এনডিটিভি, এএফপি : যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন, তবে তিনি তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করবেন। তবে শর্ত হলো, ইউক্রেনকে যেন কোনো ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে না হয়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগে এক পডকাস্টে এমন কথা বলেন হিলারি। তিনি বলেন, ‘যদি ট্রাম্প এই ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ করতে পারেন, আর সেটা যদি এমনভাবে হয় যাতে ইউক্রেনকে আগ্রাসনকারীর কাছে ভূখণ্ড ছাড়তে না হয়। তিনি সত্যিকারভাবে যেন পুতিনের মোকাবিলা করতে পারেন। তবে হয়তো এটাই সুযোগ। যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ কাজের নকশাকার হন, আমি তাঁকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করব।’ হিলারি আরও বলেন, ‘ট্রাম্প একজন বন্ধুর সঙ্গে নয়, বরং দেখা করতে যাচ্ছেন এক প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে। যিনি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোটকে ধ্বংস করতে চায়।’

আলাস্কার অ্যানকারেজের সামরিক ঘাঁটি জয়েন্ট বেস এলমেনডর্ফ-রিচার্ডসনে ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের ঠিক আগে এ মন্তব্য করলেন হিলারি। এয়ারফোর্স ওয়ানে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, বৈঠক ভালোভাবেই শেষ হবে। আর যদি না হয়, তবে আমি খুব দ্রুত ফিরে আসব।’

বিমানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করা হয়, এই বৈঠক সফল হবে কীভাবে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি দ্রুত যুদ্ধবিরতি চাই। আজই হবে কি না জানি না, তবে আজ না হলে আমি খুশি হব না। আমি এখানে হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করার জন্যই এসেছি।’ ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেছিলেন। নির্বাচনী প্রচারে হিলারি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ট্রাম্পের সমালোচনা করেছিলেন। কারণ, তিনি পুতিনের প্রশংসা করেন। ওই নির্বাচনের সময় অবশ্য ইউক্রেনে হামলা চালায়নি রাশিয়া। হিলারি বলেছিলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) ভ্লাদিমির পুতিনের মতো স্বৈরশাসকদের প্রশংসা করেন। আবার আমাদের মিত্রদের সঙ্গে ঝগড়া বাধান।’

সফর ছিল মাত্র সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার: রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষ করেছেন বলে জানিয়েছে তাস। এর মধ্যে প্রায় তিন ঘণ্টা তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বন্ধ কক্ষে বৈঠকে কাটান। গত শুক্রবার গ্রিনিচ মান সময় বিকেল ৫টা ৫৪ মিনিটে (স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৫৪ মিনিট) পুতিনের বিমান আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজের একটি সামরিক ঘাঁটিতে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর দুই নেতা একসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের লিমুজিনে ওঠেন এবং সেখান থেকেই একান্ত আলোচনার মাধ্যমে শীর্ষ বৈঠকের সূচনা হয়। বিমানবন্দরে সাক্ষাতের ১৫ মিনিট পর ক্ষুদ্র পরিসরের আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু হয়, যা প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এরপর দুই নেতা গণমাধ্যমের সামনে আসেন। পরে রুশ প্রেসিডেন্ট কাছাকাছি একটি স্মৃতিসৌধ কবরস্থানে গিয়ে সোভিয়েত পাইলটদের কবরের কাছে ফুল অর্পণ করেন। এটি ছিল প্রায় এক দশক পর পুতিনের যুক্তরাষ্ট্র সফর। এর আগে তিনি ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন। এদিকে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচনায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিন্দুমাত্র নমনীয় হননি, যুদ্ধের ‘মূল কারণ’ নিয়ে কথা বলেছেন এবং অবস্থান পরিবর্তনের কোনো ইঙ্গিত দেননি। হুমকির সুরে তিনি কিয়েভ ও ইউরোপীয় মিত্রদের সতর্কও করেছেনÍতার টেনে আনা চলমান প্রক্রিয়ায় যেন তারা হস্তক্ষেপ না করে। ট্রাম্পকে ক্লান্ত ও বিরক্ত দেখাচ্ছিল।