মোট মৃত্যু ৫৪ হাজার ছাড়াল
বিবিসি, আল-জাজিরা, সিনহুয়া : গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসনে প্রতিদিনই বড় হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। গত সোমবার সেই মিছিলে যোগ দিলেন আরও ৭৯ ফিলিস্তিনী। এর মাধ্যমে মোট নিহতের সংখ্যা ৫৪ হাজার ছাড়াল। গতকাল মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়েছে। গত রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত চালানো ইসরাইলী এত বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বলছে, রোববার রাতভর ইসরাইলের চালানো হামলার বেশির ভাগেরই লক্ষ্যবস্তু ছিল বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনীদের আশ্রয় নেয়া বিভিন্ন স্থাপনা। তবে, ইসরাইলের দাবি-হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের কমান্ড এবং কন্ট্রোল সেন্টার লক্ষ্য হামলা চালিয়েছে তারা। বেসামরিক হতাহতের জন্য ইসরাইল ফিলিস্তিনী স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসকেই দায়ী করছে। তাদের ভাষ্য, গাজার নিরস্ত্র মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে তারা। উপত্যকাটিতে বেসামরিক হতাহতের দায় ইসরাইলের নয়, বরং হামাসেরই! ইসরাইলী সেনাবাহিনী (আইডিএফ) বলছে, গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজাজুড়ে হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর প্রায় ২শ’ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে তারা।
ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজ গত রোববার সামাজিক মাধ্যমে ফাহমি আল-জারজাবি স্কুলে ইসরাইলী হামলার একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। যাতে দেখা যায়, ইসরাইলী হামলায় স্কুলটিতে আগুন ধরে যাওয়ার পর, ওই আগুনে জীবিত অবস্থায় পুড়ে মারা যায় এক শিশু। ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ৪ লাখ ৭০ হাজার বার দেখা হয়েছে। ওই ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, এ আগুনের চিত্র আমি আর দেখতে পারছি না। যতবার দেখার চেষ্টা করছি আমার মাথা ঘোরাচ্ছে, পেট গুলিয়ে উঠছে। ফিলিস্তিনীরা যেন আমাদের মাফ করে। গত মঙ্গলবারও উপত্যকাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে নেতানিয়াহুর সেনারা। আল-জাজিরা জানিয়েছে, গাজা সিটির আল-কারামা এলাকায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে আইডিএফ। ওই হামলায় এখন পর্যন্ত এক শিশু নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে, আশঙ্কা করা হচ্ছে- হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বাড়বে। গাজা উপত্যকার মোট কৃষিজমির পাঁচ শতাংশেরও কম এখন চাষের উপযোগী বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। জাতিসংঘ স্যাটেলাইট সেন্টারের নতুন ভূ-স্থানিক জরিপে এমন তথ্য উঠে আসে। গত সোমবার এফএও একে ‘চরম উদ্বেগজনক’ পরিস্থিতি হিসেবে উল্লেখ করে।
গাজায় চলমান ইসরাইলী হামলায় কৃষি অবকাঠামোর ধ্বংস স্থানীয় খাদ্য উৎপাদনের সক্ষমতাকে আরও খারাপ করে তুলছে এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। যৌথ জরিপে দেখা গেছে, গাজার মোট কৃষিজমির ৮০ শতাংশের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭৭.৮ শতাংশ জমিতে এখন কৃষকদের প্রবেশ সম্ভব নয়। বর্তমানে মাত্র ৬৮৮ হেক্টর (১,৭০০ একর) অর্থাৎ মাত্র ৪.৬ শতাংশ কৃষিজমিই চাষের জন্য ব্যবহারযোগ্য। এই ধ্বংসযজ্ঞ গাজার গ্রীনহাউস ও পানির উৎসগুলোতেও বিস্তৃত হয়েছে। ৭১.২ শতাংশ গ্রীনহাউস এবং ৮২.৮ শতাংশ কৃষিকাজে ব্যবহৃত কূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এফএও-এর উপ-মহাপরিচালক বেথ বেচডল বলেন, ‘যেখানে একসময় হাজার হাজার মানুষের জন্য খাদ্য, আয় এবং স্থিতিশীলতা ছিল, এখন তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কৃষিজমি, গ্রীনহাউস, এবং কূপ ধ্বংস হওয়ায় স্থানীয় খাদ্য উৎপাদন কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এটি পুনর্গঠন করতে হলে ব্যাপক বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন।’
এই প্রতিবেদনটি এমন এক সময় প্রকাশিত হলো, যখন চলতি মাসের শুরুতে প্রকাশিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) বিশ্লেষণে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, ১৯ মাসের যুদ্ধ, গণবিচ্ছিন্নতা এবং মানবিক সহায়তার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণের ফলে গাজার পুরো জনসংখ্যাই চরম দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে। যদিও গত সপ্তাহে ইসরায়েল “সীমিত” পরিমাণে সহায়তা গাজায় প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে বলে ঘোষণা দেয়, মানবিক সংগঠনগুলো সতর্ক করেছে যে, এই সামান্য সহায়তাও গাজার অভুক্ত জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।
এদিকে গাজায় ইসরাইলী বিমান হামলা প্রতিদিনই ডজনের বেশি ফিলিস্তিনীকে হত্যা করছে। গাজার একটি স্কুল, যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল, সেখানে ইসরাইলী বাহিনীর বোমা হামলায় কমপক্ষে ৩৬ জন ফিলিস্তিনী নিহত হন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন শিশু রয়েছে।