রয়টার্স,এনডিটিভি ,বিবিসি : ইউক্রেনে যুদ্ধ অবসান নিয়ে আজ শুক্রবার বৈঠক করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই বৈঠকের স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে আলাস্কা। স্থান নির্বাচনের বিষয়টি কোনও কাকতালীয় বা খেয়ালি ঘটনা নয়। কেননা, এটা অনেকটা হিরোশিমায় বসে জাপানকে পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতা বোঝানোর মতো বিষয় হতে চলেছে। ১৮৬৭ সালের আগ পর্যন্ত আলাস্কা ছিল মস্কোর জারের শাসনাধীন রুশ কলোনি। সে সময় জার দ্বিতীয় আলেক্সান্ডার মাত্র ৭২ লাখ ডলারের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এটি বিক্রি করে দেন। প্রত্যন্ত ওই অঞ্চল থেকে সে সময় সম্পদ আরোহণের জটিলতা এবং অর্থনৈতিক চাপের কারণে আলাস্কা বিক্রি করাকে সঠিক একটি সিদ্ধান্ত বলেই বিবেচনা করেছিল রুশ শাসকগোষ্ঠী। তবে সম্প্রতি নামমাত্র মূল্যে আলাস্কা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে আবারও আলোচনা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি, লেনদেনের বৈধতা নিয়ে রাশিয়ায় বিতর্ক উঠেছে বারবার—বিশেষত যখন পশম বাণিজ্যের সাবেক কেন্দ্র আলাস্কা পরবর্তীতে সোনা ও তেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত হয়।
২০২২ সালের জুলাইয়ে ইউক্রেন আক্রমণের পর মার্কিন-রুশ উত্তেজনা যখন তুঙ্গে, তখন ক্রেমলিনে আবারও ইস্যুটি সামনে আসে। রুশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ দুমার স্পিকার ভিয়াচেস্লাভ ভলোদিন এটিকে বিতর্কিত ভূখণ্ড উল্লেখ করে রুশ নিয়ন্ত্রণে ফেরত আনার কথা বলেন। তবে রুশ কর্তৃপক্ষ তা পুনরুদ্ধারে তোড়জোড় করার আগ্রহ দেখায়নি। ২০১৪ সালে এক অবসরপ্রাপ্ত নাগরিক এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে পুতিন উল্টো রসিকতাচ্ছলে বলেন, আলাস্কা দিয়ে আপনার কী দরকার? ওখানে খুব ঠান্ডা। ইউক্রেনের ভূমি দখলের বৈধতা নিয়ে আলোচনা করতে আলাস্কাকে বেছে নিয়ে তাই একরকম মানসিক খেলা শুরু করেছেন ট্রাম্প। তবে এর সঙ্গে আইনি ও কৌশলগত কিছু বিষয়ও জড়িত।
প্রতিনিধিদল ছাড়া শুরুতে একান্তে কথা বলবেন ট্রাম্প-পুতিন : এদিকে ক্রেমলিনের সহযোগী ইউরি উশাকভ বৃহস্পতিবার জানান, শুরুতে দুই নেতা কেবলমাত্র দোভাষীদের উপস্থিতিতে ‘একান্ত’ বৈঠক করবেন। এরপর তাদের প্রতিনিধিদল নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা ও কর্ম-প্রাতঃরাশ অনুষ্ঠিত হবে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, রুশ প্রতিনিধিদলে থাকছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রে বেলোউসোভ, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জবাব সমন্বয়কারী অর্থমন্ত্রী আন্তন সিলুয়ানোভ, রুশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ এবং উশাকভ নিজে। ক্রেমলিন আরও জানিয়েছে, বৈঠক শেষে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন হবে। ‘ইউক্রেন সংকটের সমাধান’ বৈঠকের মূল এজেন্ডা, যা নিয়ে আগের আলোচনার ভিত্তিতে এবার বিস্তারিত কথা হবে। এছাড়া বাণিজ্য, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা বিষয়ও আলোচনায় আসবে। উশাকভ জানান, বৈঠক কতক্ষণ চলবে তা আলোচনার অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে। নির্ধারিত সময়সূচি থাকলেও শেষ সময় সম্পূর্ণভাবে দুই প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তে নির্ভর করবে। আলোচনা শেষ হতেই রুশ প্রতিনিধি দল ‘অবশ্যই’ যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে চলে যাবে।