আরব নিউজ, রয়টার্স : অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের অবৈধভাবে বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব। এক বিবৃতিতে সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কয়েক দশক ধরে চলা স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে ইসরাইলি কর্মকর্তাদের এমন হটকারী সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো হচ্ছে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ইসরাইল সরকারের অবৈধ নীতি বাস্তবায়ন, শান্তি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা এবং দ্বি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ইসরাইলের কট্টরপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, দখলকৃত পশ্চিম তীরে বিতর্কিত একটি বসতি স্থাপন প্রকল্পের মাধ্যমে তিন হাজারের বেশি বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। এটি বাস্তবায়ন হলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ধারণার কবর হবে। ইসরাইলি মানবাধিকার সংগঠন ‘পিস নাউ’-এর তথ্যমতে, বর্তমানে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ১৬০টি বসতিতে প্রায় সাত লাখ ইহুদি বসবাস করেন। এসব জমি নিয়েই ভবিষ্যতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায় ফিলিস্তিনিরা। সম্প্রতি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানায়। তবে ইসরাইলের এ ধরনের উদ্যোগের নিন্দা জানিয়েছে। এরপর বসতি স্থাপনের এ ঘোষণা এসেছে।
নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধের আহ্বান জাতিসংঘের : অধিকৃত পশ্চিমতীরে ইসরাইলের হাজার হাজার নতুন বসতি স্থাপনের পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গত বৃহস্পতিবার তার মুখপাত্রের কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমাদের অবস্থান স্পষ্ট - পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরে ইসরাইলি বসতি স্থাপন করা হয়েছে এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত শাসনব্যবস্থা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং বজায় রাখা হচ্ছে।’ এতে বলা হয়েছে, ‘এই ধরনের অবৈধ বসতি ‘দখলকে আরও শক্তিশালী করবে এবং উত্তেজনা বাড়িয়ে তুলবে।’
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই ধরনের পদক্ষেপ ‘দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের অংশ হিসাবে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কার্যকারিতাকে পদ্ধতিগতভাবে ক্ষয় করবে’। এলাকায় নির্মাণ উত্তর এবং দক্ষিণ পশ্চিম তীরকে বিচ্ছিন্ন করবে, একটি কার্যকর, সংলগ্ন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’ গুতেরেস ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এই প্রক্রিয়ার অগ্রগতি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তিনি আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তার বাধ্যবাধকতা অনুসারে এবং ১৯ জুলাই ২০২৪ তারিখে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের পরামর্শমূলক মতামতে পুনর্ব্যক্ত করে ইসরাইল সরকারের প্রতি সমস্ত বসতি স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।’ এর আগে বৃহস্পতিবার ইসরাইলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ জেরুজালেমের পূর্বে মা'আলে আদুমিমে ৩ হাজার ৪০১টি বসতি স্থাপনকারী ইউনিট এবং আশেপাশের এলাকায় আরও ৩ হাজার ৫১৫টি বসতি স্থাপনকারী ইউনিট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছেন। এই প্রকল্পের লক্ষ্য পশ্চিম তীরকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা, এর উত্তর ও দক্ষিণ শহরগুলোর মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং পূর্ব জেরুজালেমকে বিচ্ছিন্ন করা।
ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ‘গ্রেটার ইসরাইল’-এর দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছে এবং সতর্ক করে দিয়েছে, এটি দখলদারিত্বকে আরও শক্তিশালী করবে এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের কার্যকারিতা নষ্ট করবে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকে অবৈধ বলে মনে করে।