এআরওয়াই নিউজ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। টানা প্রায় ১৮ মাস ধরে চালানো এই আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন প্রায় ৫১ হাজার ফিলিস্তিনী। হামলার পাশাপাশি ইসরাইল গাজাতে সর্বাত্মক অবরোধও জারি রেখেছে। ইসরাইলী এই বর্বরতার বিরুদ্ধে দেশে দেশে হচ্ছে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। এমন অবস্থায় গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে দেশজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আগামী ১১ এপ্রিল এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হবে। গত রোববার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনীদের ওপর চলমান হত্যাকাণ্ড এবং ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আগামী ১১ এপ্রিল দেশব্যাপী বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে-ইসলামী পাকিস্তান। রোববার লাহোরের মানসুরায় এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতা হাফিজ নাঈম-উর-রহমান এই ঘোষণা দেন। তিনি এই বিষয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছে একটি আবেদন দাখিলের পরিকল্পনার কথাও প্রকাশ করেন। হাফিজ নাঈম-উর-রহমান ঈদের সময় ফিলিস্তিনে ইসরাইলের সাম্প্রতিক বোমা হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, গাজা ইতোমধ্যেই ৮০-৯০ শতাংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। রোববারের ওই সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ নাঈম-উর-রহমান গাজায় খাদ্য ও পানির মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বন্ধের সমালোচনা করেছেন এবং গাজাবাসীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবিও তুলে ধরেছেন। তার মতে, এই পদক্ষেপগুলো পশ্চিমাদের ভণ্ডামি সবার সামনে উন্মোচিত করেছে। জামায়াতে ইসলামীর নেতা গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী নীরবতার সমালোচনাও করেছেন। মূলত গাজার দুর্দশা নিয়ে মুসলিম দেশগুলোও নীরব রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, অন্যত্র ছোটখাটো ঘটনার বিষয়ে বিশ্ব তীব্র প্রতিক্রিয়া জানালেও গাজার দুর্দশার প্রতি দেশগুলো উদাসীন রয়েছে। পাকিস্তান জামায়াতের আমীর হাফিজ নাঈম বিশ্বব্যাপী ১৯০ কোটি মুসলিম জরগণের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন এবং নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজা ইস্যুতে মনোনিবেশ করার জন্য জামায়াতে ইসলামী তাদের নিয়মিত কার্যক্রম স্থগিত করেছে। হাফিজ নাঈম আগামী ১৩ এপ্রিল করাচির শাহরাহ-ই-ফয়সাল এবং ২০ এপ্রিল ইসলামাবাদে মার্কিন দূতাবাসের দিকে মিছিলসহ একাধিক বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছেন। এছাড়া জামায়াতে ইসলামীর প্রধান এই নেতা পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখাওয়ার জনগণকে ইসলামাবাদের মার্চে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। একইসঙ্গে এই কর্মসূচিকে মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে বিশ্ববাসীর কাছে সংহতির বার্তা হিসেবেও বর্ণনা করেছেন তিনি।

প্রসঙ্গত, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিষ্ঠুর সামরিক অভিযান বন্ধের দাবিতে বিশ্বের সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ-মিছিল হয়েছে। শনিবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণার দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। এই বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মুসলিম, খ্রিস্টানদের পাশাপাশি অনেক ইহুদি শান্তিকামী সংস্থার প্রতিনিধিরাও ছিলেন। রোববার রাজধানী আঙ্কারাসহ তুরস্কের বিভিন্ন শহরে একই দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সামরিক ও রাজনৈতিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখায় আঙ্কারায় মার্কিন দূতাবাসের সামনেও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। সোমবার একই দাবিতে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে মরক্কোতে।