রয়টার্স : যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর ডাউনটাউন এলাকার কাছাকাছি রাস্তাগুলোতে হাজারো মানুষ নেমে আসে। গত সোমবার গান গেয়ে, স্লোগান দিয়ে ও হাতে ব্যানার উঁচিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানায় তারা। ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, শিকাগো শহরকে ন্যাশনাল গার্ড সৈন্য এবং ফেডারেল অভিবাসন সংস্থার (আইসিই) এজেন্টে ভরিয়ে দেবেন তিনি।
এই বিক্ষোভ মিছিলটি যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমিক দিবসে অনুষ্ঠিত ‘বিলিয়নিয়ারের চেয়ে শ্রমিকরা আগে’ শীর্ষক একটি সমাবেশের অংশ ছিল। তবে শিকাগোর বিক্ষোভটি আলাদাভাবে তীব্র রূপ নেয়। কারণ এখানকার বাসিন্দারা ট্রাম্পের হুমকির বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে। লস অ্যাঞ্জেলেস ও ওয়াশিংটন ডিসির মতো ডেমোক্র্যাট-নিয়ন্ত্রিত শহরে যেভাবে ফেডারেল মোতায়েন চলছে, ট্রাম্প শিকাগোকেও একইভাবে টার্গেট করার ঘোষণা দিয়েছেন।
মেয়র ব্র্যান্ডন জনসন বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বলেন, শিকাগো ফেডারেল হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করবে। তিনি ঘোষণা করেন, ‘এটাই সেই শহর যে দেশকে রক্ষা করবে।’ এরপরই শিকাগোর নীল-ডোরা পতাকা নেড়ে উল্লাস প্রকাশ করে বিক্ষোভকারীরা। মিছিল চলার সময় কেউ কুকুর হাঁটাচ্ছিল, কেউ শিশুদের কাঁধে নিয়ে হাঁটছিল। রাস্তার পাশের রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফেতে বসা মানুষজন মুষ্টি উঁচিয়ে ও গাড়িচালকরা হর্ন বাজিয়ে তাদের সমর্থন জানায়। আয়োজকরা দাবি করেছেন, ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নিয়েছিল।
অনেক বিক্ষোভকারী জানান ট্রাম্পের হুমকির কারণে তারা উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প শিকাগোকে অপরাধের জন্য দায়ী করে একে ‘একটি নরক’, ‘হত্যার মাঠ’ এবং ‘একটি বিশৃঙ্খল শহর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে সোমবারের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিকাগোর বাসিন্দারা বলেছেন, শহরে অপরাধ সমস্যা থাকলেও ন্যাশনাল গার্ড কোনও সমাধান নয়। শহরের অপরাধের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম এই শহরে হত্যার হার সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। যদিও ২০২৫ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা রাতের বেলা তাদের এলাকায় নিরাপদ বোধ করেন না। তবু সোমবার বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকেই বলেছেন, তারা শহরটিকে মোটের ওপর নিরাপদ মনে করেন।
শহর ও অঙ্গরাজ্যের নেতারা ইতোমধ্যে ফেডারেল বাহিনী ঠেকাতে প্রস্তুতি নিয়েছেন। এমনকি মামলার হুমকিও দিয়েছেন। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পদক্ষেপ মার্কিন সংবিধান এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর সেই আইন ভঙ্গ করবে, যা সেনাবাহিনীকে অভ্যন্তরীণ আইন প্রয়োগে ব্যবহারে নিষিদ্ধ করে। মেয়র জনসন শনিবার এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যাতে বলা হয়েছে শিকাগো পুলিশ ফেডারেল এজেন্ট বা ন্যাশনাল গার্ড সৈন্যদের সঙ্গে সহযোগিতা করবে না। এছাড়া তিনি নির্দেশ দেন, পুলিশ সদস্যরা যেন কেবল সরকারি পোশাক পরিধান করেন এবং মুখোশ না পরেন। এদিকে অভিবাসী অধিকার গোষ্ঠীগুলোও সম্ভাব্য তৎপরতার বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তিশালী করছে। তারা আরও আইনজীবী নিয়োগ করছে, অভিবাসন হটলাইন চালু রাখছে এবং ‘আপনার অধিকার জানুন’ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করছে।