ফিলিস্তিনের গাজায় এখন বাঁধভাঙা উল্লাস। দীর্ঘ ২ বছরের ইসরাইলী বর্বরতার পর এলো যুদ্ধ বিরতি চুক্তির ঘোষণা। স্থানীয় সময় গত বুধবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির ঘোষণা দেন। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের দুই বছরে আর্থিক ক্ষতি ৬৮০০ কোটি ডলার, নিহত ৬৭ হাজার ও আহত কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি। ইসরাইল এবং ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক দল হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। ফলে রাতেই আনন্দ মিছিল বের করেন গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের বাসিন্দারা। কিশোর তরুণরা বাঁশি-খঞ্জনি-ড্রাম বাজিয়ে, নেচে গেয়ে উল্লাস শুরু করেন। অন্যদিকে ইসরায়েলের তেলআবিব শহর থেকেও পাওয়া গেছে আনন্দ উদযাপনের সংবাদ। চুক্তির বিষয়ে হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা এমন এক চুক্তিতে পৌঁছেছে, যা গাজায় যুদ্ধের অবসান ঘটাবে।পাশাপাশি দখলদার ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহার, মানবিক সহায়তা প্রবেশ ও বন্দি বিনিময়ের পথ সুগম করবে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই চুক্তি সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তথ্য উঠে আসছে। চুক্তির আওতায় প্রায় ২০ ইসরাইলী জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ পর্যায়ক্রমে হস্তান্তর করা হবে। অপরদিকে ইসরায়েল এক হাজার ৯৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। এখন এই চুক্তির অন্যান্য অংশগুলোর মধ্যে বিশেষ করে হামাসের নিরস্ত্রীকরণ কীভাবে ঘটবে এবং কখন ঘটবে সে সম্পর্কে এখনো অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। যুদ্ধ বিরতির এ খবরে উচ্ছ্বাসের জোয়ার বইছে গাজায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের মধ্যে। কেউ খুশিতে কাঁদছেন-হাততালি দিচ্ছেন, কেউ বাঁশি বাজাচ্ছেন, কেউ গান গাইছেন-নাচানাচি করছেন এবং চিৎকার করে বলছেন ‘আল্লাহু আকবর’। এছাড়া দুই বছরের বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষ করতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণা সত্ত্বেও গতকাল বৃহস্পতিবার ভোররাত থেকে গাজা উপত্যকায় অব্যাহত রয়েছে ইসরাইলের হামলা। গাজা সিটি ও খান ইউনিসে ইসরাইলী বিমান ও আর্টিলারির ব্যাপক গোলাবর্ষণে অন্তত নয়জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। খবর আল জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, সিএনএন, ডন, আরব নিউজ।
এদিকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে বিশ্ব নেতারা সন্তোষ প্রকাশ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান, ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ, মস্কো চুক্তির প্রথম ধাপকে সমর্থন করছে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় মধ্যস্থতাকারীদের প্রশংসা জানাচ্ছে। ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ, অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, হামাস-ইসরায়েল যেন দ্রুত চুক্তি বাস্তবায়ন করে এবং তাদের অঙ্গীকার পূরণ করে। যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় চুক্তির খবর আসার পরপরই দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের লোকজন তা উদযাপন করতে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। সেখানকার অধিবাসীরা আশা করছে এর ফলে ইসরায়েলের হামলা থেকে সত্যিকারের মুক্তি সম্ভব হবে। ছয় মাস আগে অস্ত্রবিরতি ঘোষণার পর সেই অবস্থান থেকে সরে এসে পুরোদমে সংঘাতকে উসকে দেওয়ার সেই ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হবে না বলেই আশা করছে গাজার অধিবাসীরা। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গাজার বাসিন্দা আব্দুল মাজিদ বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতির জন্য আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ, রক্তপাত ও হত্যাযজ্ঞ শেষ হওয়ার জন্যৃ গাজার সবাই খুব খুশি।’ আরেকজন অধিবাসী খালেদ শাত বলেন, ‘এই মুহূর্তগুলো ঐতিহাসিক হিসেবে বিবেচিত হবে, যার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষায় ছিল ফিলিস্তিনিরা।’
গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসনের দুই বছরে আর্থিক ক্ষতি ৬৮০০ কোটি ডলার! ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক অভিযানে ইসরাইলে আঘাত হানার পর শুরু হয় এ যুদ্ধ। হামাস জানায়, ইসরাইলের দখলনীতি, আল-আকসা মসজিদে ক্রমবর্ধমান লঙ্ঘন, গাজায় মানবিক অবরোধ ও ফিলিস্তিনি বন্দিদের ওপর নির্যাতনের জবাবেই তাদের এই অভিযান। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের দুই বছরে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৬ হাজার ৮০০ কোটি মার্কিন ডলার। গাজার প্রায় ৯০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে পুরো গাজা উপত্যকায় কার্যকর আছে মাত্র ১৪টি হাসপাতাল। ইসরাইলি হামলায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে আট শতাধিক মসজিদ। কবরস্থান ধ্বংস করতেও বাদ রাখেনি নেতানিয়াহু বাহিনী। সাজানো, পরিপাটি, আধুনিক একটি নগর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়ে গেল। ইসরাইলের নির্যাতন আর গণহত্যার দুই বছরে ধ্বংসের নগরীতে পরিণত হয়েছে গাজা। নেতানিয়াহু বাহিনীর আগ্রাসনে উপত্যকাটি এমন এক দুর্বিষহ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যা হয়ত ট্রয় নগরীর গল্পকেও হার মানাবে। অমানবিকতার সব ধাপ লঙ্ঘন করে নেতানিয়াহু বাহিনীর আগ্রাসনের মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে গাজার হাসপাতালগুলো। হামাসের আশ্রয়স্থল হিসেবে আখ্যা দিয়ে একের পর এক হাসপাতালের ওপর বিমান হামলা চালায় আইডিএফ। গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর বর্বর আগ্রাসনের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। এই দুই বছরে ইসরাইলী হামলায় পুরো গাজা উপত্যকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এবং এ পর্যন্ত ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, কয়েক লাখ আহত হয়েছেন। এছাড়া ত্রাণের অভাবে গাজার বাসিন্দারা বর্তমানে ভয়াবহ ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন।
গাজা সিটির চারটি হাসপাতাল গেল মাসেই অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে পুরো গাজা উপত্যকায় কার্যকর আছে মাত্র ১৪টি হাসপাতাল। এর মধ্যে ৮টি গাজা সিটিতে, আর বাকি ৬টি দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিসে। আংশিক কার্যকর হাসপাতালগুলোতে এখন রোগীতে উপচে পড়ছে। রোগীদের কেউ তাঁবুতে, কেউ হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। শুধু গাজার স্বাস্থ্যখাতই নয়, বরং ধর্মীয় উপাসনালয় ইসরাইলি আগ্রাসনের শিকার হয়েছে। গাজার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারির মধ্যে ইসরাইলি হামলায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে ৮৩৪টি মসজিদ। আংশিক বা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ২৭৫টি। এছাড়া, গাজার সিটিতে অবস্থিত তিনটি ঐতিহাসিক গির্জাও ধ্বংস করে দিয়েছে দখলদার বাহিনী। ৬০টি কবরস্থানের মধ্যে ৪০টিতে হামলা চালিয়েছে আইডিএফ। এর মধ্যে ২১টি পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার অর্থনীতি ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত সংকুচিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের হিসাবে, ৯০ শতাংশ অবকাঠামো এখন ধ্বংস, ক্ষতির পরিমাণ ৬৮০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।
জাতিসংঘ, ইইউ ও বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পুনর্গঠন ও পুনরুদ্ধারে এখন অন্তত প্রায় ৫৩০০ কোটি ডলার প্রয়োজন। প্রতিবেদনে বলা হয়, মোট ক্ষতির অর্ধেকের বেশি প্রায় তিন হাজার কোটি ডলার কেবল ভবন ও অবকাঠামো পুনর্গঠনে ব্যয় হবে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আবাসন খাত। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ২ লাখ ৯২ হাজার বাড়ি, যা মোট ধ্বংসযজ্ঞের ৫৩ শতাংশ। আরও প্রায় দুই হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প ও বাণিজ্য খাত পুনর্গঠনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরাইলি হামলায় ৯০ শতাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে।
প্রথম দফা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ ৬ সপ্তাহ : গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সংক্রান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর সোমবার স্থানীয় সময় বিকালে ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবন ও দপ্তর হোয়াইট হাউসে গাজায় যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত নতুন একটি পরিকল্পনার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইল ও মধ্যস্থতাকারী দুই দেশ মিসর ও কাতার সম্মতি দিলেও হামাস তখনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। পরে ৩ অক্টোবর শুক্রবার হামাস সম্মতি জানানোর পরের দিন ৪ অক্টোবর ইসরাইলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধ করতে বলেন ট্রাম্প। তার পর ৬ অক্টোবর মিসরের লোহিত সাগর তীরবর্তী পর্যটন শহর শারম আল শেখ-এ ট্রাম্পের প্রস্তাবের ওপর বৈঠক শুরু হয় ইসরাইল, হামাস, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের মধ্যে। সেই বৈঠকে দুই দিনেরও বেশি সময় ধরে আলোচনা চলার পর গত বুধবার রাতে ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রাথমিক পর্যায় বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে স্বাক্ষর করেছে ইসরাইল-হামাস। এই পর্যায়টির স্থায়িত্ব হবে ৬ সপ্তাহ। এই ছয় সপ্তাহে নিজেদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। এর পরিবর্তে ইসরাইল গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ, ইসরাইলের কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে পর্যায়ক্রমে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে।
চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ অনুযায়ী, অধিকৃত অঞ্চল থেকে ইসরাইলী বাহিনীকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকে নিরস্ত্র করতে হবে। পাশাপাশি গাজায় প্রতিষ্ঠিত হবে একটি নতুন নিরাপত্তা ও শাসন ব্যবস্থা। তবে এগুলো এখনো দরকষাকষির পর্যায়ে রয়েছে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো আসেনি।
ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে যা বলল হামাস: চলতি সপ্তাহে মিসরে ইসরাইলের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় তারা একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে। এ চুক্তিতে গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটানোর কথা বলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে হামাস। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বার্তা আদান-প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ইসরাইলে বন্দি ফিলিস্তিনিদের একটি তালিকা ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের কাছে দিয়েছে। তালিকাটি এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। অনুমোদন মিললে তা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে যা বলছেন বিশ্ব নেতারা : ইসরাইল ও হামাস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে এ চুক্তির ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্প জানান, চুক্তির অধীনে সব জিম্মিদের শিগগিরই মুক্তি দেওয়া হবে এবং ইসরাইল তাদের সেনা প্রত্যাহার করবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, আমি গর্বিত যে ইসরাইল ও হামাস উভয়েই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে সই করেছে। এটি আরব ও মুসলিম বিশ্ব, ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। তিনি আরও বলেন, গাজা পুনর্নির্মিত হবে, মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে চলবে একটি নতুন বিশ্ব শুরু হবে।
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, গত বুধবার ইসরাইলের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন। আগামীকাল আমি সরকারকে আহ্বান করবো চুক্তি অনুমোদনের জন্য এবং আমাদের জিম্মিদের ঘরে ফেরাতে।
হামাস এক বিবৃতিতে কাতার, মিশর, তুরস্ক ও ট্রাম্পের প্রচেষ্টাকে ধন্যবাদ জানায় এবং ইসরাইলকে চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়। বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের জনগণের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না আমরা স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাবো।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বলেন, এটি দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি কাতার, মিশর, তুরস্ক ও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন এবং গাজা ও পশ্চিম তীরের সংযোগ পুনঃস্থাপনের ওপর জোর দেন।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, যুদ্ধের অবসান, বন্দি বিনিময় ও মানবিক সহায়তা প্রবেশের বিষয়ে সব দফা ও বাস্তবায়ন কাঠামোতে চুক্তি হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানাই, যিনি ইসরাইলকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা দেখিয়েছেন। আমরা চুক্তি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করবো এবং ১৯৬৭ সালের সীমারেখায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাবো। সৌদি আরব আশা প্রকাশ করেছে যে চুক্তিটি গাজাবাসীর মানবিক কষ্ট লাঘবে এবং ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারে সহায়ক হবে।
মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, ‘মাসের পর মাস দুর্ভোগের পর এই চুক্তি একটুখানি আশার আলো।’ তিনি সব পক্ষকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে আহ্বান জানান। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেন, এটি আশার এক আলোÍআট দশকের সহিংসতা ও সন্ত্রাসের পর এখনই সময় এই চক্র ভাঙার।
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেন, আমি যুদ্ধবিরতি ও বন্দিমুক্তি চুক্তি স্বাগত জানাই। এখন জরুরি হলো মানবিক সহায়তা ও নিরবচ্ছিন্নভাবে গাজায় প্রবেশ নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, এই চুক্তি যেন দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথে স্থায়ী শান্তির সূচনা হয়। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, এই চুক্তি যুদ্ধের সমাপ্তি এবং রাজনৈতিক সমাধানের সূচনা ঘটাবে। ফ্রান্স এ প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, চুক্তির বাস্তবায়ন বিলম্ব ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে হতে হবে এবং গাজায় মানবিক সহায়তার ওপর সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপ গৃহীত হওয়ায় আমরা স্বাগত জানাই। এটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। সূত্র : আল-জাজিরা