রয়টার্স : সৌদি আরবের ডি-ফ্যাক্টো শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হওয়ার কথা। তেল, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং সম্ভাব্য পারমাণবিক জ্বালানি সহযোগিতাসহ দুই দেশের দীর্ঘদিনের অংশীদারিত্ব আরও গভীর করাই এই বৈঠকের প্রধান লক্ষ্য। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ক্রাউন প্রিন্সের এই সফরটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। কারণ সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের পর এটি তার প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।
আন্তর্জাতিক তদন্তে ইস্তাম্বুলে সৌদি এজেন্টদের অভিযানে প্রিন্স অনুমোদন দিয়েছিলেন বলে উঠে এলেও তিনি সরাসরি দায় অস্বীকার করেন। সাত বছরের বেশি সময় পর উভয় দেশই এখন সম্পর্ক পুনর্গঠনের দিকে এগোচ্ছে।
গত মে মাসে রিয়াদ সফরে ট্রাম্প সৌদি আরব থেকে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলারের সম্ভাব্য বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি পান। এবার হোয়াইট হাউজ বৈঠকে সেই অঙ্গীকারকে সামনে রেখে বড় আকারের বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তি চূড়ান্ত করার চেষ্টা করবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
তবে মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান নেওয়ার সম্ভাবনা কম। আগের সফরেও ইস্যুটি এড়িয়ে গিয়েছিলেন ট্রাম্প। সৌদি আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিশেষজ্ঞ আজিজ আলঘাশিয়ান বলেন, “খাশোগি অধ্যায় পেছনে ফেলে দু’দেশ এখন নতুন বাস্তবতায় এগোচ্ছে।” দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রকে সস্তায় তেল সরবরাহ করে আসছে। আর যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা দিচ্ছে— এটাই ছিল দুই দেশের ঐতিহ্যবাহী বোঝাপড়া।
কিন্তু ২০১৯ সালে ইরানের হামলায় সৌদি তেল স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর ওয়াশিংটনের দুর্বল প্রতিক্রিয়া সম্পর্ককে নড়বড়ে করে দেয়। ২০২৫ সালে ইসরাইলের দোহা হামলার পর সেই উদ্বেগ আরও গভীর হয়।
ঘটনার পর ট্রাম্প কাতারের সঙ্গে নির্বাহী প্রতিরক্ষা চুক্তি করেন। বিশ্লেষকদের ধারণা, সৌদিও এখন একই ধরনের চুক্তি চাইছে।
রিয়াদ নিজেকে আরও সুস্পষ্ট এবং কংগ্রেস–অনুমোদিত প্রতিরক্ষা আশ্বাসে দেখতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র এর শর্ত দিয়েছে— ইসরাইলের সঙ্গে স্বাভাবিকীকরণে অগ্রগতি দেখাতে হবে।
সৌদি আরব বলছে, ইসরাইলকে আগে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। কিন্তু ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও সেই দাবির বিরোধিতা করেছেন।
এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প কাতার–ধাঁচের আংশিক নির্বাহী প্রতিরক্ষা নির্দেশ দিতে পারেন, যা সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নয়, তবে জরুরি হুমকির সময় দ্রুত পরামর্শ ও প্রতিক্রিয়ার সুযোগ দেবে।
প্রিন্সের ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সৌদি আরব দ্রুতগতির শিল্পায়নের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও পারমাণবিক জ্বালানি খাতে বড় ধরনের অগ্রগতি চাইছে।
উন্নত কম্পিউটার চিপস পাওয়াটা বিশেষ জরুরি— যাতে তারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে। পারমাণবিক খাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি পেলে সৌদি আরব আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের, বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরানের সমকক্ষ অবস্থানে পৌঁছে যাবে।