রয়টার্স, তাসনিম ,আল জাজিরা : ইসরাইলের ধারাবাহিক হামলা ইরানে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারেনি, বরং জনগণের মধ্যে একতা ও দেশপ্রেম আরও জোরদার হয়েছে তেহরানের কূটনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ডিপ্লো হাউস’-এর পরিচালক হামিদ গোলামজাদেহ এই মন্তব্য করেছেন। তিনি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “নেতানিয়াহু আসলে ইরানিদের জন্য এক ধরনের উপকারই করেছেন। কারণ এসব হামলার ফল হিসেবে এখন পুরো জাতি একসঙ্গে বলছে এটা সরকারের কোনো বিষয় নয়, এটা পুরো ইরানের অস্তিত্ব রক্ষার প্রশ্ন।
গোলামজাদেহ বলেন, ইরানি জাতি এর আগেও নানা সংকট মোকাবিলা করেছে, যেমন ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে আট বছরের যুদ্ধ। সেই সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ছিল দুর্বল। কিন্তু বর্তমানে পরিস্থিতি অনেক ভিন্ন এবং সক্ষমতা অনেক বেশি।
ইসফাহান রিফাইনারি কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি: ইসরাইলী হামলার পর গুজব ছড়ালেও ইরানের জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসফাহান প্রদেশের তেল শোধনাগার সম্পূর্ণ সচল রয়েছে। আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা ইসনা (ওঝঘঅ)-কে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়, রিফাইনারির সব স্থাপনাগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে এবং কর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশের জন্য জ্বালানি উৎপাদন ও সরবরাহের কাজ অব্যাহত রয়েছে। চূড়ান্ত ও কার্যকর’ পাল্টাঘাতের হুঁশিয়ার সেনাপ্রধানের এদিকে, ইরানের সেনাবাহিনীর প্রধান আমির হাতামি জানিয়ে দিয়েছেন, ইসরাইলের হামলার প্রথম মুহূর্ত থেকেই ইরান ‘সম্পূর্ণ আন্তরিকতা’ ও প্রস্তুতির সঙ্গে জবাব দিচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী এবার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে কার্যকর ও চূড়ান্ত পাল্টাঘাত পরিচালনা করবে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন আংশিক স্থগিত : বিশ্বের বৃহত্তম গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ইরানের দক্ষিণ পার্স গ্যাসক্ষেত্র। ইসরাইলের হামলার পর সেখানে আগুন লাগায়, ইরান গ্যাসক্ষেত্রটিতে উৎপাদন আংশিকভাবে স্থগিত করেছে। গতকাল রবিবার ইরানের আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, ইসরাইলের আরও হামলার আশঙ্কায় এটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইরানের দক্ষিণে বুশেহর প্রদেশের উপকূলে অবস্থিত। এটি ইরানের মোট গ্যাস উৎপাদনের প্রধান উৎস। গ্যাসক্ষেত্রটি ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ ইরান। শনিবারের এ হামলাকে ইরানের তেল ও গ্যাস খাতে ইসরাইলের প্রথম সরাসরি হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
গত শুক্রবার ইসরাইলী হামলার পর থেকেই আশঙ্কায় তেলের দাম ৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। যদিও ওই দিন ইসরাইল তেল ও গ্যাসক্ষেত্র এড়িয়ে গিয়েছিল। গত শুক্রবারের হামলায় ইরানের সামরিক কমান্ডার, বিজ্ঞানী এবং পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করা হয়। তেল আবিব বলছে, তেহরানের পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণ পরিকল্পনা থামাতেই এই অভিযান।
ইরানের তেল মন্ত্রণালয় জানায়, হামলার ফলে সেখানে আগুন লেগেছিল। তবে তা নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। তাসনিমের খবরে বলা হয়, দক্ষিণ পার্সের ১৪ নম্বর ফেইজের চারটি ইউনিটের একটিতে এই আগুন লাগে। যার ফলে প্রতিদিন ১ কোটি ২০ লাখ ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। ইরান বছরে প্রায় ২৭৫ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদন করে, যা বৈশ্বিক গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ৬.৫ শতাংশ। তবে নিষেধাজ্ঞার কারণে তারা এই গ্যাস রপ্তানি করতে পারে না, তাই গ্যাসের প্রায় পুরোটাই দেশে ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্রের এক্সনমোবিল ও ব্রিটিশ শেলসহ আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোর সহায়তায় কাতার প্রতিবছর এই গ্যাসক্ষেত্রটি থেকে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন টন তরল গ্যাস উৎপাদন করে। এসব গ্যাস ইউরোপ ও এশিয়ায় রফতানি করে কাতার।