সংগ্রাম ডেস্ক : চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বেশ আত্মতৃপ্তিতে ভুগছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৈঠক অত্যন্ত সফল হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুল্ক হ্রাসে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, আমি মনে করি এটি ছিল এক অসাধারণ বৈঠক। একে আমি ১০-এর মধ্যে ১২ নাম্বার দেব। বৈঠকের সফলতা নিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ ফেন্টানিল মাদক পাচারে চীন কঠোর অবস্থান নেবে, মার্কিন সয়াবিনের আমদানি আবার বহাল করবে এবং বিরল খনিজের রফতানি অব্যাহত রাখবে। ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসলেন ট্রাম্প-শি। দক্ষিণ কোরিয়ার বুসান শহরের বৈঠকের মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের এবারের এশিয়া সফর শেষ হলো। সফরে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেছেন ট্রাম্প। ট্রাম্প জানান, চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশে আনা হবে। এর মধ্যে ফেন্টানিল উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণের শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে নামিয়ে ১০ শতাংশ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, শি ফেন্টানিলের প্রবাহ রোধে কঠোরভাবে কাজ করবেন। কারণ এই কৃত্রিম মাদকটি যুক্তরাষ্ট্রে অতিমাত্রায় সেবনে অপঘাতে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। আমি বিশ্বাস করি তারা সত্যিই পদক্ষেপ নিচ্ছে, তাই শুল্ক হ্রাস করা হয়েছে। ট্রাম্প চুক্তির বিস্তারিত জানালে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে ওঠানামা শুরু হয়। চীনের সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১০ বছরের সর্বোচ্চ থেকে কিছুটা নেমে আসে, আর যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন ফিউচার দুর্বল হয়ে পড়ে। মার্কিন প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের মধ্যে কেবল ভারত ও ব্রাজিলের ওপর এখনও উচ্চ শুল্ক বজায় রয়েছে।

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অবসানের আশায় ওয়াল স্ট্রিট থেকে টোকিও পর্যন্ত শেয়ারবাজারে বৈঠকের আগে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন (এপেক) সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত প্রায় দুই ঘণ্টার এই বৈঠকটি ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে। ট্রাম্প জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের আলোচকরা ইতোমধ্যে এমন এক কাঠামোতে একমত হয়েছেন যা ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এড়াবে এবং চীনের বিরল খনিজ রফতানি সীমাবদ্ধতা স্থগিত করবে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, দুই দেশের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা যেভাবে তীব্র হচ্ছে, এই বাণিজ্য দাঁতাত (সমঝোতা) কতদিন টিকবে—সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

৩০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা শুরুর নির্দেশ : পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা পুনরায় চালু করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়া-চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তাল রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম এ খবর জানিয়েছে। গত বুধবার চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের আগ মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, অন্য দেশগুলো ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছে। তাই আমি রণ মন্ত্রণালয়কে (প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়) একই হারে পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালানো শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছি। পরীক্ষা কীভাবে পরিচালিত হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য দেননি ট্রাম্প। তবে শিগগিরই প্রক্রিয়া শুরু হতে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তিচালিত ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার কিছুদিন পরই মার্কিন সেনাবাহিনীকে এমন প্রশ্নবিদ্ধ নির্দেশনা দিলেন ট্রাম্প। রুশ ক্ষেপণাস্ত্র বুরেভেস্তনিক বিশ্বের যে কোনও প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে টেক্কা দিতে সক্ষম এবং এর পাল্লা এত বেশি দীর্ঘ যে সেটা ‘অসীম’ বললে অত্যুক্তি করা হবে না বলে ক্রেমলিনের তরফ থেকে জানানো হয়। গত বুধবারের পোস্টে ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যাপক বিধ্বংসী ক্ষমতার বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন। তবে মার্কিন অস্ত্রভা-ার সংস্কার ও উন্নত করার কোনও বিকল্প আছে বলে তার মনে হয় না। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের যে কোনও দেশের চেয়ে আমাদের কাছে বেশি পারমাণবিক অস্ত্র আছে। এ তালিকায় দ্বিতীয় রাশিয়া এবং অনেক দূরে হলেও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চীন। চীনের পারমাণবিক কর্মসূচি পাঁচ বছরের মধ্যে একই অবস্থানে পৌঁছে যাবে বলেও দাবি করেন তিনি।