জাস্ট দ্য নিউজ, রয়টার্স : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) আটকে পড়া আফগান শরণার্থীদের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতির কয়েক দিন আগেই আমিরাত তাঁদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে এবং এ সিদ্ধান্তের কথা ওয়াশিংটনকে জানিয়েছে। গত রোববার হাতে আসা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি গোপন বার্তায় বিষয়টি উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা অংশীদার আরব আমিরাত ২০২১ সালে কাবুল থেকে পালিয়ে আসা কয়েক হাজার আফগানকে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় দিতে রাজি হয়। সে বছরের আগস্ট মাসে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো সেনা প্রত্যাহারের শেষ পর্যায়ে তালেবানরা পশ্চিমা-সমর্থিত আফগান সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেয়। গত কয়েক বছরে প্রায় ১৭ হাজার আফগানকে ‘আমিরাতস হিউম্যানিটারিয়ান সিটি’ নামে আবুধাবির একটি শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো সেখানে ৩০ জনের বেশি আফগান অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে আটকে আছেন। গত রোববার নামের একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা কয়েকজন আফগান শরণার্থীকে তালেবান কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই দিন নিজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প লেখেন, ‘আমি তাঁদের রক্ষার চেষ্টা করব, তা এখনই শুরু করছি।’ পোস্টের সঙ্গে আটকা পড়া আফগানদের নিয়ে একটি প্রতিবেদন শেয়ার করেন তিনি। তবে কয়েকজনের ব্যাপারে তাঁর ওই প্রতিশ্রুতি হয়তো অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিশেষ উপদেষ্টা সালিম আল-জাবি আবুধাবিতে গত ১০ জুলাই মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে জানান, জুলাইয়ের শুরুতে দুটি পরিবারকে ‘সফলভাবে ও নিরাপদে’ আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। নথিতে বলা হয়েছে, আল-জাবি মার্কিন কর্মকর্তাদের বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ওয়াশিংটনের বর্তমান নীতির বিষয়টি বুঝতে পারলেও তারা ‘ভালোর জন্য এ অধ্যায় গুটিয়ে ফেলার’ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ জন্য তারা ২০ জুলাইয়ের মধ্যে বাকি ২৫ জন আফগানকে ফেরত পাঠানোর পদক্ষেপ নেবেন। তিনি আরও বলেন, আমিরাত সরকার তালেবানের কাছ থেকে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি চাইবে।
বাকি ব্যক্তিদের ফেরত পাঠানো হয়েছে কি না বা আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো দুই পরিবারের অবস্থা কী, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। ওই নথি ও দুই আফগান পরিবারকে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আগে প্রকাশিত হয়নি। ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্ট থেকে বোঝা যায়, আমিরাতের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না।
এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর, হোয়াইট হাউস ও আমিরাত সরকার কেউই তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি। নথিতে বলা হয়েছে, সালিম আল-জাবি মার্কিন কর্মকর্তাদের জানান, জুলাইয়ের শুরুতে দুটি পরিবারকে তাদের অনুরোধে আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হয়েছে। কারণ, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তবে ঘটনাটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত দুটি সূত্র এ বর্ণনার বিরোধিতা করেছে। তারা জানিয়েছে, আরব আমিরাত সরকার ও দেশটিতে নিযুক্ত তালেবান দূত ‘এমিরেটস হিউম্যানিটেরিয়ান সিটি’-তে থাকা আফগান পরিবারগুলোকে একধরনের চাপে ফেলছেন। পরিবারগুলোকে বলা হচ্ছে, তারা যেন ‘স্বেচ্ছায়’ আফগানিস্তানে ফেরত যাওয়ার চিঠিতে স্বাক্ষর করে, না হলে তাদের গ্রেপ্তার করে জোরপূর্বক ফেরত পাঠানো হবে।