রয়টার্স , প্রেস টিভি : ইরান দাবি করেছে, তারা ইসরাইলের অত্যন্ত সংবেদনশীল পরমাণু স্থাপনাগুলোর বিষয়ে বিপুল পরিমাণ গোয়েন্দা তথ্য হাতে পেয়েছে। এই ঘটনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে নতুন করে উত্তপ্ত করে তুলেছে। ইরানের বিপ্লবী গার্ড কোরের প্রধান কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এক বিস্ফোরক ঘোষণা দিয়েছেন। তার দাবি, ইরানের হাতে এখন ইসরাইলের গোপন পরমাণু কর্মসূচির বিস্তারিত তথ্য রয়েছে। তিনি হুংকার দিয়ে বলেছেন, এই তথ্যের সাহায্যে ইরান এখন ইসরাইলের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তুতে আরও সুনির্দিষ্ট আঘাত হানতে সক্ষম হবে! এই চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁসের ঘটনাকে জেনারেল সালামি বর্ণনা করেছেন গোয়েন্দা যুদ্ধে এক অত্যাশ্চর্য বিজয় হিসেবে। তিনি গোয়েন্দা মন্ত্রী ইসমাইল খাতিবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড ২-এর সাফল্যের জন্য।
অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড ২, এই নামটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। এটি ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনী প্রতিরোধ যোদ্ধাদের “অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড” এর স্মরণে রাখা হয়েছে। যা ইসরাইলের বিরুদ্ধে এক বড় ধরনের আঘাত ছিল। গত শনিবার থেকে এই বিজয়ের খবরগুলো প্রকাশ্যে আসতে শুরু করে। জানা গেছে, ইরানি গোয়েন্দা এজেন্টরা ইসরাইলের পরমাণু, সামরিক, নিরাপত্তা এবং অবকাঠামোগত সুবিধার বিশাল সংখ্যক নথিপত্র সফলভাবে হাতে পেয়েছে। এর মধ্যে ইসরাইলের সেইসব গোপন পরমাণু স্থাপনাও রয়েছে, যা তেল আবিবকে শত শত অপ্রচলিত ক্ষেপণাস্ত্র অর্জনে সহায়তা করেছে বলে ব্যাপকভাবে রিপোর্ট করা হয়। জেনারেল সালামি তার চিঠিতে স্পষ্ট বলেছেন, নিঃসন্দেহে, এই সংবেদনশীল গোয়েন্দা তথ্য দখলদার ইহুদিবাদী শাসনের বিনাশের প্রচেষ্টাকে আরও কার্যকর করবে এবং [ভবিষ্যৎ] ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্ভুলতা বাড়িয়ে দেবে। গত বছরও ইরান অপারেশন ট্রু প্রমিস ১ ও ২-এর মাধ্যমে ইসরাইলের বিরুদ্ধে দুটি বড় প্রতিশোধমূলক অভিযান চালিয়েছিল। ইরানের দাবি, যেখানে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ৯০ শতাংশ নির্ভুলতার সাথে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছিল।
ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল এই গোয়েন্দা সাফল্যের গুরুত্ব তুলে ধরেছে। তারা কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, ইসরাইল যদি ইরানের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসন চালায়, তাহলে তেহরান ইসরাইলের গোপন পরমাণু স্থাপনাগুলোকেই লক্ষ্যবস্তু করবে। জেনারেল সালামি আরও বলেছেন, এই বিজয় আবারও প্রমাণ করেছে যে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান এই অঞ্চলে দুর্বল হয়ে পড়েনি। এটি জায়নবাদী শাসনের তথাকথিত গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা শক্তির বাস্তবতা উন্মোচন করেছে। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এই আঘাত ইসরাইলের ক্ষয়িষ্ণু দেহের শেষ আঘাত নয় বরং মিথ্যার উপর সত্যের চূড়ান্ত বিজয়ের ইঙ্গিত।
গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনায় যুক্ত ইরান : ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে জিম্মির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতায় জড়িত রয়েছে ইরান। গত সোমবার এ দাবি করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে এখন বিশাল সমঝোতার একটা ইস্যু হচ্ছে গাজা। আর সত্যি বলতে কী, ইরান এতে জড়িত রয়েছে। দেখাই যাক, গাজা বিষয়ে কী হয়। তবে জিম্মিদের বিষয়ে কোনও আপোসের পরিকল্পনা নেই তার। তিনি বলেন, জিম্মিদের আমরা ফেরত চাই।
ইরানের ভূমিকার ব্যাপ্তি নিয়ে ট্রাম্প বিস্তারিত কিছু বলেননি। এ বিষয়ে আরও কিছু তথ্য জানতে রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি হোয়াইট হাউজ। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘে ইরানের স্থায়ী প্রতিনিধির কার্যালয় থেকেও রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেওয়া হয়নি। হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে ৬০ দিনের একটা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের প্রথম সপ্তাহে জীবিত ও মৃত ২৮ জন জিম্মিকে ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করবে হামাস। বিনিময়ে ১২৩৬ জন ফিলিস্তিনী বন্দি এবং ১৮০ জন ফিলিস্তিনীর মরদেহ হস্তান্তর করবে তেল আবিব। ইসরাইল ওই প্রস্তাবে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও হামাস তা বারবার খারিজ করে আসছে।