ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তাদের বৈঠক ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ হয়েছে। অপরদিকে ক্রেমলিন বলেছে,, বৈঠক খুবই ইতিবাচক হয়েছে। বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা।

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার ১৫ আগস্ট দীর্ঘ এ বৈঠক শেষে পুতিনের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প বলেন, আমি এখন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ন্যাটো মিত্রদের সঙ্গে কথা বলব। চুক্তি ‘শেষ পর্যন্ত’ তাদের ওপর নির্ভর করবে এবং তাদের সম্মত হতে হবে। চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু আমরা তা সেখানে পেলাম না।’

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়েও তিনিও ‘আন্তরিকভাবে আগ্রহী’। এই যুদ্ধকে ‘ট্রাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য এই যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ নিরসন করতে হবে। বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রে ইউক্রেন সংঘাত ছিল জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘একটি স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আমাদের এই সংঘাতের মূল কারণগুলো নির্মূল করতে হবে।’ তবে মূল কারণগুলো বলতে কী বুঝিয়েছেন, তার বিস্তারিত তিনি উল্লেখ করেননি।

ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়রা শান্তিপ্রক্রিয়ায় বাধা না দেয়ার পথ বেছে নেবেন বলে আশা করছেন তিনি। রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘শুভ কামনার স্বর প্রকাশের জন্য আমি ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, উভয়পক্ষকেই ফলাফলের দিকে নজর দিতে হবে।

বৈঠক ‘খুবই ইতিবাচক’ হয়েছে: ক্রেমলিন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন আলাস্কায় যান, তখন তাঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গ সামনে এনে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমকে একহাত নিয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে মারিয়া লেখেন, ‘পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম এখন এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছে, যাকে উন্মাদনা বলা যায়, প্রায় পাগলামির কাছাকাছি। টানা তিন বছর তারা রাশিয়ার একঘরে হয়ে পড়া নিয়ে অবিরাম প্রচার চালিয়েছে। অথচ আজ তারা যুক্তরাষ্ট্রে রুশ প্রেসিডেন্টকে লালগালিচা সংবর্ধনা পেতে দেখল।’ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ‘খুবই ইতিবাচক’ আলোচনা হয়েছে।

স্থানীয় সময় গত শুক্রবার (১৫ আগস্ট) দুই নেতার ওই বৈঠকের পর প্রতিক্রিয়ায় এমন কথা বলেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। পেসকভ বলেন, আলাস্কায় দুই নেতার বৈঠক ‘খুবই ইতিবাচক’ হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজে পেতে এ আলোচনা উভয় দেশকে ‘আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একসঙ্গে এগিয়ে যেতে’ সহায়তা করবে।

বৈঠকে একটি বিষয়ে একমত হননি পুতিন সেটি কী বললেন না ট্রাম্প

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি শিগগিরই হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, এতে যুদ্ধবন্দীদের বিনিময়ের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ট্রাম্প বলেছেন, পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে একটি বিষয়ে একমতে পৌঁছানো যায়নি। আর সে কারণেই চুক্তি হয়নি। তবে বিষয়টি কী, তা বলেননি ট্রাম্প।

ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বলব ৫০-৫০। কারণ, অনেক কিছুই ঘটতে পারে। তবে আমি মনে করি, প্রেসিডেন্ট পুতিন সমস্যার সমাধান চান।’

ট্রাম্প দাবি করেন, যুদ্ধবন্দী বিনিময়ের সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অগ্রগতি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আজ আমাকে তাঁরা হাজার হাজার মানুষের একটি তালিকা দিয়েছেন হাজার হাজার যুদ্ধবন্দী, যাঁরা মুক্তি পাবেন।’

ফক্স নিউজের সঞ্চালক হ্যানিটি এ সময় জানতে চান, এমন কোনো চুক্তির বিষয়ে আজকের বৈঠকে তাঁরা সম্মত হয়েছেন কি না? জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘বিষয়টি এখনো ঝুলে আছে।’ তাঁর ভাষায়, ‘আসলে তাঁদের এ প্রস্তাব গ্রহণ করতে হবে।’ তবে কে তাঁকে যুদ্ধবন্দীদের তালিকা দিয়েছেন, কিংবা এসব বন্দীরা রাশিয়া নাকি ইউক্রেনের নাগরিক, সেসব বিষয়ে কিছুই বলেননি ট্রাম্প।

জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ

আলাস্কায় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও পশ্চিমা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল শনিবার ১৬ আগস্ট ভোরে ওয়াশিংটন ফেরার পথে এই আলাপ হওয়ার কথা জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা এ খবর জানিয়েছে। দীর্ঘ ওই ফোনালাপে জেলেনস্কি ছাড়াও অংশগ্রহণ করেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডার লিয়েন, পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট্টে এবং জার্মানি, ফিনল্যান্ড, পোল্যান্ড, ইতালি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের নেতৃবৃন্দ। ফোনকলে সবাইকে আলাস্কা বৈঠকের ব্রিফ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, সবার সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টা আলাপ করেছেন ট্রাম্প। বৈঠকের বিষয়ে ইউক্রেনের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও জানা না গেলেও, ফোনালাপের পর জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি সোমবার ওয়াশিংটন সফর করছেন।

ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যতের ছুতোয় আলোচনার আয়োজন করা হলেও, আমন্ত্রণ পাননি জেলেনস্কি। বৈঠকের আগে তিনি ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে সরাসরি এবং ট্রাম্পের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন। তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেছিলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার নাম করে ভূমি দখলের পাঁয়তারা করবেন পুতিন।

তবে বৈঠকটি কার্যকর হওয়ার বিষয়টি জেলেনস্কির ওপর নির্ভর করছে মন্তব্য করে ট্রাম্প বলেছেন, এখন এর বাস্তবায়ন নির্ভর করছে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির ওপর। আমি তো বলব, ইউরোপীয় দেশগুলোরও এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা অংশগ্রহণ করা উচিত।

ফক্স নিউজের ওই সাক্ষাৎকারে, দ্বিতীয় দফার আলোচনাকে ত্রিপাক্ষিক করার আকাক্সক্ষা প্রকাশ করে ট্রাম্প আবারও বলেছেন, তারা (পুতিন-জেলেনস্কি) চাইলে আমি পরবর্তী বৈঠকে উপস্থিত থাকব। হয়ত প্রেসিডেন্ট পুতিন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং আমার মধ্যে পরবর্তী দফার আলোচনা হবে।

ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পকে যে শর্ত দিলেন পুতিন

চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনো চুক্তি নেই উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, ‘ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু আমরা শেষ পর্যায়ে পৌঁছাইনি।’ যৌথ সংবাদ সম্মেলনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়েও তিনিও ‘আন্তরিকভাবে আগ্রহী’। এই যুদ্ধকে ‘ট্রাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যুদ্ধ বন্ধের জন্য এই যুদ্ধের ‘মূল কারণগুলো’ নিরসন করতে হবে। বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রে ইউক্রেন সংঘাত ছিল জানিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘একটি স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য আমাদের এই সংঘাতের মূল কারণগুলো নির্মূল করতে হবে।’ তবে মূল কারণগুলো বলতে কী বুঝিয়েছেন, তার বিস্তারিত তিনি উল্লেখ করেননি।