরও সামরিক চাপ।
তিনি বলেন, যুদ্ধ তখনই শেষ হবে, যখন সব জিম্মি ঘরে ফিরবে। বর্তমানে আনুমানিক ৫০ জন ইসরাইলি জিম্মি এখনও গাজায় রয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে হামাসের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা জানিয়েছিলেন, মধ্যস্থতাকারীরা যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির নতুন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ জোরদার করেছে। যদিও ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনায় অগ্রগতি হয়নি।
ইসরাইল বলছে, গাজা যুদ্ধ শেষ হবে তখনই, যখন হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করা যাবে। বিপরীতে হামাস চায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার। এদিকে, ইসরাইল গাজার উত্তরে নতুন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বেসামরিক লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সোমবার গাজা শহরের একটি সমুদ্র তীরবর্তী ক্যাফেতে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হওয়ার পর গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরাইল। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানে ৫৬ হাজার ৬৪৭ জন নিহত হয়েছেন।
গাজার সশস্ত্র গোষ্ঠীকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব রাজি হওয়ার আহ্বান ট্রাম্পের : ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় প্রস্তাবিত নতুন যুদ্ধবিরতি মেনে নিতে উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসকে আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে এ আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গাজায় প্রস্তাবিত ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতিকে ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’ উল্লেখ করে মঙ্গলবার ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, “গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত প্রস্তাবে ইসরাইল রাজি হয়েছে। এই সময়সীমায় এ যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধের জন্য কাজ করবে। এটি একটি চূড়ান্ত প্রস্তাব এবং কাতার এবং মিসরের প্রতিনিধিরা হামাসকে এই প্রস্তাবের খসড়া অনুলিপি পৌঁছে দেবে।”“আমি আশা করছি, মধ্যপ্রাচ্যের মঙ্গলের স্বার্থে হামাস এই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করবে। কারণ এর চেয়ে ভালো আর কোনো প্রস্তাব আসা সম্ভব নয় এবং যদি এটি কার্যকর না হয় তাহলে সার্বিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আপনাদের সবাইকে এ ব্যাপারে মনোযোগী হওয়ার জন্য ধন্যবাদ।”
গত রোববার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আগামী সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতির হবে বলে আশা করছেন তিনি। পরের দিন সোমবার হোয়াইট হাউজে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। তারপর গত কাল মঙ্গলবার এই নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তির ব্যাপারটি প্রকাশ্যে আনলেন তিনি। স্টিভ উইটকফ যখন তার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এই যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সামনে তুলে ধরেছিলেন, সে সময় হামাস বলেছিল যে তারা ইসরাইলি জিম্মিদের ফেরত দিতে প্রস্তত এবং গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত যে কোনো প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি। অন্যদিকে ইসরাইল শর্ত দিয়েছিল যে হামাসকে অবশ্যই অস্ত্র জমা দিতে হবে এবং রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিসেবে বিলুপ্ত হতে হবে। ইসরাইলের এই শর্তে রাজি হয়নি হামাস, তাই উইটকফের সেই প্রস্তাবও সে সময় আর এগোয়নি।
ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির ঘোষণায় যা বলল হামাস : হামাসের সঙ্গে ৬০ দিনের অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি করতে প্রয়োজনীয় শর্তে ইসরাইল রাজি। গতকাল বুধবার ভোরে সামাজিকমাধ্যম ট্রুথে এক পোস্টে এ তথ্য জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, এই সময়টায় হামাস ও ইসরাইলের সঙ্গে তাদের আলোচনা হবে। যারমাধ্যমে যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধের চেষ্টা চালানো হবে।
ট্রাম্পের এ যুদ্ধবিরতির ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় হামাসের কর্মকর্তা তাহের আল নুনু জানিয়েছেন, যে ধরনের চুক্তিই হোক না কেন, সেটির মাধ্যমে অবশ্যই যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ হতে হবে। তিনি বলেছেন, “যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছাতে হামাস সিরিয়াস। এই যুদ্ধ শেষ হবে এমন যে কোনো উদ্যোগে রাজি হতে প্রস্তুত হামাস।” গত তিন চার মাস ধরেই হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে দখলদার ইসরাইল চায় অস্থায়ী এ চুক্তি শেষ হওয়ার পর তারা আবারও গাজায় হামলা শুরু করবে। অপরদিকে হামাস জানিয়েছে, অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির মাধ্যমেই যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ হতে হবে। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়ে গেছে। যে কারণে এতদিন চেষ্টার পরও অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির চুক্তি করা সম্ভব হয়নি। গতকাল বুধবার কাতার ও মিসরীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিসরের রাজধানী কায়রোতে বৈঠকে হামাস। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছেন সেটি নিয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হবে।