ডন, রয়টার্স, এআরওয়াই নিউজ : পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। পাল্টা হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানও। এমন অবস্থায় আরও বৃহত্তর সংঘাতের আশঙ্কার মধ্যেই সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনী সাদা পতাকা উড়িয়েছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। দেশটি বলছে, সীমান্তে সাদা পতাকা উত্তোলন করে ভারত পরাজয় স্বীকার করেছে। গতকাল বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম । সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখায় সাদা পতাকা উত্তোলন করে কার্যকরভাবে পরাজয় স্বীকার করেছে বলে বুধবার পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার জানিয়েছেন। ইসলামাবাদের পাক-চীন মৈত্রী কেন্দ্রে সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলার সময় তারার পাঞ্জাব এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মিরের বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর দ্রুত এবং শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার জন্য পাকিস্তান বিমান বাহিনীর (পিএএফ) প্রশংসা করেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পাকিস্তানের বিমান বাহিনী পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। তারার আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। পাকিস্তানের প্রভাবশালী এই মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, সমগ্র পাকিস্তানি জাতি ঐক্যবদ্ধ এবং সশস্ত্র বাহিনীকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করছে। তিনি বলেন, পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী আক্রমণকারীদের কঠোর জবাব দিয়েছে। ভারতীয় হামলার নিন্দা জানিয়ে আতাউল্লাহ তারার নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করাকে “অত্যন্ত দুঃখজনক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের বাহিনী কেবল আগ্রাসন চালানোর কাজে জড়িত ভারতীয় যুদ্ধবিমানকেই লক্ষ্যবস্তু করেছে।
তিনি উল্লেখ করেছেন, ভারতীয় মিডিয়া নিজেই বিমান ভূপাতিত করার বিষয়টি স্বীকার করছে। সমগ্র জাতি সারা রাত ধরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাফল্যের জন্য দোয়া করেছে। তিনি মনে করিয়ে দেন, পাকিস্তান বহু বছর ধরে সন্ত্রাসবাদের শিকার, যেখানে ৯০ হাজার মানুষের জীবন গেছে। তারার আরও বলেন, পেহেলগাম হামলার বিষয়ে পাকিস্তান স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব দিয়েছিল, তবে তা ভারত প্রত্যাখ্যান করে। এটি প্রমাণ করে যে, ভারত সত্য গোপন করতে চায় এবং বিদ্বেষমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। পাকিস্তানের আকাশসীমায় ভারতের কোনও যুদ্ধবিমানকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) মহাপরিচালক জেনারেল আহমেদ চৌধুরী। এমনকি পাকিস্তানের কোনও বিমানও ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনি। বুধবার মধ্যরাতে ভারতের সামরিক বাহিনীর পাকিস্তানের ৯টি স্থানে হামলার বিষয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি। ইসলামাবাদে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পাকিস্তানের আইএসপিআরের এই মহাপরিচালক বলেছেন, ভারতীয় কোনও বিমানকে পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। এবং পাকিস্তানের কোনও বিমানও ভারতের আকাশসীমায় যায়নি।
পাকিস্তান সেনাবাহিনী ভারতীয় আগ্রাসনের পূর্ণ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে এবং ‘‘কয়েকটি’’ ভারতীয় সামরিক চৌকি ধ্বংস করা হয়েছে। জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলার দুই সপ্তাহ পর বুধবার মধ্যরাতে পাকিস্তান ও পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মিরের অন্তত ৯টি স্থানে হামলা চালিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। এই হামলায় ভারতীয় সামরিক বাহিনী মাত্র ২৫ মিনিটে অন্তত ২৪ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে পাকিস্তানে। এতে পাকিস্তানে কমপক্ষে ৭০ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ভারত।
যদিও পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বলেছে, ভারতের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে, কাশ্মির সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ভারত-শাসিত কাশ্মিরে অন্তত ১০ জন নিহত ও ৩০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন। পাকিস্তান দাবি করেছে, তারা ভারতীয় অন্তত পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। তবে ভারতীয় কর্মকর্তারা জম্মু-কাশ্মিরে এখন পর্যন্ত তিনটি ভারতীয় বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন।