গাজাজুড়ে ইসরায়েলী বাহিনীর নৃশংস হামলায় আরও অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। একই পরিবারের ১৪ জন একসঙ্গে প্রাণ হারিয়েছেন গাজা নগরীর নিকটবর্তী আত-তওয়াম এলাকায়। এতে পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। শুক্রবার গাজা শহরে ইসরায়েলী সামরিক বাহিনী হামলা আরও তীব্র করায় নিহতের এ ঘটনা ঘটে। মেহের নিউজ, আল-জাজিরা।
ইসরাইল বলেছে, তারা গাজা অঞ্চলের বৃহত্তম নগর কেন্দ্র দখল করতে চায়। একে তারা ফিলিস্তিনী গোষ্ঠী হামাসের শেষ শক্ত ঘাঁটিগুলোর মধ্যে একটি হিসাবে বর্ণনা করছে। এদিকে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরাইলী বাহিনীর নৃশংস এই হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে। তারা বলেছে, এ হামলার ফলে ইতোমধ্যেই গাজা শহরের শোচনীয় মানবিক পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ হবে। ইতোমধ্যে এ এলাকায় জাতিসংঘ দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করেছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি একটি যৌথ বিবৃতিতে ‘অবিলম্বে’ এ হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ ইসরাইলের এ হামলায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনা বাড়ছে এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস হচ্ছে। গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার শহরে ৩৫ জন এবং ভূখণ্ডটির অন্যান্য অংশে আরও ১৫ জন নিহত হয়েছে। ইসরাইলী সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজা শহরে ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো ও উঁচু ভবনের ওপর ব্যাপক হামলা’ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
ইসরাইলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা আতঙ্কে ইহুদিরা : দখলকৃত ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডের দিকে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেন। এতে ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবে সতর্ক সাইরেন বেজে ওঠে এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েন লাখ লাখ ইহুদি। তবে ইসরাইলের দাবি, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রটি আটকাতে সক্ষম হয়েছে। দখলকৃত ভূখণ্ডের গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ইসরাইলী সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, শনিবার ভোরে ইয়েমেন থেকে দখলকৃত ভূখণ্ডের দিকে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ইসরাইলের হোম ফ্রন্ট কমান্ড আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করে। প্যালেস্টাইন পোস্ট জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের পর তেল আবিবে বিমান হামলার সাইরেন বাজতে থাকে। আল-মায়াদিন জানিয়েছে, দখলকৃত ভূখণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় সতর্ক সাইরেন শোনা গেছে। প্যালেস্টাইন নাও-এর তথ্যমতে, কালকিলিয়া ও তেল আবিবে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
তবে ইসরাইলী সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করার ফলে বিস্ফোরণের শব্দ হয়েছে।
আল জাজিরাও ইসরাইলী সেনাবাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আটকে দিয়েছে। গত শুক্রবার আল-মাসিরাহ টিভিতে প্রচারিত এক বিবৃতিতে হুথি নিয়ন্ত্রিত ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিট বৃহস্পতিবার একটি ‘প্যালেস্টাইন-২’ সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে দখলকৃত নেগেভ অঞ্চলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানে। বিবৃতিতে অভিযানটিকে সফল বলে বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ হামলার ফলে বহু ইসরাইলী বসতি স্থাপনকারী আশ্রয়কেন্দ্রে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সারি আরও জানান, তাদের ড্রোন ইউনিট অতিরিক্ত দুটি অভিযান চালায়: যার একটিতে দুটি ড্রোন ব্যবহার করে এলাত (উম্ম আল-রাশরাশ) সংলগ্ন রামন বিমানবন্দরে, আরেকটিতে একটি ড্রোন দিয়ে নেগেভের আরেকটি সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়। বিবৃতিতে হামলাগুলোকে গাজায় ইসরাইলী কর্মকাণ্ড ও ইয়েমেনের ভূখণ্ডে আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সারি জোর দিয়ে বলেন, ইয়েমেন ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে থাকবে এবং ইসরাইলী আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার সামর্থ্য রাখে।